অনুবাদঃ আহসানউল্লাহ
<৬,৩১৩,৫৪১-৫৪২>
শিরোনামঃ স্পষ্ট ভাষণ
সংবাদপত্রঃ দ্যা নেশন ভলিউম ১ নং ২
তারিখঃ ৮ অক্টোবর, ১৯৭১
.
স্পষ্ট ভাষণ
.
দক্ষিণ ভিয়েতনাম নামের মাই লাই নামের ছোট্ট একটি গ্রামে যে মানবিকতার দুঃখজনক ঘটোনা ঘটেছিল তার পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশের অসংখ্য গ্রামে করেছিল বর্বর পাক সৈন্যরা । শুধুমাত্র গভীরভাবে দেখা বা পর্যবেক্ষণই নয় বরং বিভিন্ন রাজনৈতিক গবেষণায়ও এর প্রমাণ মিলে । এটা বিশ্বব্যাংকের অর্থনৈতিক গবেষকদেরও পর্যবেক্ষণ । বিশ্বব্যাংক পাকিস্তানকে একটি বৃহৎ ঋণ দিয়েছিল উন্নয়ন প্রকল্পের স্বার্থে । তারা একটি পর্যবেক্ষণ দল পাঠিয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে দশজনেই রিপোর্ট করেছিলেন যে জরুরি ভিত্তিতে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে
যেন ত্রাণ তুলে নেওয়া হয় । সেই দলিল খুব সহজেই প্রমাণ করে পাকিস্তানিদের সেই অর্থনৈতিক দুর্নীতির যার খুব পরিষ্কার মিল রয়েছে মাই লাই এর । সেই দলিল এতটাই প্রমাণ বহুল এবং সঠিক ছিল যে তাতে মন্তব্য বা সন্দেহের কোনো অবকাশই থাকে নাহ । সেই দলিলের মূল ভাবার্থ আমাদের এটাই বলে যে , সেই তথ্য গুলো কখনোই জিজ্ঞাসাবাদ,বাস্তব ভ্রমণ বা সঠিকভাবে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে করা যায় নি ।অনেক ধরনের তথ্য,প্রমাণ এবং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তা করা হয়েছিল । ব্যাংকের স্বার্থে তাদের জন্য এটা খুবই কঠিন কাজ ছিল এবং এটা বলা যায় যে সঠিক ব্যবস্থার অভাবে অনেক সমস্যার পর আমরা তার একটা সঠিক রূপ এবং পরিস্থিতি দলিলের মাধ্যমে তুলে ধরতে পেরেছি । এমন কিছু তথ্য (যা সৈনিকরা খুব সমস্যা করে আমাদের মধ্যে পোঁছাতে চায় নি অথবা কোনো অফিসিয়াল স্ট্যাট্মেন্ট দেয় নি ) যেগুলোর সমাধান হিসেবে আমাদের পূর্ব বাংলার আসল বর্ণনা দেখতে হয়েছে কাছ থেকে উপলব্ধি করতে হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য সূত্র হতে শুনতে হয়েছে এবং নিজেদের পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছে যা আমরা লিখে রেখেছি বা মনে করে নিয়েছি । সেই অবস্থার হিসেবে বিশ্বব্যাংক বলে এটা অবশ্যই স্বাভাবিকতার বাইরে ছিল এবং স্বাভাবিকভাবে পূর্ব বাংলার দিকে এগুনোর জন্য কোনো অফিসিয়াল স্বাক্ষর বা ব্যাপার ছিল নাহ । দু দেশের এই চিত্রকে বদলানোর জন্য সত্যি দুটো বিষয়ের উপর জয়ী হয়া বা সেগুলো বন্ধ করার প্রয়োজন ছিল ,
১। জনসংখ্যাবহুল এলাকা হয়া সত্ত্বেও সাধারণ ভীতি এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব ।
২।সম্পূর্ণ আলাদা যোগাযোগব্যস্থা এবং মূল ব্যাপারটি হচ্ছে জনগণের যাতায়াত এবং ধর্ম বর্ণ ও জিনিসপত্রেও দুটো অঞ্চলে আদান প্রদানের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি ।
.
বর্তমানের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে , এটা বলা সম্ভপর না যে খুব সহজেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা সম্বলিত পুরোপুরি নিয়মতান্ত্রিকভাবে একটি স্বাভাবিক দেশের অগ্রসর হবে । যাই হোক এই ব্যবস্থা চালু করতে হলে আরো অরো অনেকগুলো নিয়মের সন্নিবেশ করতে হবে যেকোনো বিষয়েই বা হোক সেটা ।
প্রথমত এটা খুবই দুঃখজনক যে এ অগ্রসর ও স্বাভাবিক নাগরিক জীবন ততদিন হবে না যতদিন পূর্ব বাংলায় সৈন্য শাসন চলবে এবং তাদের অনৈতিক কাজ অবিরত থাকবে ।
দ্বিতীয়ত খাদ্য সমস্যার অবশ্যই সমাধানের প্রয়োজন ।বরতমানের সাপেক্ষে এই সমাধান বলতে বোঝায় আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের পর্যাপ্ত খাদ্যের মজুদ এবং উপযুক্ত বণ্টন ব্যবস্থা ।
তৃতীয়ত যে সকল সাংঠনিক এবং শারীরিক কর্মকাণ্ড এখনো অসম্পূর্ণ রয়েছে তা পুরনো কায়দা ও ধরন ভেঙ্গে নতুন ধারায় নতুন আঙ্গিকে করতে হবে যেন হারানো অর্থনৈতিক ভারসাম্য আবার পুনরায় ফিরিয়ে আনা যায় ।