বৃটেনে অ্যাকশন কমিটিসমূহের ঐক্যবদ্ধ তৎপরতা চালানোর প্রচেষ্টা সম্পর্কে প্রতিবেদন

<৪, ৪১, ৭৫-৭৯>

অনুবাদকঃ ইফতি

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৪১। বৃটেনে অ্যাকশন কমিটিসমূহের ঐক্যবদ্ধ তৎপরতা চালানোর প্রচেষ্টা সম্পর্কে প্রতিবেদন ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাকশন কমিটি প্রকাশিত প্রচারপত্র ৭ জুলাই, ১৯৭১

 

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটির প্রতি আহ্বান

আমরা প্রয়োজনে একতাবদ্ধ হয়েছি: এবার কর্মে একতাবদ্ধ হই

 

বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটির পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি

(ওয়েস্টমিনস্টার-লন্ডন)

২৫ মার্চ ১৯৭১ এর ভয়াবহ গণহত্যা অভূতপূর্বভাবে গোটা বাঙালি জাতিকে একতাবদ্ধ করেছে। আওয়ামী লীগের ৬-দফাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ১-দফায় একীভূত করেছে তা। বাঙালির বন্ধনমুক্তির অতি জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ কাজটি পরিণত হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জবরদখল থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে।

এ ঘটনার পর থেকে তিন মাস এবং কভেন্ট্রি কনফারেন্স সম্মেলন ও পরিচালক কমিটি নিয়োগের প্রায় আট সপ্তাহ অতিক্রান্ত হয়েছে। যুক্তরাজ্যে  আমরা এখনো অ্যাকশন কমিটির একটি জাতীয় নেটওয়ার্কের আবির্ভাবের অপেক্ষায়, যা সমগ্র বৃটেনে আমাদের শত শত নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদেরকে দিকনির্দেশনা যোগাবে। আমাদের এখনো জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমের তাড়নার সুশৃঙ্খল ও দৃঢ়কর্মকান্ডে রূপান্তর প্রত্যক্ষ করা বাকি। পরিচালক কমিটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা কর্মীদের একটি সাংগঠনিক কাঠামো প্রদানে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। দুঃখজনকভাবে তারা কোনো খসড়া সংবিধান তৈরিতে সমর্থ হয়নি যা আমাদের জাতীয় সংঘবদ্ধ আন্দোলনে কোনো কাঠামো দাঁড় করাতে পারে।

অতএব, এখনই উপযুক্ত সময় কভেন্ট্রি কনফারেন্সের সময়কার মতোই সমগ্র জাতির ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার, পরিচালক কমিটির ব্যর্থতাগুলোকে অতিক্রম করতে। এযাবৎ গঠিত অ্যাকশন কমিটির অতিরিক্ত প্রতিনিধিসহ কভেন্ট্রি কনফারেন্সের প্রতিনিধিদের পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তা করা সম্ভব। এমন একটি সম্মেলন যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সাংগঠনিক ও সাংবিধানিক বিষয়াদির উপর প্রতিবেদন গ্রহণ করবে এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কর্মীদের সম্মুখীন হওয়া কিছু অতি গুরুতর সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি (ওয়েস্টমিনস্টার-লন্ডন) যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কর্মীদের সুসঙ্গত ও সুশৃঙ্খল একক জাতীয় সত্ত্বা হিসেবে সংগঠিত করার কাজে জড়িত সকলের বিবেচনাধীন হিসেবে এই স্মারকলিপির খসড়া তৈরি করেছে।

 

ক) আমাদের বিবেচনাধীন:

১। এমন একটি জাতীয় সংগঠন সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি-সহজভাবে উল্লেখের জন্য একে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ কাউন্সিল হিসেবে অভিহিত করা হোক-উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন সমর্থনে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কর্মীদের চেতনাগত, রাজনৈতিক ও বৈষয়িক সংস্থানের উপযুক্ত ব্যবহার।

২। বাংলাদেশ কাউন্সিলের কর্মকান্ড বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রদূতের কর্মকান্ডের সাথে বিভ্রান্তির অবকাশ থাকবে না। এ দু’টো প্রতিষ্ঠান সম্পূরক, যদিও বিভিন্নভাবে পৃথক। এ পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে  উপলব্ধ, সমাদৃত এবং সর্বাধিক সতর্কতা ও সচেতনতার সাথে আমাদের আচরণ ও কর্মকান্ডে বহিঃপ্রকাশিত হবে। অন্যথায় অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপের কারণে সংঘর্ষ ও বিভ্রান্তির সৃষ্টিহবে।

