শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৮। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের
গ্রামীণ শ্রোতাদের জন্য প্রচারিত অনুষ্ঠান |
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দলিলপত্র | অক্টোবর-ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
সোনার বাংলা
২৯ অক্টোবর, ১৯৭১
সবাই ঃ আসসালামু আলায়কুম।
ছোটমিয়া ঃ ওয়ালায়কুম আসসালাম।
রুস্তম ঃ কি জমির ভাই ভাবছ কি? আমাদের ছোটমিয়া গো, ছোটমিয়া। আশফাক ভাই কাল যাবার সময় আমাকে বলল, “চলো
বেড়িয়ে আসি।”
জমির ঃ কাল তাহলে তুমি ছোটমিয়ার ওখানে গেছিলে? তা ভালই হয়েছে। কি জমির ভাই, আশফাক ভাই আজ আসবে না?
ছোটমিয়া ঃ আশরাফ ভাই আজ আর আসবেন না। উনি রক্ষীবাহিনী গঠনের ব্যাপারে ব্যস্ত আছেন, তাই কাল আমাকে বললেন, “তুমি
ভাই আসরে যেয়ো’।
কাজলীর মা ঃ ভালই হয়েছে। জমির ভাই, এবার তোমাদের খবর-টবর বলো। এখন সারা বাংলাদেশ জুড়ে তো যুদ্ধের দামামা বাজছে।
একদিকে সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ সাড়ে সাত কোটি মানুষ, আর অন্যদিকে ইয়াহিয়ার জল্লাদ বাহিনী।
রুস্তম ঃ ওদিকে আবার জুটেছে চোরের সাক্ষী গাঁটকাটা’।
কাজলীর মা ঃ তার মানে, কি বলছ রুস্তম!
জমির ভাই ঃ রুস্তম আজকে আবার ভালো কথা বলছে মনে হচ্ছে। কার কথা বলছ রুস্তম!
রুস্তম ঃ ও, দেখেছো তো শুধু শুধু আমাকে বোকা ভাবো, এখন দেখো বুদ্ধি হয়েছে কিনা।
জমির ভাই ঃ বুদ্ধি তো হয়েছে দেখতে পাচ্ছি। কার কথা বলছ আগে সেটা বলো।
ছোটমিয়া ঃ বলো, রুস্তম। কথা বলতে বলতে থেমে যাওয়া ভাল না। কথা পরিষ্কার করে বলা উচিত।
রুস্তম ঃ বলব? ওই রাজাকারদের কথা বলছি। খান সৈন্যেরা যত না চেচায়, তার চেয়ে বেশী লাফায় রাজাকাররা।
জমির ভাই ঃ তার মানে তুমি বলতে চাচ্ছো, রাজা যতো বলে পারিষদ দলে বলে তার শতগুণ।
কাজলীর মা ঃ ঠিকই বলেছ জমির ভাই, রুস্তম কিন্তু ঠিকই ধরেছে।
ছোটমিয়া ঃ রুস্তমেরও ধ্যান-ধারণা আছে। আজ বাংলার প্রতিটি মানুষ সচেতন, তারা প্রত্যেকে নিজের দেশকে শত্রুর কবল মুক্ত করার
জন্য বদ্ধ পরিকর । প্রান যায় তবু স্বীকার, স্বাধীনতা চাই-ই ।
জমির ভাই ঃ আমরা দখলদার বাহিনীকে তাড়াবোই ।প্রতিটি গ্রামে-গঞ্জে ছেলেরা ট্রেনিং নিচ্ছে, মুক্তি বাহিনীতে ভর্তি হচ্ছে ।
রুস্তম ঃ ট্রেনিং আমি নিচ্ছি, দুশমনের বিষদাঁত ভাঙ্গতেই হবে ।এমন শিক্ষা দিবো জীবনে যেন আর কোনদিন –
কাজলীর মা ঃ থেমে গেলে কেন, বলো।
ছোটমিয়া ঃ রুস্তম বলতে চাচ্ছে, দুশমন যেন আর কোনদিন বাংলার মুখে না হয়, বা বাংলার নামও মুখে না আনে। তাই না রুস্তম? রুস্তম ঃ ঠিক বলেছ ছোটমিয়া। শক্ত কথা তো একটু আটকে যায়। তবে শিখে নিয়েছি। তাই না ছোটমিয়া?
