৩১৯. ২২ অক্টোবর আপাতঃ দৃষ্টিতে

অনুবাদঃ পূজা পলি

<৬, ৩১৯, ৫৫১>

শিরোনামঃ আপাতঃ দৃষ্টিতে

সংবাদপত্রঃ দি নেশন ভলিউম ১ নং ৩

তারিখঃ ২২ অক্টোবর, ১৯৭১

.

ইয়াহিয়া খানের একত্রে ত্রৈধ পৈশাচিক আক্রমণ আর অমীমাংসিত নাটকীয় ঘটনাগুলো ক্রমশ এসোপ্’স ফেবলস্-এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। রূপকথার গল্পের নিবিষ্টতায় ইতিহাসের কাল্পনিক নায়কেরা নিশ্চয়ই তাদের কম বয়েসী মনটাকে প্রভাবিত করছিল।তাই হয়ত তারা নিজেদের অপরিণত বয়েস ভুলে গিয়েছিল। টারজানের সেই বাষ্পীভূত করার মত প্রকান্ড শক্তি তাদের মনকে প্রভাবিত করেছিল,সেই সাহসিকতার সাথে তারা বেড়ে উঠল আর ভাবল তারাও সেইসব নায়কদের মত। কিন্তু ইয়াহিয়া তার এসোপ্’স-এর জাল এবং অকল্পনীয় হীন আচরণ সীমালঙ্ঘন করলেন।

ইয়াহিয়া খান “তিনের ভেতর এক” একত্রিত করে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে এক প্রহনসনমূলক বিচারকার্য শুরু করলেন।তিনি সব সরকারি উকিল,বিচারক এমনকি শাস্তি স্থগিতাদেশের উপরও হস্তক্ষেপ করলেন।

তার জীবদ্দশায় তিনি জাগতিক পৃথিবীতে নোংরাভাবে সুপারম্যানের চরিত্রে প্রকাশিত চেয়েছেন তার অতিপ্রাকৃত কাজের মাধ্যমে,বাংলাদেশের শিশুদেরকে রূপকথার হিরোদের স্মরণে আনার জন্য তার প্রতিহিংসাপরায়ণ কাজই যথেষ্ট।

নিঃসন্দেহে,তিনি একজন কৌতূহলী চরিত্র ছিলেন।তিনি কেবলমাত্র একজন অদ্ভূত অদ্বিতীয় খলনায়কই নন,তিনি এখন পর্যন্ত বইয়ে প্রকাশিত অন্যসব দৈত্য-দানবের চেয়েও হিংস্র।তিনি নিষ্ঠুর,অমার্জিত এবং রূঢ়।আর সেই সাথে নরম্যানদের চেয়েও বেপরোয়া।ইতিহাসের নিকৃষ্টতম বর্বরতা সাধন করেও তখনও তারা উচ্চ পদমর্যাদায় ছিলেন।

২৬ মার্চ,তিনি আদালতে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলেন এবং কোর্ট মার্শালের হুমকি দেন।সামরিক সৈন্য নিবাস থেকে তিনি সেই কোর্ট-মার্শালের বিচারক হিসেবে নিজেই নিজেকে নিয়োগ দিলেন।আরও যথাযথ এবং স্পষ্টতায় বলা যায়,ইয়াহিয়া তার আদেশ এবং ইচ্ছায় সামরিক বিচারক নিয়োগ হয়েছেন আর সেটাই সত্যি হল।লাহোরের উর্দু দৈনিক’ইমরোজ’-এর বক্তব্য অনুসারে, সামরিক আদালত মুজিবকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার জন্য সুপারিশকৃত, কেবল এই নয়য়,এই প্রহসনের বিচারকার্য শেষ হবে তখনি যখন তিনি ‘ আল- আহরাম’ উচ্চারণ করবেন।কিন্তু তারা ভাবেনি কোর্ট মার্শালের পরও মুজিব বেঁচে থাকবেন।

.

কিন্তু হাওয়া ভিন্নদিকে বইল,ইয়াহিয়ার খুনের নীল নকশার বিপরীতে বিশ্বনেত্রীবৃন্দ জোরাল প্রতিবাদ জানাল।এবার ইয়াহিয়াও ভিন্নসুরে কথা বলতে লাগলেন।মুজিবের মৃত্যুদন্ডাদেশ স্থগিত করলেন।বিশ্বাসযোগ্য সূত্র জানাল,চিঠি ইতিমধ্যেই আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছে গিয়েছে এবং তাতে মুজিবের জীবনের নিরাপত্তার কথা নিশ্চিত করা হয়েছে।

.

এরপরই যুদ্ধের গুনটানা শুরু হয়ে যায়,সেই মুকুটহীন রাজার বিরুদ্ধে তার অমানবিক হত্যার পরিকল্পনায় সমগ্র বিশ্বের বৈপরীত্য ছিল।এই অমানবিকতা শুধুই ছিল বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে। অবশ্যই মুজিবের জীবন সুরক্ষিত হলো।পৃথিবীরআর কোন শক্তি এ সত্যকে বদলাতে পারবে না।

Scroll to Top