১১৩। ১৭ সেপ্টেম্বর সম্পাদকীয়ঃ সংগ্রামী নেতৃবৃন্দের প্রতি

সৌ রভ

<৬,১১৩,১৮৫-১৮৬>

শিরোনামঃ সম্পাদকীয় ( সংগ্রামী নেতৃবৃন্দের প্রতি)

সংবাদপত্রঃ বাংলার মুখ (১ম বর্ষঃ ৬ষ্ঠ সংখ্যা)

তারিখঃ ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

.

                                                সংগ্রামী নেতৃবৃন্দের প্রতি

বাংলার সংগ্রামী সাড়ে সাত কোটি মানুষ আজ এক গুরুত্বপূর্ণ  ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়েছে। সাম্প্রতিক সর্বদলীয় ঐক্যফ্রন্ট স্বাধীনতার সংগ্রামে এক নতুন মোড় দিয়েছে। নতুন রূপ পেয়েছে সংগ্রামী আন্দোলন। এর সাথে সাথে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্বেও বাংলাদেশ এক নতুনতর, উজ্জ্বলতর রূপ পেল। বিশ্বের বুকে একটি বলিষ্ঠতম জাতি হিসাবে, ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের প্রতীক হিসাবে বাংলাদেশ শীর্ষ সম্মানের, উপযুক্ত মর্যাদার দাবীদার। সাম্রাজ্যবাদ, মানবতাবিরোধী চক্রকে নস্যাৎ করার ব্যাপারে, উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য এ সূচনা নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করলো।

.

পক্ষান্তরে বাংলার সংগ্রামী জনগন অতি গভীর আগ্রহভরে লক্ষ্য করেছে যে, তাদের নিয়ে তাদের জীবন নিয়ে, মান-ইজ্জত নিয়ে লোলুপ সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী, মানবতা বিধ্বংসী চক্র নতুনভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তাদের এই ষড়যন্ত্র দিনের পর দিন অতি সূক্ষ্মতর পদ্ধতিতে জাল বিস্তার করে চলেছে। আগামী দিনের বাঙ্গালী জাতিকে পঙ্গু করার জন্য, বিধ্বস্ত করার জন্য, পদানত করে রাখার জন্য এই ষড়যন্ত্র সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছে। অতি দুঃখের সাথে সাড়ে সাত কোটি মানুষ এও লক্ষ্য করেছে যে, এই ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠীর সাথে বাংলার মীরজাফরের দল তলে তলে কাজ করে যাচ্ছে। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যে ও একটি জাতিকে সমূলে নষ্ট করার জন্য তাদের এই হীনতম কাজ অতি জঘন্য ও ঘৃণ্য।

.

এদিকে জাতীয় নেতৃবৃন্দ এই চক্রান্তকারী গোষ্ঠী সম্পর্কে সচেতন থাকলেও এই হীন, জঘন্যতম প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করার ব্যাপারে কোন বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে এগিয়ে আসছেন কিনা তা বাংলার জনগণের জানা নেই।

কুখ্যাত জামাতে ইসলামী, মুসলিম লীগ এবং তাদের লেজুড় রাজাকার বাহিনীকে বাংলার সোনার মাটি থেকে আগাছার মত উপড়ে ফেলার কর্মসূচী বাস্তবায়িত হচ্ছে, এ বড় আনন্দের কথা। কিন্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের নামে তলে তলে একশ্রেণীর ছদ্মবেশী কাজ করে যাচ্ছে এবং সমাজের শীর্ষস্থান থেকে তাদের কাজের গতিধারা প্রতিটি সচেতন ও স্বাধীন বিবেকসম্পন্ন নাগরিককেই ব্যথিত করে তুলেছে।

.

স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাথমিক পর্যায় থেকে আজ পর্যন্ত কিছুসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষক বাংলাদেশ থেকে বাইরের বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। অতি সাম্প্রতিক কালের একটি খবরে জানা যায় যে, আমেরিকার একটি বিশেষ ফাউণ্ডেশন তাদের “ সাময়িক আর্থিক” সাহায্যদানে সাড়ে সাত লক্ষ টাকা দান করেছে। এই দানের কারণ হিসাবে জেনারেল ইয়াহিয়ার অত্যাচার, নির্যাতনের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অতিসাধারণ সচেতন নাগরিকও জানেন যে, আমেরিকা এই প্রশাসনে তথাকার কুখ্যাত গোয়েন্দা বিভাগের পরেই প্রভাব বিস্তার করেছে। যে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী প্রশাসন বাংলার বুকে হত্যালীলার, বাংলাকে বিধ্বস্ত করার কাজে জেনারেল ইয়াহিয়াকে সরাসরি সমর্থন এবং প্রয়োজনীয় আর্থিক ও অস্ত্র সাহায্য দিয়ে আসছে তারই অঙ্গ হিসাবে এই ফাউণ্ডেশন বাংলার শিক্ষাবিদ, পণ্ডিতদের গবেষণায় আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে। আর এইসব হতভাগ্য গবেষণাবিশারদরা, পণ্ডিতরা ইতিপূর্বেই সাম্রাজ্যবাদ গোষ্ঠীর দালালী করেছে, ক্রীড়নক হিসাবে কাজ করছে, এ কথা সর্বজনবিদিত। আজ তারা বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ দূরে থাকুক, যারা স্বাধীনতাকে নস্যাতকরার জন্য, হত্যাযজ্ঞকে ব্যাপকতর করার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে তাদেরই অর্থানুকূল্যে বিলাসপূর্ণ জীবনযাপন করার কাজে উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের এই জীবন- ঐতিহ্য, বহু পুরনো। বাংলার সংগ্রামী জনতা, জননেতা তাদেরকে ভালো করেই জনেন। কিন্ত আজ পর্যন্তও এইসব জাতি বিধ্বংসীদের ব্যাপারে কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি। আজো যদি করা না হয় তা হলে বাংলার আগামী দিনের স্বাধীনতা কোন পথে মোড় নেবে তা প্রত্যেকের জানা আছে।

Scroll to Top