ছোটমিয়া ঃ ঠিকই, মানুষ ঠেকতে ঠেকতেই শেখে।
জামির ভাই ঃ এই রাজাকাররা শিখছে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের হাতে এমনই মার খাচ্ছে যে বদবুদ্ধি সব কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে। কাজলীর মা ঃ যাবে না, অন্যায় কদিন থাকবে বলো। দুদিন হয়তো মানুষকে কষ্ট দেবে, তারপর যেতেই হবে।
ছোটমিয়া ঃ ঠিকই, অন্যায় বেশীদিন থাকতে পারে না। একদিন তাকে দূর হতেই হবে। ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা হবেই।
জমির ভাই ঃ এই দেখ না, আমতলীর বসিরউদ্দিন খবর দিয়ে গেল , বিশজন রাজাকার পালিয়ে এসেছে, মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ
করেছে।
রুস্তম ঃ কেন, তিড়িং বিড়িং ফুরালো? হাতে তো রাইফেল নিয়ে গা-গেরামের হাসটা মুরগীটা ছাগলটা খুব জুত করে খাওয়া
হচ্ছিল, কেন সে শখ মিটে গেল?
কাজলীর মা ঃ শখ মিটবে না? মুক্তিবাহিনীর মার জানা আছে না-এমনই মার দেয়, ল্যাজ তুলে চৌ-চোঁ দৌড়।
রুস্তম ঃ মুক্তিবাহিনীর ভয়ে খানসেনাদের রাতের ঘুম দিনের আরাম হারাম হয়ে গেছে।
জামির ভাই ঃ কথাটা একেবারে সত্য বলেছ রুস্তম। আর তার জন্যেই তো ওরা নিজেরো কোথাও যাওয়ার আগে রাজাকারদের পাঠিয়ে
দেয়। হালচাল দেখে তারপর এগোয়।
রুস্তম ঃ কথায় আছে না, সাবধানের মার নেই।
ছোটমিয়া ঃ কথাটা ঠিকই, কিন্তু এক করেও দখলদার পাকবাহিনীর কুল রক্ষা হচ্ছে না। ওরা ভেবেছিল ভয় দেখিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে
মানুষের ইচ্ছাকে, সমগ্র আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেবে। কিন্তু
বাংলার মানুষের ইচ্ছাই বাংলার মানুষকে জাগিয়েছে। আজ বাংলার মানুষ ঘরে-বাইরে সংগ্রামী। একদিকে লড়াই করছে দুঃসাহসী বীর মুক্তিবাহিনী, অন্যদিকে সহায়তা করছে বাংলার সাধারণ মানুষ।
জমির ভাই ঃ আর ভাই রাজাকারদের অবস্থা হয়েছে “বিনা জলে মাছের মতো খাবি খাচ্ছে।
কাজলীর মা ঃ তার জন্যেই উপায় না দেখে মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা দিচ্ছে। বুঝলে ছোটমিয়া, ওদের নাক কানগুলো কেটে দিতে হয়। কি
কষ্টই না মানুষকে দিচ্ছে।
রুস্তম ঃ ওরা যেমন যেমন করে মানুষকে কষ্ট দিয়েছে, তেমন তেমন করে শোধ তুলে নেওয়া উচিত।
ছোটমিয়া ঃ ওটা ভুল ধারণা। যারা নিজে এসে ধরা দেয়, তাদের উপর অত্যাচার করাটা ভুল। ওতে মনুষ্যত্বের অপমান হয়। আর তাছাড়া
রাজাকার মানেই যে খারাপ একটা কিছু তা নয়। তুমি কি বলো জমির ভাই।
রুস্তম ঃ জমির ভাইয়ের মনে লাগেনি কথাটা, তুমিই একটু বুঝিয়ে বলো
কাজলীর মা ঃ সেই ভালো ছোটমিয়া।
ছোটমিয়া ঃ আচ্ছা জমির ভাই, ভাল-মন্দ মিলিয়েই মানুষ- কিন্তু সব মানুষই কি খারাপ? তা নয়। আজ বাংলাদেশের রাজাকার যারা
তাদের মধ্যে অনেকেই প্রাণের দায়ে রাজাকারে নাম লিখিয়েছে। অনেকে হয়তো সামরিক লোভে পড়ে রাজাকার হয়েছে।
কিন্তু তারা যখন বুঝতে পারছে তখনই দলে দলে সরে আসছে। তখন তাদের আর শাস্তি দিলে ভুল হবে। মানুষেই ভুল
করে, তাই না? কি বলো জমির ভাই?
