১১০। ৩১ অক্টোবর সম্পাদকীয়ঃ বিশ্ববিবেক নীরবতার প্রেক্ষিতে

আল নোমান

<৬,১১০,১৮১>

শিরোনামঃ সম্পাদকীয় বিশ্ব বিবেক নীরবতা প্রেক্ষিতে

সংবাদপত্রঃ সোনার বাংলা (১ম বর্ষঃ ৬ষ্ঠ সংখ্যা)

তারিখঃ আগষ্ট, ১৯৭১

সম্পাদকীয়ঃ

.

বিশ্ববিবেক নীরবতার প্রেক্ষিতে

বিশ্বপলিটব্যুরোর বুড়োদের কি ভিমরতী ধরেছে? বাংলার মুক্তিযুদ্ধ সাত মাস অতিক্রান্ত। শরণার্থীদের সংখ্যা ভারতে দিন দিন বাড়ছেই,  তেমনি বাড়ছে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা তৎপরতা।

.

অনেকেই বাংলার লাল রঙ দেখে গেলেন। শরণার্থীদের বুক ফাটা কান্না শুনে গেলেন। ভালো ভালো কান্নাজড়ানো,  জ্ঞানিকথা কপচানো বিবৃতিও দিয়ে গেলেন। কিন্তু তাদেরকে প্রশ্নঃ এগুলো রসগোল্লা ফিরিস্তি কি সেই জলে পড়া, সাঁতার না জানা সেই হতভাগ্য বালকের প্রতি সেই বুড়োর “জলে নেমেছো ক্যানো বাবা” বলে উপদেশ ঝাড়া নয়? যখন জল থেকে বালককে উদ্ধার করাটা সবচেয়ে প্রথম কর্তব্য তখন এহেন উপদেশ প্রহসন নিশ্চয় নিষ্প্রয়োজন।

.

কিন্তু তাদের কাছে, না কোন আবেদন বা আজ্ঞে হুজুরের নিবেদন নয়।

.

বাঙ্গালী জেগেছে-এ কথাটা এখন পুরনো। বাঙ্গালী কোনদিন ঘুমিয়েছিল এবং নির্যাতিত, শোষিত, লাঞ্চিত বন্দি কি কখনো ঘুমায়- তা তাদের অবশ্যই জানা উচিত। আর যদি ঘুমায় কখনো, তাদের জানা উচিত এ তাদের চির জাগ্রত নিদ্রা। বাঙ্গালী জাতির ইতিহাস চিরকালই ঘুম ভাঙ্গানোর ইতিহাস একটা বিশেষ লাল ঐতিহ্য।

 

.

অতএব তাদেরকে অনুরোধ, তারা আর মিছিমিছি বড় বড় আলোচনা বৈঠক না করে, আশা দিয়েও আর হতাশ করবেন না। এত রক্ত, এত শহীদানের পর পাকিস্তানের ক্রমেই বাংলাকে বেঁধে রাখার অপচেষ্টা করে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনকে বিলম্বিত করবেন না।

.

আমাদের এ যুদ্ধ আমাদের প্রিয়তম নেতার সুরে সুর মিলিয়ে বলি- এ সংগ্রাম মুক্তি রসংগ্রাম, এ সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। চলছে, চলবে।

.

তবে হ্যাঁ বিশ্ববিবেকের ধুয়া তুলে, শুধু কথা এবং আশা দিয়ে নয় আসুন আমরা সবাই মিলে, কি হিন্দু কি মুসলিম, কি খৃস্টান সব সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে উঠে নির্বিশেষ আমাদের এই মহৎ সংগ্রাম যাতে আরো এগিয়ে যায় তার পথকে সুগম করার চেষ্টা করি।

Scroll to Top