শাহজালাল
<৬,১৬৪,২৭৬-২৭৭>
শিরোনাম | সংবাদপত্র | তারিখ |
শেখ মুজিবের বাংলাদেশ ইন্দিরার ভারত একযোগে রুখিয়া দাঁড়াও | বাংলার বাণী
মুজিবনগরঃ ১৫শ সংখ্যা |
৭ ডিসেম্বর , ১৯৭১ |
শেখ মুজিবের বাংলাদেশ
ইন্দিরার ভারত একযোগে রুখিয়া দাঁড়াও
দুশমনকে খতম করো
(রাজনৈতিক সংবাদদাতা)
গান্ধী – নেহেরু – নেতাজী- ইন্দিরার মহান ভারত শেখ মুজিবের স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করিয়াছে। ভারত আর বাংলাদেশ আজ দুইটি স্বাধীন সার্বভৌম প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র একই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ আর সমাজতান্ত্রিক আদর্শের যুগল পূজারী আদর্শ আর আত্মার নিবিড় ঐক্যসূত্রে গাঁথা শেখ মুজিবের বাংলাদেশ আর ইন্দিরার ভারত আজ একই পররাজ্যলোভী জল্লাদ ইয়াহিয়ার হিংস্র আক্রমণের সম্মুখীন। এই আক্রমণ বাংলাদেশ আর ভারতের ৬২ কোটি মানুষের উপর। তাই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আর ইন্দিরার ভারতকে আজ একযোগে রুখিয়া দাড়াইতে হইবে। ঐক্যবদ্ধ আঘাতের নির্মম প্রচণ্ডতায় দুশমনকে চিরতরে নির্মূল করিয়া দিতে হইবে। শত্রুকে এমন শিক্ষা দিতে হইবে যেন কোনদিন আর কোন উন্মাদ জঙ্গীবাজ বাংলাদেশ বা ভারতের মাটিতে হামলা করিতে সাহস না পায়।
এতদিন যুদ্ধ চলিতেছিল বাংলাদেশ ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে। কিন্তু বীর প্রসবিনী বাংলার দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে পিছু হটিতে হটিতে সুনিশ্চিত পরাজয়ের আতঙ্কগ্রস্ত বেসামাল জঙ্গীশাহী বিশ্ব জনমতকে বিভ্রান্ত করার জন্য ভারতীয় আক্রমণের ধুয়া তুলিয়া ভারতের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। ভারতীয় সেনাবাহিনী পিণ্ডচক্রের এই নগ্ন হামলার জবাবে প্রচণ্ড প্রত্যাঘাত হানিয়াছেন। বাংলাদেশেও মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থনে ভারতীয় বিমান বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে বাংলাদেশের শত্রু অধিকৃত অঞ্চলে শত্রুর বিমান বহর বিধবস্ত হইয়া গিয়াছে। মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র সেনাবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া ঝড়ের মত অগ্রসর হইয়া চলিয়াছেন।
পিণ্ডির জঙ্গীচক্রের যুদ্ধের খায়েশ ইতিমধ্যেই চরিতার্থ হইয়াছে কিনা জানা যায় নাই, কিন্তু দীর্ঘ আট মাস পূর্বে নিহত পাকিস্তানের লাশ বুকে জড়াইয়া জঙ্গীচক্র এখন সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহের দ্বারে দ্বারে পদলেহী কুকুরের মত ঘুরিয়া বেড়াইতেছে।
বিশ্বের হীনতম সাম্রাজ্যবাদ, মানবতার ঘৃণ্য শত্রু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এইবার তাহার মুখোশ খুলিয়া ধরিয়া আপন মূর্তিতে নামিয়াছে। নিপীড়িত নির্যাতিত মানবতার তথাকথিত বন্ধু গণচীনও সাম্রাজ্যবাদী মার্কিনীদের এই সাপ নাচানো বাঁশীর সুরে মোহিনী সাপিনীর মত নাচিতেছে।
জাতিসংঘে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও চীন একযোগে ভারত উপমহাদেশে যুদ্ধিবিরতি ঘোষণার জন্য প্রস্তাব আনিয়াছিল।
সোভিয়েত ইউনিয়ন সাম্রাজ্যবাদী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর এই চক্রান্ত ব্যর্থ করিয়া দিয়াছে।
অপর দুই স্থায়ী সদস্য বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়া নিরপেক্ষতা অবলম্বন করিয়াছেন। এই দুটি দেশ অর্থাৎ ফ্রান্স ও বৃটেন বর্তমান মুহূর্তে সম্ভবতঃ অত্যন্ত সাবধানতার সহিত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করিয়া চলিয়াছে।
আমরা জানি, বিশ্বের সরকারসমূহ যতই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করুন না কেন, সমগ্র বিশ্বের শান্তিপ্রিয় ও গণতন্ত্রকামী জনগণ বাংলাদেশের জনগণের এই ন্যায় সংগ্রামকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানাইয়াছেন। এই সমর্থন লাভ করিবার অধিকার বাংলার জনগণ অর্জন করিয়াছেন। বাংলাদেশের মরণজয়ী মানুষেরা চরম আত্মত্যাগ ও রক্তাক্ত সংগ্রামের মাধ্যমেই এই সমর্থন লাভ করিয়াছেন। বিশ্বের স্বীকৃতিও বাংলার জনগণ এই উপায়ে অর্জন করিবেন। আর সেই দিনটিও খুব বেশী দূরেও নয়।
কিন্তু আজ শুভদিনেও যে কোন বাঙ্গালীর চিত্ত বেদনায় বিপন্ন। বাংলার প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজও শত্রুর কারাগারে। তার কারামুক্তি আর শত্রু স্বাধীন বাংলার জয়জয়ন্তী ত্বরান্বিত করার জন্যই আজ প্রচণ্ডতম শক্তিতে দুশমনের উপর ঝাঁপাইয়া পড়িতে হইবে- রুদ্ধ করিয়া দিতে হইবে শত্রুর পলায়নের সকল পথ।