জমির ভাই ঃ ঠিকই বলেছ ছোটমিয়া। তবে দুর্বলের উপর আমাদের রাগ নাই, কিন্তু দখলদার সৈন্যের অত্যাচারের জবাব আমরা দেবো।
ছোটমিয়া ঃ ঠিকই, দুশমনদের যোগ্য জবাবই আমরা দেবো। তাদের সমস্ত শক্তি আর দম্ভ আমরা নিঃশেষে চূর্ণ করব।
কাজলীর মা ঃ এ জন্যেই তো ঘরে ঘরে ছেলেরা আজ ট্রেনিং নিচ্ছে। মা-বোনেরা তৈরী হচ্ছে।
ছোটমিয়া ঃ নিশ্চয়ই কেননা এ সংগ্রাম আমাদেরই স্বাধীনতার সংগ্রাম।
রুস্তম ঃ ছোটমিয়া, বলছিলাম এতো সুন্দর সুন্দর কথা হলো এরপর একটা গান হলে হতো না?
জমির ভাই ঃ ঠিকই ছোটমিয়া, একটা গান শোনাও।
ছোটমিয়া ঃ বেশ, তাহলে শোন, একটা দেশাত্মবোধক গান শোন। (দেশাত্মবোধক গান)
ছোটমিয়া ঃ গান তো শুনলে, বেশ ভালই লাগলো, না কি বলো?
রুস্তম ঃ এরকম গান শুনলে রক্তটা একেবারে টগবগ করে ফুটতে থাকে।
জমির ভাই ঃ ঠিকই
কাজলীর মা ঃ সবই তো হতো । ছোটমিয়া, হাতে তো সময়ও নাই।
ছোটমিয়া ঃ হ্যাঁ, হাতে আজকে আমাদের আর সময় নেই, চলো আজকের মতো উঠি।
রুস্তম ঃ চলো।
১ নভেম্বর, ১৯৭১
জমির ভাই ঃ আসসালামু আলায়কুম।
সবাই ঃ ওয়ালায়কুম আসসালাম।
ছোটমিয়া ঃ এসো জমির ভাই। খবর সব ভাল তো?
রুস্তম ঃ জমির ভাই নিশ্চয় খবর নিয়ে এসেছে। আজ আসরে আবার ‘নেট’-এ এলো দেখছ না?
জমির ভাই ঃ রোজদিন নিজে দেরী করে আসো। আজ তাই খুব ঠাট্টা হচ্ছে, না?
কাজলীর মা ঃ ঠাট্টা করেনি জমির ভাই। রুস্তম সত্যি বলছে। একটু আগে ছোটমিয়াকে বলছিল জমির ভাই খুব খাটছে।
ছোটমিয়া ঃ খুব ভালো কথা। জমির ভাই শুধু কেন, তুমিও তো খুব খাটো।
কাজলীর মা ঃ নিজের কথা কি নিজে বলা যায় ছোটমিয়া? অন্যের উপর দিয়ে যদি যায় ভালো কথা।
রুস্তম ঃ কি যে বলো। একটু কাজ করি, তা আবার বলে বেড়াতে হবে নাকি? কাজ তো করতে হবেই। সব মানুষ কাজ করছে আর
আমি একলা বসে থাকবো নাকি?
জমির ভাই ঃ কি বলছে রুস্তম। তুমি কাজ করো না একথা বলছে কে বলেছে?
ছোটমিয়া ঃ কেউই বলেনি, তবে রুস্তম মনে মনে সন্দেহ করছে, হয়তো সবাই ভাবছে রুস্তম কাজ করে না। তাই না রুস্তম ?
