কম্পাইলারঃ দীপংকর ঘোষ দ্বীপ
<৬, ৩০, ৬১৩>
শিরোনামঃ কোন আপোষ নয়
সংবাদপত্রঃ জনমত* ৩য় বর্ষঃ ৪০ তম সংখ্যা
তারিখঃ ২১ নভেম্বর, ১৯৭১
.
[ * জনমতঃ সাপ্তাহিক। প্রধান সম্পাদকঃ এ, টি, এম ওয়ালী আশরাফ। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ আনিস আহমদ, জনমত পাবলিশার্স লিমিটেড, ২ টেম্পারলে রোড, লন্ডন থেকে প্রকাশিত। ]
কোন আপোষ নয়
বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে এসেছে । আরও আসছে এবং আসবে । সেদিনের বিক্ষিপ্ত মুক্তিসেনারা আজ এক সুসংগঠিত আদর্শবান মুক্তিবাহিনীতে পরিণত হয়েছে । তাঁদের লক্ষ্যঃ এক । মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করা । দখলকারী বাহিনীকে পরাভূত করে মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষা করা হলো তাদের আদর্শ । সেই আদর্শে ব্রতী হয়ে লক্ষ লক্ষ কিশোর-যুবক অস্ত্র হাতে নিয়েছেন, শত্রুর সংগে লড়াই করছেন । দেশের ভিতর থেকে সাধারণ মানুষ তাদের সমর্থন করছেন । দেশের ভিতরের মানুষের সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতা মুক্তিসেনাদের কাজে সুবিধা করে দিয়েছে অনেক । সেই সুবিধে আছে বলেই মুক্তিসেনারা খুব সহজেই শত্রুদের কাবু করতে পারছেন । সারা বাংলায় শত্রুরা আজ নাস্তানাবুদ, ঘায়েল হয়ে গেছে আক্রমণকারী বাহিনী । সেদিন বেশী দূরে নয়, যেদিন বাংলার লক্ষ লক্ষ মুক্তিসেনারা তাঁদের সামরিক লক্ষ্যস্থল ঢাকার দিকে দূর্বার গতিতে অগ্রসর হবে- সে জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি চলেছে সেই ‘চলো চলো-ঢাকা চলো’ অভিযান পরিচালনার জন্য । আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা তার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত ।
ঠিক এই যখন পরিস্থিতি তখন বিশ্বের নানা স্থান থেকে কুটনৈতিক চাপ পড়েছে সংশ্লিষ্টদের ওপর-আপোষের জন্য । বিশ্বের বিভিন্ন সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন পথে চাপ দিচ্ছেন । পত্রান্তরে প্রকাশ, শুধু পাকিস্তানের ইয়াহিয়াকেই নয়, আপোষের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের উপর পরোক্ষ চাপ দেওয়ার জন্য ভারত সরকারকেও চাপ দিচ্ছেন ।
কিন্তু কিসের আপোষ ? কার সংগে আপোষ ? কেন সে আপোষ ?
আমরা, সাড়ে সাত কোটি মানুষ-বাংলাদেশের অধিবাসী । আমরা অধিকার আদায়ের সংগ্রামে লিপ্ত ছিলাম । ২৩ বছরেও তা পাইনি । আর পেতে চাই না । আমরা এখন চাচ্ছি পুনর্দখল । স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হচ্ছে আমাদের মাতৃভূমি । আক্রমণকারী পাকিস্তান সৈন্যবাহিনী হটকারিতা ও অস্ত্রের বলে দখল আদায় করবো । এই পথে কোন আপোষ নেই । রাশিয়া, আমেরিকা, বৃটেন, গণচীন, পশ্চিম জার্মানী ও যে কোন দেশই হোক না কেন-তারা যদি ইয়াহিয়াকে আপোষের পরামর্শ দিয়ে থাকে-দিক । আমরা তাতে সংশ্লিষ্ট নই । আমরা মাতৃভূমির মুক্তি সংগ্রামে লিপ্ত-মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব । আমাদের সংগ্রামের ক্ষতি করে এমন কোন প্রস্তাব যাঁরা করবেন-তাঁদেরকে আমাদের শত্রুর সহযোগী বলে আমরা ধরব ।
ভুট্টোকে পিকিং কি বলেছে জানি না, সুলতান মোহাম্মদকে উথান্ট কি বলেছে জানতে চাই না, মিসেস গান্ধীকে পশ্চিমা নেতারা কি বলেছেন-শুনতে রাজী নই । আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবো-আমরা, এ কথাটা সকলের অবগতির জন্য আমরা আবার পরিষ্কার ভাষায় প্রকাশ করছি । কত বছর যুদ্ধ চলবে-সে হিসাব এখন করব না । শত্রুদের বিতাড়িত করার পর সে হিসেব হবে-কতদিন লাগলো । বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়ে খেয়াল রাখবেন বলে ‘জনমত’ আশা করে ।