২৯৩. ২৭ অক্টোবর মুজিবনগর সমাচার

অনুবাদঃ অভিজিৎ সরকার

<৬,২৯৩,৫০৫>

শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ
মুজিবনগর সমাচার বাংলাদেশ

খণ্ড ১: নং ১৮

২৭ অক্টোবর, ১৯৭১

 

মুজিবনগর থেকে

বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ফেডারেল প্রজাতন্ত্রী জার্মানির চ্যান্সেলর জনাব উইলি ব্র্যান্ডট্‌ এর কাছে নিম্নলিখিত টেলিগ্রাম পাঠিয়েছেন।

“আপনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জেনে খুবই আনন্দিত হলাম। আমার এবং বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন গ্রহণ করুন। আশা করছি আপনি সারা বিশ্বব্যাপী শোষিত-নিপীড়িত মানবতার পক্ষে থেকে শান্তির বাণী প্রচারে কাজ করে যাবেন।”

কোন “অনুপ্রবেশকারী” নেই

ইরানে সোভিয়েত রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাতে এবং ১৮ অক্টোবর, ১৯৭১ তারিখে করাচিতে এক ফরাসি সাংবাদিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইয়াহিয়া খানের “ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীরা বাংলাদেশের ভেতরে যুদ্ধ করছে” এরূপ বক্তব্যের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক কর্নেল এম এ জি ওসমানী, এম এন এ বলেন,

“আসল ইস্যুকে বিভ্রান্ত করার জন্য জেনেশুনে এভাবে সত্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে – আসল ইস্যুটি সাত কোটি বাংলাদেশী জনগণ এবং ইসলামাবাদের অবৈধ সামরিক শাসনের মধ্যে, যেখানে সার্বভৌম মানবাধিকারকে উপেক্ষা করে গণহত্যা, ধর্ষণ, দমন-পীড়ন এবং উৎখাত করা হচ্ছে, এর সাথে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের কোন সম্পর্ক নেই। এটা আশা করা অনুচিত যে, “অনুপ্রবেশকারীরা” ইয়াহিয়ার ২৫০০০ এরও বেশি অস্ত্রসজ্জিত হানাদারদের শেষ করবে, সমগ্র বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক সমর্থন পাবে যারা জাতিগত এবং রাজনৈতিকভাবে একক জাতি গঠন করেছে এবং স্বাধীনতা ও মানবাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সব কিছুর বিরুদ্ধে সাহসের সাথে লড়াই করছে। সত্যি বলতে, মুক্তিবাহিনীতে সামরিক-আধাসামরিক বাহিনী সদস্যদের পাশাপাশি সর্বস্তরের বেসামরিক সদস্যও রয়েছে, রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র থেকে শুরু করে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের কৃষক-শ্রমিক, যারা দৃঢ় মনোবল, সাহস এবং লক্ষ্যের প্রতি অটুট বিশ্বাস নিয়ে লড়াই করছে; তাদের যুদ্ধ সত্য ও ন্যায়ের, ঘৃণ্যতম ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্তির যুদ্ধ। এ জন্যই অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রসজ্জিত হয়ে অনেক এগিয়ে থেকেও শত্রুরা বেপরোয়াভাবে এ লড়াই লড়ে যাচ্ছে যাতে তারা নিশ্চিত হেরে যাবে। মরিয়া হয়ে ইয়াহিয়া সমস্যাটিকে আন্তর্জাতিকীকরণ করতে এবং আশু লজ্জাস্কর পরাজয় থেকে তাঁর দলকে বাঁচাতে শেষ চেষ্টা করছেন।”

Scroll to Top