রুস্তম ঃ ঠিকই ছোটমিয়া।
ছোটমিয়া ঃ তা কেউ ভাবে না রুস্তম। যে কাজ করবে সে তার মূল্য অবশ্যই পাবে। আজকে খেতখামারে ফসল নষ্ট করেছে, আমাদের
সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় চুপচাপ বসে থাকার সময় তো কারোরই নেই। এর জন্যেই তো। দিন-রাত
গ্রামে-গঞ্জে ঘুরছি। এই সংগ্রামে আমাদের মা-বোনদেরও দায়িত্ব আছে-কর্তব্য আছে, সেটা তাদের বুঝাচ্ছি। নিজের নিজের সংসার গুছিয়ে নেওয়ার জন্য সাহায্য করছি।
জামির ভাই ঃ এক হিসেবে এটা তোমার বিরাট দায়িত্ব। আমাদের সবার সবারই প্রতি দায়িত্ব আছে। তুমি ঠিকই করছ।
ছোটমিয়া ঃ আজকের এই দিনে আমাদের মা-বোনরা কেউই বসে নেই। যার যা কাজ করে যাচ্ছেন। এতদিন তোমরা ছিলে অন্দরের
কাজ নিয়ে ব্যস্ত, আজ সংগ্রামে তোমাদেরও ডাক পড়েছে।
আজ তোমরাও বেরিয়ে এসেছো বাইরে। আজ তো কোন প্রশ্নই ওঠে না কি করব, কেন করব।
রুস্তম ঃ দেখো ছোটমিয়া। এই লড়াই শুরু হয়ে কতো মানুষ ঘরবাড়ি আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে এসেছে। কতো ভাই ভাইকে হারিয়েছে।
জমির ভাই ঃ ও কথা তুলে মন খারাপ না করাই ভালো, তাই না ছোটমিয়া?
কাজলীর মা ঃ আগে বাপু শোনই কথাটা কি বলতে চাইছে। কথার মাঝে বাগড়া দেওয়া –
ছোটমিয়া ঃ থামো, হয়েছে। রাগ করে জমির ভাইকে এমন করে না ধমকালে হতো না? যাক রুস্তম কি বলতে চাইছো বল তো?
রুস্তম ঃ কি আর বলব, মনটাই খারাপ হয়ে গেল।
কাজলীর মা ঃ ও মা, এতটুকু কথা শুনেই মনটা খারাপ হয়ে গেলে চলবে কি করে রুস্তম। তুমি না সৈনিক, তুমি না লড়াই করো?
জামির ভাই ঃ আমি ওভাবে কথাটা বলিনি ছোটমিয়া। আমি ভাবছিলাম, রুস্তম হয়তো কথার তোড়ে আসল কথাই চাপা দিয়ে দেবে,
তাই বলেছিলাম। যাক রুস্তম বল।
ছোটমিয়া ঃ আচ্ছা এবার বলো রুস্তম। এখন আর অভিমান করার সময় নেই রুস্তম। আর ওটা তোমার সাজেও না। আজ আমরা বাংলার
সাড়ে সাত কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ সংগ্রামে লিপ্ত। কোথাও কোনদিকে চাইবার সময় নেই আমাদের। এখন সোজা কথা বলো,
সোজা কাজ করো। অযথা দুঃখ করে সময় কাটিয়ে লাভ আছে? মনে বল রাখো, বুকে সাহস রাখো, চোখকান খুলে রেখে
লড়াই চালিয়ে যায়।
রুস্তম ঃ হক কথার এক কথা। ঠিকই বলেছ ছোটমিয়া। তাই তো বলছিলাম আমি। আজ ভোরে গাবতলীর মাঠ দিয়ে
কাসিমপুরে
যাচ্ছিলাম। হঠাৎ রাস্তায় দেখা মানকের সাথে। ওই যে মানকে গো-মজিরুদিন লাতিটা।
কাজলীর মা ঃ মজিরুদ্দিন লাতির আবার কি হলো! খুব ভালো লোক-কিছু হয়েছে নাকি?
জমির ভাই ঃ কৈ, আমি তো শুনিনি কিছু হয়েছে নাকি?
রুস্তম ঃ না কিছু হয়নি। আগে কথাটা শুনোই না বাপু, তারপর পিড়িং পিড়িং করো। বাঁধা সারিন্দার তার হাত লাগলেই পিড়িং।
ছোটমিয়া ঃ থামো রুস্তম। কথাটা খুব বেশী হয়ে যাচ্ছে। বলো।
রুস্তম ঃ হ্যাঁ, তারপরে মানকে তো মুষড়ে, মুখটা এতটুকু হয়ে গেছে। জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে তোর। মুখ এমন শুকনো কেন?
