<৪, ১, ২-৩>
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১। বৃটেনে গঠিত ‘ইস্ট পাকিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট’ কর্তৃক স্বাধীনতা সংগ্রামের আহবান | ‘ইস্ট পাকিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট নিউজ’ | নভেম্বর ১৯৭০ |
এম এ ভূঁইয়া কর্তৃক প্রকাশিত। আহ্বায়ক এবং ডেপুটি আহ্বায়ক এম আহমেদ
অনুলিপি বিভাগ কর্তৃক পরিবেশিত , ১২৯ সোহো হিল, ব্রামিংহাম ১৯
ইস্ট পাকিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট নিউজ
২৯ শে নভেম্বর ১৯৭০, রবিবার দুপুর ২:০০ ঘটিকায় ডিগব্যাথসিভিক হলে ইস্ট পাকিস্তান লিবারেশন ফ্রন্টের সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আয়োজিত সভায় মিডল্যান্ড থেকে আনুমানিক দুই হাজার বাঙালী অংশগ্রহণ করেন।
প্রাক্তন ছাত্রনেতা জনাব তারিক আলি সভায় বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, “ইস্ট পাকিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ সমগ্র এশিয়ার জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে”। তিনি আরও বলেন, ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনামলে একটি কথা প্রচলিত ছিল যে, “বাঙালী আজকে যা চিন্তা করতে পারে, ইন্ডিয়ার মাথায় সেটা আসে তার পরদিন”।
সভার আহ্বায়ক, জনাব আজিজুল হক ভূঁইয়া অবিলম্বে পূর্ব-পাকিস্তানের পূর্ণ স্বাধীনতার ডাক দেন; নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমূহ কোনরূপ ভিন্নমত ব্যতীত সভায় গৃহীত হয়।
ইস্ট পাকিস্তান লিবারেশন ফ্রন্টের এই সভায়ঃ
১. ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া ও তার সামরিক সরকারের ঔদাসীন্য ও ইচ্ছাকৃত অদক্ষতা প্রদর্শন এবং মৃতের সংখ্যা যথাসাধ্য কমিয়ে দেখানোর চেষ্টার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়। এমতাবস্থায়, দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে ১০০,০০০ মানুষের মৃত্যুর জন্য আমরা রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানকে সরাসরি দায়ী বলে মানি। পাকিস্তান সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতো তবে এই মানুষগুলোকে বাঁচানো যেত। তাই আমরা অবিলম্বে ইয়াহিয়ার পদত্যাগ দাবী করছি।
২.সাম্প্রতিক সর্বনাশা ঘূর্ণিঝড়ের পরিপ্রেক্ষিতে সক্রিয়ভাবে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম তদারকি করার জন্য এবং ত্রাণ কার্যক্রম যেন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর একার দায়িত্বে ছেড়ে না দেয়া হয় সেটা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক রেডক্রস, রেডক্রিসেন্টও চীন, রাশিয়া থেকে অনুরূপ সংস্থাসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে আন্তর্জাতিক কমিটি গঠন করতে হবে। কারণ পাকিস্তানী বাহিনী মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয় ও বাঙালীর তাদের উপর কোন ভরসা নেই।
৩. বন্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ও ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা (যেমন, স্থান খালি করা, দ্রুত সতর্কতা, আশ্রয়ের ব্যবস্থা) গ্রহণ করার জন্য বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রসমূহের সাথে সমঝোতায় আসতে অনতিবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কয়েক বছর আগে চীন সরকার এরকম কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করার শর্ত-বিহীন প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়।
৪. ঢাকা বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষণা করতে হবে যেন জরুরী সংকটময় অবস্থায় এটি আরও দক্ষতার সাথে ব্যবহার করা যায়।
৫. সভায় পশ্চিম পাকিস্তানের পুঁজিবাদী সরকারের চালানো শোষণ – নিপীড়নের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। বিগত ২৩ বছর যাবৎ বিশ্বাসঘাতকতার শিকার সাড়ে সাত কোটি বাঙালী নিজেদের রক্ষাকর্তা হিসেবে ১১০০ মাইল দূরের কোন সরকারের উপর আর নির্ভর করতে রাজী নয়। এই সরকার যারা বাঙালীকে নিরাপদে রাখতে পারে না, এমনকি নিরাপদে রাখতে চায়ও না, এই দুর্যোগের সময় তাদের মুখোশ ভালমতোই খুলে গেছে। তাই বাঙালী তাদের স্বাধীনতার চূড়ান্ত দাবী ঘোষণা করছে।
“পূর্ব-পাকিস্তান জিন্দাবাদ”
ইস্ট পাকিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট
ইস্ট পাকিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট হল পূর্ব-পাকিস্তানের ছাত্র ও শ্রমজীবী জনতা দ্বারা গঠিত একটি বিপ্লবী সংগঠন যাদের একটিই আদর্শ আর সেটা হল পশ্চিম-পাকিস্তানের পুঁজিবাদ অধীনস্থ সরকারের নির্মম শোষণ ও আধিপত্যের হাত থেকে পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণকে মুক্ত করা। একইরকমভাবে তারা মনে করে যে পশ্চিম-পাকিস্তানের সাধারণ জনগণও একই পুঁজিবাদী শ্রেণী দ্বারা শোষিত হচ্ছে এবং তাদের মুক্তির ডাক তাদের ভিতর থেকেই আসতে হবে।
তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে পূর্ব-পাকিস্তান হবে একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন দেশ যার থাকবে জনতার সরকার এবং পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণের চাহিদার সাথে খাপ খাওয়ানো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। দেশের কৃষি ও শিল্প ব্যবস্থা এমনভাবে উন্নত করতে হবে যেন দেশের সকল সম্পদ দেশের জনগণের জীবনযাত্রার সামগ্রিক অগ্রগতির কাজে ব্যবহার করা যায়। কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণী সম্পূর্ণরূপে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে। শাসক শ্রেণীর যেকোনো বৈষম্যের বিরুদ্ধে ইস্ট পাকিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট সমস্ত শক্তি দিয়ে লড়াই করবে।
ফ্রন্ট বিশ্বাস করে যে পূর্ব-পাকিস্তানের সাথে অনেকদিন ধরে ধর্মের নামে বিশ্বাসঘাতকতা করা হচ্ছে। নিজেদের স্বার্থ নিজেরা দেখভাল করতে পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণ যথেষ্ট-মাত্রায় সক্ষম। পশ্চিম-পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক সরকারের আধিপত্য থেকে এই দেশকে মুক্ত করতে সাড়ে সাত কোটি বাঙালী আজ সোচ্চার ও ঐক্যবদ্ধ।
সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর স্বপ্নের স্বাধীন পূর্ব-বাংলা গঠনে ফ্রন্টের সাথে আছে আশীর্বাদ ও সমর্থন। প্রতিটি বাঙালীর অন্তরে লুকিয়ে আছে স্বাধীন পূর্ব-বাংলার স্বপ্ন।
পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণকে ঔপনিবেশিক আধিপত্য ও পুঁজিবাদী শোষণের হাত থেকে মুক্ত করতে ফ্রন্ট তার স্বাধীনতার সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। স্বাধীন পূর্ব-পাকিস্তান দীর্ঘজীবী হোক।
“পূর্ব-পাকিস্তান জিন্দাবাদ”