১৩৪. ৬ সেপ্টেম্বর সম্পাদকীয়ঃ মালিক সাবধান!

জেসিকা গুলশান তোড়া

<৬,১৩৪,২২১>

শিরোনামঃ সম্পাদকীয় মালিক সাবধান

সংবাদপত্রঃ জন্মভূমি ১ম বর্ষঃ ৭ম সংখ্যা

তারিখঃ ৬ সেমটেম্বর, ১৯৭১

সম্পাদকীয়

[জন্মভুমিঃ সাপ্তাহিক। বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণের বিপ্লবী মুখপত্র। সম্পাদকঃ মোস্তাফা আল্লামা। জন্মভূমি প্রেস এন্ড পাবলিকেশনের পক্ষে সম্পাদক কর্তৃক রবীন্দ্র এভিনিউ, মজিবনগর, বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত বিদেশস্থ প্রধান যোগাযোগ অফিসঃ ৩৩/২ শশীভূষন দে ষ্ট্রীট, কলিকাতা-১২।]

.

মালিক সাবধান!

.

বঙ্গবন্ধু প্রায়শই একটা কথা বলতেন, “পাকিস্তানের ২৪ বছরের রাজনীতি-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। ” কথাটা এতই সত্য যে, তা আর বিশ্লেষণ করে দেখানোর প্রয়োজন হয় না। বাঙ্গালীদের শাসন আর শোষণ করার জন্য সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদেও পা-চাটা পশ্চিম পাকিস্তানী কুকুরেরা না করেছে হেন কুকর্ম এবং হেন ষড়যন্ত্র নেই।

.

খান সেনাদের মধ্যে অত্যন্ত নরমপন্থী বলে ধিকৃত ভাইস এডমিরাল এম. এস. আহসান পূর্ব পাকিস্তানকে দমন করতে পারছেন না বলে চট করে রাজ্যপালের গদি থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হলো।

.

অপরদিকে নৃশংস হত্যাকারী নামে পরিচিত কুখ্যাত টেক্কা খাঁকে পূর্বাঞ্চলে পাঠানো হলো প্রধান সামরিক প্রশাসক করে।

.

কিন্তু লক্ষ লক্ষ লোক হত্যা করেও টেক্কা খাঁ যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে স্তব্ধ করে দিতে ব্যর্থ হলো, পক্ষান্তরে মুক্তিযোদ্ধাদেরও আক্রমণ প্রচন্ডতর হতে শুরু করল, তখন শুরু হলো আর এক ষড়যন্ত্র।

.

ভোল পাল্টালো জঙ্গীশাহী। বাঙ্গালীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার, সঙ্গত আচরণ এবং তাদের মঙ্গল বিধানের জন্য টেক্কার পরিবর্তে দেবদূতের মত আবির্ভূত হবেন ডঃ এ, এম, মালিক।

.

ডাক্তার সাহেব, আপনি আর যেখানকার মালিক হোন না কেন, বাংলাদেশের মালিক আপনি নন।  নুরুল আমীনের মত ধুরন্ধর রাজনীতিক, মোনেম খাঁর মত পশ্চিমা প্রভুর জুতোবাহী গর্দভ পর্যন্ত এই গদিতে বসার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সচেতন। অতএব যদি ভালো চান তো গদির মোহে পড়বেন না। কেন না, মুক্তিবাহিনীর কালো খাতায় আপনার নামটি বহু আগে থেকেই বড় হরফে স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে। সুতরাং ডঃ মালিক সাবধান!

.

এহেন অবস্থায়, আপনি যদি অকালে আপনার পৈত্রিক প্রাণটা হারাতে না চান তাহলে কালক্ষেপণ না করে বাংলাদেশ ছাড়ুন। অন্যথায় বাংলাদেশে অবস্থানকারী প্রতিটি পশ্চিম পাকিস্তানীর মত আপনার ভাগ্যেও নিশ্চিত মৃত্যু।

Scroll to Top