২২। সিরাজগঞ্জ যমুনা পাড়ের কিছু হত্যা-কাহিনী (৩৯৫)
সূত্র – দৈনিক আজাদ, ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২
সিরাজগঞ্জ যমুনা পাড়ের কিছু হত্যা-কাহিনী
এখানকার প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাকিস্তানীদের নৃশংস নর-নিধনযজ্ঞের কাহিনীগুলো একে একে বেরিয়ে আসছে। বেরিয়ে আসছে কিভাবে তারা পল্লী মায়ের নিভৃত কোল থেকে তরুণ যুবক ছেলেদের ছিনিয়ে এনে লঞ্চ ঘাটে জবাই করত আর নদীর বুকে ছুড়ে ফেলে দিত। সিরাজগঞ্জের সাব জেলটি ঠিক এমনি জবাই খানার কাজে ব্যবহার হত।
এসব একদিন দুদিনের ঘটনা নয়। এপ্রিল মাসে হানাদাররা সিরাজগঞ্জ প্রবেশের পর থেকে নয় মাস ধরে দিনের পর দিন এর পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। আর গ্রামে গ্রামান্তরে মানুষ হতভাগ্যদের আর্তনাদে শিউরে উঠেছে।
এতে করে সিরাজগঞ্জের জবাইখানা গুলোতে কমপক্ষে ৩ হাজার লোক মারা পড়েছে। আর যে বন্দর ২৫শে মার্চের আগে অহরহ কর্মব্যস্ত থাকতো তা-ই আর ২৭শে এপ্রিলের পর এক জন মানবহীন প্রেতপুরীতে পরিণত হয়। লোকজন যতদূর সম্ভব এই ঘাট এড়িয়ে চলতে চাইত।
বার্তা প্রতিষ্ঠান বি এস এস এর প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জের আওয়ামী লীগ , ন্যাপ, মুক্তিবাহিনী আর মুজিব বাহিনীর বহু নেতার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তারা জানান যে ২৭শে এপ্রিল থেকে ৫ দিন ধরে তারা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কম করে ৫ শত লোককে হত্যা করেছে।
আজ এসব কথা লিখতে বসে বারইতলা গ্রামটির কথা মনে পড়ে গেল। কাজীপুর থানার এ গ্রামে গত বছর নভেম্বরের কোন এক সময়ে তারা হামলা করে। মাত্র একটি দিনের নারকীয় যজ্ঞ। অথচ এই একটি দিনে নারী, পুরুষ ও শিশুতে মিলে ২ শত লোককে জল্লাদরা হত্যা করে। কমপক্ষে ২ শত ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেয়।
এরও আগে মে মাসে সিরাজগঞ্জ থানার বাবতীতে মারা পড়ে ১৭০ জন। বারইতলা আর বাবতী এই দু জায়গাতেই মুক্তিবাহিনী বীর বিক্রমে শত্রুকে বাঁধা দিয়েছে।
এভাবে নরহত্যা, লুটতরাজ আর অগ্নিসংযোগের অমানুষিক ইতিহাস ঘাঁটলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক একটি গ্রামের ছবিঃ তামাই, রাজাপুর, সাইদাবাদ, সিংলাবাড়ী।