আল নোমান
<৬,১০৮,১৭৯>
শিরোনামঃ সম্পাদকীয় (মুক্তিযোদ্ধা লহ সালাম)
সংবাদপত্রঃ সোনার বাংলা (১ম বর্ষঃ ৬ষ্ট সংখ্যা)
তারিখঃ আগষ্ট, ১৯৭১
সম্পাদকীয়
.
মুক্তিযোদ্ধা লহ সালাম
ক্ষুধিরাম, তিতুমীর, সূর্যসেনের জন্মভূমি পদ্মা, মেঘনা, তিস্তা, যমুনা প্রন্তরে এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে ওরা কারা? পশু হানাদার বাহিনীকে সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য কেন ওরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ? মুক্তির নেশায় কেন ওরা পাগল? রক্ত পিচ্ছিল পথে কেন ওরা চলছে। স্বাধীনতা না হয় মৃত্যু কেন ওদের কাম্য?
.
২৫শে মার্চ ১৯৭১ সাল। অবহেলিত বাংলা তথা সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসে সংযোজিত হলো একটি চরম বিশ্বাসঘাতকতার নির্মম ইতিহাস। বিশ্বাসঘাতক ইয়াহিয়ার হানাদার পশুরা স্তব্ধ করতে চাইলো সাড়ে সাত কোটি মেহনতি, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, জনতার কন্ঠস্বর। শহর বন্দর গ্রাম গঞ্জে ওরা চালালো রাইফেল, স্টেনগান, ব্রেনগান, মর্টার, কামান, ট্যাংক লুটিয়ে পড়ল লক্ষ লক্ষ নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের শব। রক্ত আর রক্ত। রক্তের বন্যায় ভেসে গেল সোনার বাংলা। ওরা আগুন জ্বালালো গ্রাম হতে গ্রামান্তরে বাংলার আকাশে বাতাসে গুমরিয়ে উঠলো নারীর আর্তনাদ, সন্তানহারা জননীর বুক ফাটা আকুল ক্রন্দন। অত্যাচার ব্যাভিচার নির্যাতনে নিষ্পেষিত জনতার সঞ্চিত ব্যাথা পুঞ্জীভূত হয়ে আগ্নেয়গিরির মতো ফেটে পড়ল তারই ফলশ্রুতিতে।
.
বাংলার বুকে ২৫শে মার্চের ভয়াবহ কালো রাত্রিতে জন্ম নিল বাংলা মুক্তিবাহিনী। ওরা দূর্বার, বিক্ষুব্ধ বাংলার সংক্ষুব্ধ কৃষক, শ্রমিক ছাত্রজনতা। যেকোন তিতিক্ষার মাধ্যমে গ্রহণ করবে মা বোন ভাইয়ের রক্তের প্রতিশোধ। বাংলার শ্যমল প্রান্তরে তাইতো আজ জেগে উঠেছে বীর বাংলার সংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধা। লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তে সিক্ত পাকিস্তান আজ মৃত। জন্ম নিয়েছে সেই শহীদী রক্তে পৃথিবীর মানচিত্রে একটি নতুন দেশ বাংলা। সৃষ্টি হয়েছে নতুন ইতিহাস। সেই রক্তাত পিচ্ছিল পথে এগিয়ে চলছে বীর বাংলার সংগ্রামী মুক্তি বাহিনী। লক্ষ কোটি মায়ের অশ্রু আজ আশীর্বাদ ওদের, শহীদী রক্তে লাল পতাকা হাতে নিয়ে বিজয়ের জয়মাল্যে ওরা চলছে ওরা চলবে।