৩। বাংলাদেশ কাউন্সিলের প্রাথমিক দায়িত্ব হবে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদকে সচল করা এবং জাতীয় সংস্থানের সর্বোচ্চ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কাউন্সিল সম্পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসন ভোগ করবে এবং বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাথে আলোচনায় অংশগ্রহণ করবে। এছাড়াও, এর তহবিলের অবমূল্যায়ন এবং লোকবলের ব্যবহারে বাংলাদেশ কাউন্সিল দিকনির্দেশনার জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং রাষ্ট্রদূতের শরণাপন্ন হবে, এবং আন্তর্জাতিক সংহতিমূলক কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কাউন্সিল, বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্রদূতের দিকনির্দেশনা অনুসারে কাজ করবে।

৪। রাষ্ট্রদূত কার্যালয়ের প্রাথমিক দায়িত্ব হবে বাংলাদেশ সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করা এবং আন্তর্জাতিক সংহতিমূলক কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য এবং লন্ডন থেকে সহজে অভিগম্য দেশগুলোতে প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৫। এ দু’টি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ তহবিলের রক্ষণাবেক্ষণ ও যথাযথ সংস্থানে যৌথভাবে কাজ করবে।

 

 

 

খ) জাতীয় সাংগঠনিক কাঠামো প্রসঙ্গে -বাংলাদেশ কাউন্সিল

১। অন্যান্য সকল কার্যাবলীর উর্ধ্বে বাংলাদেশ কাউন্সিলের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হবে বাংলাদেশ সমর্থকদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ আর্থিক অবদানসংগ্রহ। মনে রাখা উচিৎ যে সমগ্র জাতি এককভাবে দেশাত্ববোধের এক নজীরবিহীন উচ্চতায় স্থাপিত হয়েছে, তবে এমন কলাকৌশলের সরবরাহ প্রয়োজন যাতে এ সংস্থা তাদের কাছে পৌঁছতে পারে, সাপ্তাহিকভাবে সম্ভব না হলেও মাসিকভাবে। যদি আমরা তাদের কাছে পৌঁছতে না পারি, তহবিল সংগ্রহে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে না পারি, তবে এ জনশক্তির সম্ভাবনার ১০ শতাংশ অর্জন করাও সম্ভব হবেনা।

২। অতএব, প্রাথমিক কমিটি-স্থানীয় কমিটি-আবাসিক অথবা পেশাগতঅবস্থাভেদে আমাদের জাতীয়তাবাদী কর্মীদের সমাবেশের উপর ভিত্তি করে এ দলীয়করণ খুব বেশি বেখাপ্পা অথবা ব্যাপকভাবে পরিব্যাপ্ত হবেনা। এ দু’টো বিষয়ই সম্ভাব্য সমর্থকদের সাথে ব্যক্তিগত ও স্বাভাবিক সম্পর্কে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে এবং…স্বাভাবিক যোগাযোগের গতিময়তার ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক হবে এবং তহবিল সংগ্রহ বাধাগ্রস্থ করবে।

৩। স্থানীয় কমিটি হবে একটি কার্যকরী একক এবং সংখ্যায় ৫০ পর্যন্ত হতে পারে, প্রতি ইউনিটে কর্মীসংখ্যা হবে পাঁচ এবং প্রত্যেক কর্মী দলের কমপক্ষে পাঁচ জন সদস্যের দায়িত্ব বহন করবে।

৪। স্থানীয় কমিটিগুলো বাংলাদেশ কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিবন্ধভুক্ত হবে এবং সাধারণ স্বার্থ সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে যোগাযোগের মাধ্যম হবে সরাসরি। এ ব্যবস্থার উদ্দেশ্য কার্যক্রমের দক্ষতাকে গতিশীল করা। এছাড়া, স্থানীয় কমিটিগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিজ আঞ্চলিক কমিটির অধীনে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে, তার অস্তিত্ব থাকুক অথবা বিলোপ ঘটুক যাই হোক না কেন।

৫। স্থানীয় কমিটিতে ভোটাধিকার উপস্থাপনের জন্য কমপক্ষে ১০০ জন সদস্যের প্রয়োজন হবে-সদস্যপদ ফি বার্ষিক ১২ ব্রিটিশ পাউন্ড এবং কেন্দ্রীয় তহবিলে কমিটির সর্বনিম্ন অবদান বার্ষিক ১০০০ ব্রিটিশ পাউন্ড হতে পারে। ভোট উপস্থাপনের ক্ষেত্রে স্থানীয় কমিটিকে কেন্দ্রীয় তহবিলে অতিরিক্ত অবদান অনুপাতে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে।

