স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রথম কথিকা
বেলাল মোহাম্মদ
কবির ভাষায়ঃ
‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় রে
কে বাঁচিতে চায়
দাসত্ব শৃংখল বলো কে পরিবে পায় রে
কে পরিবে পায়।’
দাসত্বের শৃংখল ভেঙ্গেছে সাড়ে সাত কোটি বাঙালী। স্বাধীনতাবঞ্চিত জীবন থেকে তারা স্বাধীন জীবনের জয়যাত্রার পথে এগিয়ে চলেছে। এই এগিয়ে চলার পথ দুর্গম, দুর্বার। এই যাত্রাপথে কোনো শাসক-শোষকের দমননীতি, কোনো অশুভ শক্তির বিধিনিষেধ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত জীবনজয়ের অভিযাত্রীদের কে বাধা দেবে? কে এই অভিযাত্রীদের পথ রোধ করে দাঁড়াবে? সেই সাধ্য কারুর নেই, সেই দুঃসাহস দেখাবার সকল ‘পশ্চিম পাকিস্তানী দাপট আজ ছিন্ন-ভিন্ন, পর্যুদস্ত।
ভাবতে অবাক লাগে, তেইশ-তেইশটি বছর কিভাবে সেই তথাকথিত পাকিস্তান সরকার বাংলার মাবোন, বাংলার শিশুবৃদ্ধ, বাংলার কৃষক-শ্রমিক, জেলে-তাঁতী কামার-কুমার-মেহনতি মানুষের ওপর অত্যাচারের ষ্টীম রোলার চালিয়েছে। আমার সন্তানের দুধ ওরা কেড়ে খেয়েছে, আমাদের ক্ষেতের ফসল ওরা লুটে নিয়েছে, ওরা আমাদের মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে, তথাকথিত সংহতির ধুয়া তুলে ওরা আমাদের নিরীহ জনপদের ওপর শাসনের নামে চালিয়ে গেছে শোষণ।
বাংলার মানুষকে ওরা লাঞ্ছনা-গঞ্জনা আর অবহেলা দিয়ে দিয়ে নিজেদের জাতিগত দুশ্চরিত্রেরই পরিচয় দিয়েছে।
আজকের স্বাধীন বাংলার পথে-ঘাটে দেখতে পাওয়া যায় বীর জনতার গড়া স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা। পশ্চিম পাকিস্তানী গুপ্তচর, বর্বর সৈন্যদের প্রত্যেক প্রবেশপথ আজ রুদ্ধ। ওদেরকে যেখানেই দেখা যাচ্ছে, স্বাধীন বাংলা মুক্তিবাহিনীর রাইফেল গর্জে উঠছে, এফোঁড়-ওফোঁড় করে চলে যাচ্ছে বুলেট- আজ ধরাশায়ী হচ্ছে এক-একটি হানাদার দুশমন। ওদের ক্ষমা নেই- ক্ষমা নেই। স্বাধীন বাংলার প্রতিটি গৃহ এক-একটি দুর্ভেদ্য দুর্গ। আমাদের মা-বোনেরাও আর নিক্রিয় হয়ে নেই। প্রত্যেকেই সশস্ত্র। দুশমনকে উচিত সাজা দেবার জন্যে নারী-পুরুষ শিশু-বৃদ্ধ সবাই সদা প্রস্তুত।
বাঙালী আজ জেগেছে। দাসত্বের শৃংখল ভেঙ্গে বেরিয়ে এসেছে তারা –
‘এবার বন্দী বুঝেছে,
মধুর প্রাণের চাইতে ত্রাণ
মুক্তকণ্ঠে স্বাধীন বিশ্বে
উঠিতেছে এক তান;
জয় নিপীড়িত জনগণ জয়
জয় নব অভিযান
জয় নব উত্থান।’
জয় স্বাধীন বাংলা।
প্রচারঃ ২৮-৩-৭১