অনুবাদঃ ওমার ফাইলাসূফ
<৬, ৩৮, ৬৩৬-৬৩৭>
শিরোনামঃ সম্পাদকীয়
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ* নিউ য়র্কঃ নং ৩
তারিখঃ ১৬ জুন, ১৯৭১
.
[ * বাংলাদেশ’ বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা শাখা কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রচারিত। সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি কে. এম. আলমগীর। ]
.
সম্পাদকীয় ২৬ মার্চ রাতে ভুমিষ্ট হওয়া আমাদের দেশটি অসম্ভব বেদনাদায়ক এবং কষ্টকর একটি সময় পার করছে। বাস্তবতার সকল বিবেচনায়, একক রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের অস্ত্বিত্বের কবর রচনা হয়ে গেছে। অনেক ত্যাগ ও তিতীক্ষার বিনিময়ে অভ্যুদয় হওয়া বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি ক্রমশ তার ভূমিতে একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেছে। এর মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানের ফ্যাসিস্ট শাসক ইয়াহিয়া খানের সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক দীর্ঘ ও প্রত্যাশিত যুদ্ধের অবতারনা হলো। ইয়াহিয়া খানের এজেন্ট টিক্কা খান এখন সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে পাকিস্তান পন্থী একটা তাবেদার গোষ্ঠি তৈরি করার জন্য, তার জন্য হয়তো বন্দুকের নলের সামনে দাঁড় করিয়ে অনেককে দিয়ে বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হবে। জান্তা আরোপিত ব্লাক আউটের কারনে আমাদের পক্ষে বস্তুনিষ্ঠ খবর জানার কোনো উপায় অবশিষ্ট নেই। বিদেশ থেকে আগত বা প্রেরিত বার্তা গুলোকে যথাস্থানে পৌছানোর অনুমতি লাভ করতে এখন কঠোর সামরিক নজরদারি পার করতে হচ্ছে। ছয় দফা দাবীর পক্ষে আওয়ামী লীগ তৎকালীন পাকিস্তানের জনগনের কাছ থেকে নিরংকুশ মান্ডেট লাভ করেছিলো। পরবর্তীতে দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে এবং এর নেতাকে গাদ্দার ঘোষনা করে ফ্যাসিস্ট সামরিক জান্তা শহরে ও গ্রামে হামলা চালাতে শুরু করে, তারা বাড়ীঘর-ছাত্রাবাস জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়, বোমা নিক্ষেপ করে, ট্যাংক চালিয়ে ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে দেয়। এরই মধ্যে তারা দশ লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা করে ফেলেছে এবং আরও প্রায় ৪০ লক্ষাধিক মানুষ প্রানভয়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সামরিক জান্তার মতে, গোটা বাংলাদেশের সকল মানুষ “ষড়যন্ত্রকারী এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারী”। এই অচিন্তণীয় বর্বরতা অবলোকন করে স্তম্ভিত বিশ্ব বিবেক যেন নিন্দা জানানোর ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে। আমাদের হাতে এখন অনেক কাজ। আমাদেরকে বুঝতে হবে যে আমাদের পক্ষে এখন আর পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ হয়ে থাকার অবকাশ নেই। বরং বিজয় না আসা পর্যন্ত এই যুদ্ধটা আমাদেরকে চালিয়ে যেতে হবে। সভা সেমিনার আয়োজন, তহবিল গঠন, প্রতিবাদ, র্যালি ইত্যাদি প্রচারনামূলক কর্মসূচীর মাধ্যমে আমেরিকার জনগনের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করতে হবে হবে যেন আমেরিকার সরকার পশ্চিম পাকিস্তানের ইয়াহিয়া খানকে সামরিক ও অর্থ সহায়তা দেয়া বন্ধ করে। আমেরিকার জনগনকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে তাদের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে টেলিগ্রাম, চিঠি ও মেমোরেন্ডা পাঠাতে যেনো তারা বাংলাদেশ ও তার জনগনের প্রতি ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়। একইসাথে পাকিস্তানি দূতাবাস ও ইসলামাবাদ যেনো মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে না পারে সেদিকেও দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে, এবং এর পালটা জবাব দিতে হবে সত্য প্রচারের মাধ্যমে, যত দিন যাচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা আগের থেকে অনেক বেশি সুসৃংখল হচ্ছে এবং দৈনিক সহস্রাধিক মানুষ ক্যাম্পগুলোতে ভীড় করছে যুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর.প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানি আশা প্রকাশ করেছেন, “আগামী ১৪ থেকে ১৮ মাসের ভেতর দেশ থেকে শত্রুবাহিনী সম্পূর্ণভাবে বিতাড়িত করা সম্ভব হবে।” বিজয় সুনিশ্চিতভাবে আমাদের।. একজন মুক্তিযোদ্ধা যিনি জনাব দেওয়ান মাহবুব নামে বাঙ্গালীদের মাঝে সুপরিচিত ছিলেন, তিনি চলতি মাসে বুদাপেস্টে অনুষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক সভা চলাকালে আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহ …)। উনার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাই। এই মৃত্যুর ফলে জাতি একজন বীর যোদ্ধা এবং প্রাজ্ঞ রাজনৈতিক নেতাকে হারালো, যার অভাব পূরণের জন্য নিঃসন্দেহে আমাদেরকে দীর্ঘ দিন প্রতীক্ষায় থাকতে হবে।