সারাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উস্কানিমূলক আচরণের উপর সংবাদপত্রের রিপোর্ট

<2.218.784-785>

সৈয়দপুরে ১৫ জন নিহত

নিম্নপদস্থ সেনা কর্মকর্তারা নিষ্পত্তির চেষ্টা ব্যর্থ করে দিচ্ছেনঃ

বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনা বিরাজ করছে

একটি পিপলস রিপোর্ট

 

 

সেনাদের নির্বিচার গুলিবর্ষনে অন্তত ১৫ জন অজ্ঞাতনামা বাঙালী গ্রামবাসী নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

 

নিম্নপদস্থ কিছু উচ্চাভিলাষী সেনাকর্মকর্তা দ্বারা সংঘটিত এই বর্বর গণহত্যা আওয়ামিলীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমানের সাথে প্রেসিডেন্টের চলমান রাজনীতিক সমাধানের আলোচনা ব্যর্থ করে দেবার উদ্দেশ্যে চালানো হয়।

 

খবরে প্রকাশ, স্থানীয় এবং অ-স্থানীয়দের ভিতরে বিশৃংখলার অজুহাতে সেনাবাহিনী সৈয়দপুরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান গ্রহণ করে বিনা উস্কানীতে/প্ররোচনায় নির্বিচার গুলিবর্ষন করে। এতে প্রায় ১৫ জন নিহত এবং আরো ৫০ জন আহত হয়।

 

খবর পেয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কমান্ডারকে সেনা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। কিন্তু  তারা সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন।

 

পশ্চিম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমর্থনে অ-স্থানীয়রা স্থানীয় অধিবাসীদের বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ করে যার ফলে সেখানে তুমুল উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সৈয়দপুর প্রধানত বহিরাগত বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা অধ্যুষিত যাদেরকে নিম্নপদস্থ উচ্চাভিলাষী কিছু সেনা কর্মকর্তা ব্যবহার করেছে পাঠার বলি হিসেবে, যাতে চলমান রাজনৈতিক সংকট আরো গাঢ় হয়।

 

আরেকটি বহিরাগত অধ্যুষিত এলাকা মিরপুরে আগের রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনার জের ধরে গতকাল সারাদিন তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করে। গতকাল সকালেই পাঞ্জাব রেজিমেন্ট সেখানে আসন গেড়েছে। দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত সেখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়। পুলিশ এবং ইপিআর এই ঝামেলাপূর্ণ এলাকায় পৌছে বেলা আড়াইটার পর।

 

যেসব বাড়ির উপরে বাংলাদেশের সদ্য জন্ম নেয়া নতুন পতাকা টাঙানো হয়েছিল, নৈরাজ্যসৃষ্টিকারীরা সেই সব বাড়ি আক্রমন করার সময় নির্বিচারে গুলি, বোমা এবং অন্যান্য আরো অস্ত্রপাতি ব্যবহার করে। এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে তখনও, কোয়ার্টার ১২ এবং ১৬ এর ৯ নং লেন, ব্লক-বি, সেকশন ১২ এ দুটি বোমা সক্রিয় অবস্থায় পড়ে ছিল। ঢাকা-৭১১৭ নাম্বার সম্বলিত একটি প্রাইভেট কারকে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সৈন্যদের আনা নেয়া করতে দেখা গেছে।এটা সহজেই বোধগম্য যে, গত মঙ্গল-বুধবার রাতে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা বাঙালিদের বাড়ি আক্রমন করেছিল বাংলাদেশের নতুন পতাকা টাঙানোর জন্য। মিরপুর ১০ নম্বরের বাংলা মিডিয়াম স্কুলের প্রধানশিক্ষকের উপর অত্যাচার করা হয় এবং ছুরিকাঘাত করা হয় স্কুলের উপরে একটা বাংলাদেশের পতাকা পতপত করে উড়ছিল বলে। পরে পতাকাটাকেও পুড়িয়ে দেয়া হয়।

১০ নম্বর সেকশনের আওয়ামী লীগের অফিসও পুড়িয়ে দেবার চেষ্টা করা হয়। অফিসের পতাকাও পুড়িয়ে দেয়া হয়।

 

বাসস্ট্যাণ্ডের পাশে এক বাঙালির বাড়ি পুরো ধুলিসাৎ করে দেয়া হয়। সেকশন ৬ এ অনেককে ছুরিকাঘাত করা হয়।

বিদেশী সৈনিকদের এই উদ্দীপনা এই সপ্তাহের শুরুতে জয়দেবপুরে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতার নামান্তর।

Scroll to Top