বাঙ্গালী নিধনে সাহায্য

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৫৮। বাঙালী নিধনে সাহায্য ওয়াশিংটন ডেইলী নিউজ ৩০ জুন, ১৯৭১

 

Zulkar Nain

<১৪, ৫৮, ১২৬>

 

ওয়াশিংটন ডেইলী নিউজ, বুধবার, ৩০ জুন, ১৯৭১

বাঙালী নিধনে সাহায্য

 

প্রশাসন কতৃক পাকিস্তানের নৃশংস ও নিপীড়ক শাসকদের আরো অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত যেমন অদূরদর্শী তেমনি এটা অমানবিকও।

 

কংগ্রেসের সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় রাষ্ট্রবিভাগ তার ভয় স্বীকার করে যে পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা “অনুমোদন এবং অনুপ্রবেশ” হিসাবে ক্ষতিকর হবে।

 

আমরা জানতে চাই, গণহত্যা ও গণহত্যা বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কতটা খারাপ? সঠিকভাবে বললে, পশ্চিম পাকিস্তান অধ্যুষিত সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের অসহায় বাঙালিদের বিরুদ্ধে যা করছে সে জন্য।

 

২৫শে মার্চে প্রতারণাপূর্ন আক্রমণের শুরুতেই, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২00,000 বাঙালি হত্যা করে এবং ছয় মিলিয়ন উদ্বাস্তুকে জীবন বাঁচাতে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। এমন একটি শাসনব্যবস্থায় অস্ত্র পাঠানো নৈতিকভাবে অসমর্থনযোগ্য।

 

অসমর্থনীয়কে সমর্থনযোগ্য করার প্রতিভা দিয়ে রাষ্ট্রবিভাগ ব্যাখ্যা করে কিভাবে অর্থনৈতিক সাহায্যে বিঘ্নতি পাকিস্তানে আমাদের উদ্দেশ্যসাধন বাধাগ্রস্থ করবে – যদিও বলতে গেলে এখন আমাদের কোন উদ্দেশ্য নেই।

 

এছাড়া, আমাদের অস্ত্র চালান বন্ধ করলে পাকিস্তান কমিউনিস্ট চীনের মত অন্যান্য সরবরাহকারীদের মুখাপেক্ষী হবে। তবে (রাষ্ট্র) বিভাগ স্বীকার করে যে, চীন পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করা কখনো বন্ধ করেনি।

 

ম্যাসাচুসেটসের সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডি এগুলোকে “অস্পষ্ট, অযোগ্যতা অথবা উভয়ই” বলে আখ্যায়িত করেছেন – এবং সে ঠিকই বলেছে।

 

পাকিস্তানের অর্থনীতি ধ্বস প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় আমাদের অংশীদাররা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত ভীতু নয়। বিশ্বব্যাংক, ব্রিটেন, কানাডা।

 

পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক শাসকদের একটা রাজনৈতিক মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত বেলজিয়াম এবং অন্যান্যরা অর্থনৈতিক সাহায্য স্থগিত রাখবার পক্ষে।

 

কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (এর পক্ষে) নয়।

 

পাকিস্তান অবশ্যই নিদারুণভাবে দরিদ্র এবং পাওয়া সাহায্যের সবটুকু তারা ব্যবহার করতে পারে কিন্তু এখন সাহায্য করার সমস্যা হলো, এটি সরকার কতৃক সৈন্যবাহিনীকে পূর্ব পাকিস্তানের দখলে নিয়োজিত রাখতে সাহায্য করে।

 

পাকিস্তানের ইতিহাসে, পূর্বাঞ্চলের বাঙালিরা মুক্ত নির্বাচনে শুধুমাত্র স্বায়ত্তশাসনের জন্য সিংহভাগ ভোট দিয়েছে। পরিবর্তে তারা পশ্চিমা সেনাবাহিনী কতৃক গণহত্যার লাঞ্ছনা পোহাচ্ছে, লজ্জাজনকভাবে যা এখনো চলছে।

 

ইতিহাস বলে, ১000 মাইল দূরে থাকা পশ্চিম পাকিস্তানিরা চিরকাল বাঙালিদের পদানত করতে পারবে না। পাকিস্তানে অস্ত্র পাঠিয়ে আমরা যা করছি তাতে বাঙালি নিশ্চিতভাবেই মনে রাখবে, তাদের প্রিয় বাংলাদেশের (বাঙালি জাতি) প্রসববেদনাকালীন সময়ে আমেরিকার অস্ত্র দিয়ে তাদেরকে হত্যা করা হয়।

Scroll to Top