৬। শৃঙ্খলাবদ্ধ ও সমন্বিত কার্যক্রম উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রাথমিক ইউনিটগুলোকে আঞ্চলিক কমিটিতে যেমন (ক) গ্ল্যাসগো ও নর্থ; (খ) ম্যানচেস্টার ও লেনস; (গ) লীডস ও ইয়র্কস; (ঘ) বার্মিংহাম ও মিডল্যান্ডস; (ঙ) ব্রিস্টল অথবা কার্ডিফ ও দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ড; (চ) লন্ডন ও দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ড এভাবে সমন্বিত করা যেতে পারে। আঞ্চলিক কমিটিগুলোর প্রতিনিধিরা কেন্দ্রীয় কমিটির বিবেচনাধীন ও আহূত বাংলাদেশ কাউন্সিলের জাতীয় সম্মেলন থেকে দায়িত্ব গ্রহণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং সম্পূর্ণ সংস্থা গঠন করবে।

 

গ) সাংগঠনিক কার্যাবলী সম্পর্কিত

১। ‘কর্মে একতা’ অর্জনের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা বড় প্রতিবন্ধক হবে প্রতিষ্ঠিত জননেতৃত্ব (গত দুই দশকে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কর্মকান্ড থেকে উদ্ভুত এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রবীণ; যারা স্বভাবতই কোনো না কোনোভাবে স্থূল বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন যদিও এতে তাদের কোন দোষ নেই) এবং স্থানীয় অ্যাকশন কমিটির নতুনভাবে উদ্ভূত নেতৃত্বের (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তরুণ এবং শিক্ষিত কিন্তু অনেকেই ধৈর্যহীনতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক দাম্ভিকতায় আক্রান্ত) মধ্যে বর্ধিষ্ণু সাংঘর্ষিক সম্পর্ক। প্রতিষ্ঠিত জননেতৃত্ব নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদদের হস্তক্ষেপে বোধগম্যভাবেই চিন্তিত। অন্যদিকে, নতুন উদ্ভুত জননেতৃত্ববিরক্তিবোধ করে যখন তাদের শুভাকাংক্ষাউদ্ভুত কর্মকান্ড সংকীর্ণ ও সাম্প্রদায়িক বিরোধপূর্ণ রাজনীতি দ্বারা বাধাগ্রস্থ হয়। তরুণ প্রজন্ম কার্যক্রম ও দ্রুত তৎপরতার পরিবর্তে অপ্রাসঙ্গিক তর্ক-বিতর্কে সময় নষ্ট করছে। নেতৃত্বে এ দুই ভিন্ন ধরণের বৈশিষ্ট্য খুবই দৃশ্যতঃ হবে যদি লন্ডনের দুটি সংগঠন, স্টুডেন্টস’ অ্যাকশন কমিটি অথবা উইমেন’স কমিটি এবং লন্ডন অ্যাকশন কমিটির কার্যপন্থার তুলনামূলক বিচার করা হয়। এ দু’টো সম্পূর্ণ পৃথক ধারাকে একটিমাত্র সমন্বিত ধারায় একত্রিত করাটাই আমরা যারা যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ কর্মীদের মধ্যে ‘কর্মে একতা’ দেখতে আগ্রহী তাদের সকলের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী সাংগঠনিক কাজ। সকল পর্যায়ে সকল প্রচেষ্টা এই সমস্যার সমাধানে ঘনীভূত করা উচিৎ।যদি প্রতিষ্ঠিত জননেতৃত্ব এবং নবউদ্ভুত নেতৃত্বের মধ্যে এ সম্মেলন সম্ভব হয় তবে আন্দোলনে তহবিল ও কর্মকান্ড সরবরাহে প্রধান দুটি সমস্যার তুলনামূলক সহজ সমাধান সম্ভবপর হবে। উভয় পক্ষের মধ্যে একতা ও সহযোগিতার জন্য উপযুক্ত মনস্তাত্বিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্ব এবং নবউদ্ভুত রাজনৈতিক কর্মীদের পরস্পরের সম্পর্কে আরো বেশি জানা এবং পরস্পরের শক্তি ও সীমাবদ্ধতাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষত রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতাগুলোর উপরে তাদের শক্তি ও ভালো দিকগুলোকে গুরুত্ব দেও্য়া এবং যথাযোগ্য ক্ষমতার বিবেচনায় তাদেরনেতৃত্বে স্থান দিয়েই একটি কাঠামো সৃষ্টি। এ সকল নেতৃত্বের মধ্যে অনেকেই কর্মঠ, দৃঢ়চেতা ও বিশ্বস্ত এবং লক্ষ্যের প্রতি তাদের নিষ্ঠা প্রশ্নের উর্ধ্বে। এসকল ব্যক্তিবর্গ ট্রাস্টি, মধ্যস্থতাকারী, কোষাধ্যক্ষ, ফিন্যান্স কমিটির সদস্য প্রভৃতি পদের জন্যবিশেষভাবে উপযুক্ত এবং তাদের মধ্যে অনেকেই আবার বিভিন্নসংস্থার প্রধান পদস্থিত হবার যোগ্য। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে তারা সম্পাদকীয় দায়িত্ব এবং দুয়েকটি ব্যতিক্রম বাদে চেয়ারম্যান পদের জন্য উপযুক্ত নন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের বৈঠকগুলো উপযুক্ত সূচনা পায়না, অপ্রাসঙ্গিকতায় বাধাগ্রস্থ হয়, সামান্যতম বিরোধিতায় লাইনচ্যুত হয়, সময়মত শুরু ও শেষ হয়না, কোনো গ্রহণযোগ্য ও বোধগম্য সমাধানে পৌঁছে না এবং এর কারণ হলো ত্রুটিপূর্ণ সভাপতিত্ব। ত্রুটিপূর্ণ সভাপতিত্বের কারণে বৈঠকগুলো জাতিকে একতাবদ্ধ হতে সহায়তা এবং আমাদের রাজনৈতিক চেতনা ও দেশাত্ববোধের তাড়নাকে উর্ধ্বে তুলে ধরার পরিবর্তে বিপরীত ঘটনা ঘটায়। এমন ত্রুটিপূর্ণভাবে পরিচালিত বৈঠকগুলো অপ্রীতিকর বিষণ্নতা ও হতাশা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। এ বৈঠকগুলো উৎসাহ প্রদানের পরিবর্তে বরং আমাদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভাটা সৃষ্টি করে।

