মুকুন্দপুর অ্যামবুশ-১৩ই সেপ্টেম্বরঃ
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রেলপথে যাতায়াত বাধা সৃষ্টি করার জন্য আমরা রেলওয়ে লাইনে ট্যাংক বিধ্বংসী মাইন পুঁতে রাখতাম। এ ব্যাপারে পাকিস্তানীরা বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে। তারা রেলগাড়ির ইঞ্জিনের আগে দুটো কি তিনটে ওয়াগন জুড়ে দিত। এতে ঐ ওয়াগনগুলোই প্রথম বিধ্বস্ত হত এবং ট্রেনের বিশেষ কোন ক্ষয়ক্ষতি হত না।
তাদের এই ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অন্য কৌশল অবলম্বন করি,মাইন এমনভাবে ফাটে পাতে করে ট্রেনের বিশেষ অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই ট্যাংক বিধ্বংসী মাইনকে ফাটাবার জন্য আমরা বিদ্যুতের সাহায্য (ইলেকক্ট্রিক ডেটোনেটিং সিস্টেম) আমাদের ইচ্ছামত মাইন ফাটাবার ব্যবস্থা নেই। পাকবাহিনী যখন আখাউড়া-সিলেট রেলগাড়ি চালু করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে, তখন আমরা কিছুদিন তাদের গতিবিধি এবং ক্রিয়াকলাপ লক্ষ্য করি। এই পদ্ধতিতে ট্রেন ধ্বংস করার জন্য মুকুন্দপুর এলাকাতে এক অ্যামবুশ তৈরি করি। অ্যামবুশ লাগানো হয়েছিল দু’খানা এন্টি ট্যাংক মাইন দিয়ে। তার সাথে বৈদ্যুতিক তার যোগ করে প্রায় ৩০০ গজ দূরে রিমোট কন্ট্রোল স্থাপন করা হয়-যেখান থেকে সুইচ টিপলে যেন মাইন ফেটে যায়। এই সুযোগ এসেছিল ১৩ সেপ্টেম্বর। ঐ দিন পাক-বাহিনীর প্রায় এক কোম্পানী সৈন্যর ট্রেনে আখাউড়া থেকে মুকুন্দপুর হয়ে হরশপুর পর্যন্ত যাবার পরিকল্পনা ছিল। আমাদের ফাঁদ ছিল মুকুন্দপুর এবং হরশপুরের মাঝামাঝি জায়গায়, মুকুন্দপুরের নিকটে ঐ ট্রেনে দু’জন পাকিস্তানী অফিসার ছিল।
ট্রেনের সম্মুখভাবে দু’খানা বালি বোঝাই ওয়াগন লাগানো ছিল। রাত তখন প্রায় চারটা। যখন ট্রেন মুকুন্দপুর থেকে হরশপুরের দিকে যাত্রা করে তখনই আমাদের অ্যামবুশ পার্টি তৎপর হয়ে ওঠে। ট্রেন আস্তে আস্তে অগ্রসর হচ্ছিল। বালি বোঝাই ওয়াগন ট্যাংক বিধ্বংসী মাইন পার হবার পর যখন ইঞ্জিন এবং সৈন্য বোঝাই মাইনের উপর আসে তখনই সুইচ টিপে মাইনকে ফাটানো হয়। এতে ইঞ্জিনখানা সৈন্য বোঝাই ওয়াগনসহ ধ্বংস হয়। এই অপারেশনে দু’জন অফিসারসহ ২৭ জন পাকসেনা নিহত হয় বলে জানান যায়। তাছাড়া অনেক আহত হয়েছিল। এই অ্যামবুশ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লেঃ মোরশেদ। বৈদ্যুতিক প্রক্রিয়ায় (সিস্টেম) ট্রেন ধ্বংস করার পদ্ধতি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এটাই ছিল প্রথম।