বলে কি জানোয়ারগুলো যেখানেই যাচ্ছে সাধারণ পাড়াগাঁয়ের মানুষগুলোকে মেরে খতম করে দিচ্ছে।
ছোটমিয়া ঃ কাপুরুষ শক্তি প্রয়োগ করে নিরহের উপরে। এ জন্যেই আমরা আজ রুখে দাঁড়িয়েছি, মরণপণ করে লড়াই করে যাচ্ছি।
রুস্তমঃ আমিও তাই বললাম। যুদ্ধ করছি, করব, কিন্তু শেখ মুজিব বলেছেন, দেশকে স্বাধীন করবো। তাই স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত
যুদ্ধ আমরা করবই।
জমির ভাইঃ ঠিক বলেছ রুস্তম। গ্রামে গ্রামে আজ এ জন্যেই আমরা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি। যেখানেই দুশমনকে পাও, মারো-
ইদুরের মতো মেরে মেরে খতম করো।
কাজলীর মাঃ এর জন্যই তো খানসেনারা শিবির থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। কখন কোনদিকে মারা পড়ে ঠিক আছে।
ছোটমিয়াঃ মৃত্যুর ফাঁদ পেতে রেখেছে গেরিলাদল। আর সঙ্গে সহযোগিতা করছে বাংলার সংগ্রামী মানুষ। প্রতিটি বাড়ি হয়ে উঠেছে দুর্গ।
প্রতিটি মানুষ হয়ে উঠেছে সৈনিক।
রুস্তমঃ ইয়াহিয়া বুঝতে পারেনি, না বুঝেই ভীমরুলের চাকে ঢিল দিয়েছে। এখন ভীমরুলের কামড়ের চোটে চোখ-মুখ অন্ধকার।
কাজলীর মাঃ এখন তো খান সেনাদের অবস্থা ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি
ছোটমিয়াঃ ভীরু কাপুরুষরা যতো অত্যাচার করছে, আমাদের মানুষের মনে সাহস এবং শক্তি ততোই বেড়ে যাচ্ছে। মানিককে বুঝিয়ে
দিয়েছো তো শয়তান জ্বালাতে পারে, মারতে পারে না। সাড়ে সাত কোটি মানুষ যখন একযোগে লেগেছে-আমরা কামিয়াব
হবোই। বর্বরদের তাড়াবোই আমরা।
জমির ভাইঃ মনে বল ধরতে হবে, আল্লার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে, এবং লড়াই করে যেতে হবে। তাই না?
কাজলীর মাঃ আমারও কথা তাই জমির ভাই।
ছোটমিয়াঃ আজকের সংগ্রামে জনসাধারণের সাহায্য-সহযোগিতা এবং শক্তি সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন এবং সংগে সংগে দরকার অটুট
মনোবল, আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে-আমরা জিতব, জিতব, জিতবই। আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পরিপূরণ হবেই।
রুস্তমঃ মানকেকে খুব বুঝালাম-ছোটমিয়া। তারপরে মানকের সে কি তড়পানি। বলে কিনা, ঠিক বলেছিস রুস্তম লড়াই যখন করছি,
তখন আর ভাবব না, দুশমনকে তাড়িয়ে তবে আরাম করবো। মানকে আবার আশফাক ভাইয়ের কাছে গেলো।
জমির ভাইঃ রক্ষীবাহিনীতে নাম লেখাতে, না?
কাজলীর মাঃ ঠিকই করেছে। পঙ্গুও মনের জোরে পাহাড় ডিঙায়। আর আমাদের তো সবই আছে।
রুস্তমঃ কি ব্যাপার জমির ভাই, কথায় কথায় তোমাদের খেয়ালই নাই।
জমির ভাইঃ কি হলো আবার ?
রুস্তমঃ গান শুনবে না? ছোটমিয়া একটা গান শোনাও।
ছোটমিয়াঃ ওহো, আমারও খেয়াল নেই। আচ্ছা এবার তাহলে একটা গান শোন, দেশাত্মবোধক গান।
(দেশাত্মবোধক গান)
ছোটমিয়াঃ গান তো শোনা হলো, হাতে সময়ও নাই আর-চলো আজকের মতো উঠি।
কাজলীর মাঃ চলো, জমির ভাই, রুস্তম চলো যাই। চলো,
সবাইঃ চলো।
(মুস্তাফিজুর রহমান রচিত)