২৭। হাজীগঞ্জে খানসেনাদের হত্যাযজ্ঞের স্বাক্ষর (৪০২)
সূত্র – সংবাদ, ৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২
হাজীগঞ্জে বর্বর খানসেনাদের হত্যাযজ্ঞের অসংখ্য স্বাক্ষর প্রতিদিনই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে
কুমিল্লা, ৩রা ফেব্রুয়ারী। এ জেলার প্রসিদ্ধ ব্যবসাকেন্দ্র হাজীগঞ্জ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা হতে প্রতিদিন বর্বর পাক বাহিনীর হাতে নিহত মানুষের হাড়, মাথার খুলি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিনই উদঘাটিত হচ্ছে নারকীয় বর্বরতার ভয়াল স্বাক্ষর। ডাকাতিয়া নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত মাকিমাবাদের জলাভূমিতে প্রায় তিনশ মাথার খুলি এবং মানুষের হাড় বিচ্ছিন্ন ভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার একজন প্রতিনিধি জানাচ্ছেন যে, বর্বর হানাদাররা এ অঞ্চলের সন্ত্রাসের রাজত্ম কায়েম করে এলাকাকে কেমন করে ধ্বংস করেছে তার অনেক কাহিনী এখন পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয় হামিদা জুট মিলকে বর্বর পাক পশুরা ৩ হাজার বাঙ্গালী নিধনের বধ্যভূমিতে রূপান্তরিত করেছিল। মিলের পার্শ্ববর্তী কোন স্থানে অবস্থানরত সেকান্দর আলী সংবাদ সংস্থার প্রতিনিধিকে জানান যে, প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে বাঙ্গালী যুবকদের এখানে ধরে এনে সারা রাত পাক পশুরা নির্যাতন চালাত। তারপর তাদের কয়েকজনের হাত-পা একসাথে বেঁধে মৃত বা অর্ধমৃত অবস্থায় ডাকাতিয়া নদীতে ফেলে দিত।
হাজীগঞ্জ থানা প্রধান জনাব হাতেম আলী, একজন প্রত্যক্ষদর্শী আবদুস সোবহান এবং ৭৫ বৎসর বয়স্ক একজন, প্রতিনিধিকে আরো অনেক চাঞ্চল্যকর কাহিনীর কথা জানান। হাজীগঞ্জ থানায় লুটপাট অগ্নিসংযোগ এবং নারী নির্যাতনের কাহিনীর অন্ত নেই। একমাত্র বারকুল গ্রামেই বর্বর বাহিনী এবং তাদের ভাইয়েরা ১২০ জন আবালবৃদ্ধবনিতাকে খুন করেছে। অনেক বালিকাকে পাশবিক অত্যাচার করেছে এবং দালালদের সহযোগিতায় ৪ঠা মে গ্রামটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
এ থানায় এমন কোন গ্রাম নেই বললে চলে, যেখানে অগ্নি সংযোগ, লুট এবং নারী নির্যাতন করা হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে প্রকাশ, মুজাফফরগঞ্জেই বর্বরতা চরম রুপ নিয়েছিল। এখানে এক বাড়ীতে ২ জন রাজাকার একটি বালিকাকে ধর্ষণে প্রবৃত্ত হলে বাড়ীর অন্যান্য লোক তাতে বাঁধা দেয়। পরদিন একদল রাজাকার এবং দখলদার বাহিনীর লোকজন সেই বাড়ী আক্রমন করে ৩৭ জন লোককে হত্যা করে।
শুধু এতেই নিবৃত্ত ছিল না ডাল কুত্তার দল, সেই বাড়ীর ৪টি বালিকাকে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করতে থাকে এবং ৩/৪ দিন পর তাদের মৃতদেহ পাশের একটি খালে ভাসতে দেখা যায়।