২। অন্যদিকে, কার্যকরী সাবকমিটির ভিত্তিতে কর্মকর্তাবৃন্দের সমন্বয় প্রয়োজন, যাদের কার্যালয় পরিচালনা, প্রকাশনা, জনসম্পর্ক, অ্যাকাউন্টিং প্রভৃতি নির্দিষ্ট কাজ থাকবে। এসকল কর্মকর্তার যথাযোগ্য সমন্বয় সংগঠনটির কার্যনির্বাহী শাখা গঠন করবে। তাদের প্রাথমিক দায়িত্ব হবে প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জাতীয় সম্মেলন অথবা জাতীয় কাউন্সিলের বিভিন্ন সম্মেলনের মধ্যবর্তী সময়ে আসা নীতিমূলক সিদ্ধান্তগুলো নির্বাহ করা।

৩। ‘কর্মে একতা’ এবং একই সাথে ‘কার্যাবলীতে দক্ষতা’ অর্জন করতে সংস্থাটির আরো একটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে যা হলো প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিত্বমূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসা কর্মকর্তাবৃন্দ এবং কোনো জনসংস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট নন এমন ব্যক্তিবর্গ কিন্তু পেশাগত ও রাজনৈতিকভাবে দায়িত্বশীল পদের জন্য যোগ্য তাদের কার্যাবলী সমন্বয়। এসকল ব্যক্তিবর্গ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসবেন তা আশা করা যায়না।  তাদের কাছে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় হলো খসড়া। জাতীয় কাউন্সিলের প্রাথমিক ইউনিট থেকেই কর্মকান্ডের বিভিন্ন পর্যায়ে সকল নির্বাচক ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তিতে ক্ষমতা বন্টনের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ আন্দোলনে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাংগঠনিক সমস্যা নিয়ে এই ছিলো আমাদের তাৎক্ষণিক কিছু ভাবনা এবং বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটির সদস্যবৃন্দ (ওয়েস্টমিনস্টার-লন্ডন) আমাদের সহকর্মী ও স্বদেশবাসীর কাছ থেকে এই স্মারকলিপির মন্তব্য ও সমালোচনা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবেন। এছাড়াও আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে অ্যাকশন কমিটিগুলোর নেতৃবৃন্দের উচিৎ আন্দোলনে প্রয়োজনীয় অ্যাড-হক সংবিধান সরবরাহে জরুরীভাবে বৈঠকে অংশগ্রহন করা, যাতে সদস্য এবং কমিটি হিসেবে আমাদের অধিকার ও বাধ্যবাধকতাগুলো উল্লিখিত এবং সীমাবদ্ধতাগুলো সংজ্ঞায়িত থাকবে। কেবল তবেই আমাদের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে একটি কার্যকরী কাঠামো প্রদান করা যাবে। অন্যথায় হতাশা গভীরতর হবে এবং জনগণের দেশাত্ববোধক প্রেরণাকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। যদি আমরা তা ঘটতে দেই, তা হবে জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং বাংলাদেশের জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের বিশ্বাসঘাতকতাস্বরূপ।

বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটির পক্ষে

(ওয়েস্টমিনস্টার-লন্ডন)

 

২৩ মিনফোর্ড গার্ডেনস

লন্ডনডাব্লিউআই

৭ জুলাই ১৯৭১,

আ.রহিম চৌধুরী

 

শরিফুল ইসলাম

যুগ্ম আহ্বায়ক

Scroll to Top