কম্পাইলারঃ সৌ রভ
<৬,৫৫,১০২>
শিরোনাম: বিচিত্র নয়- অবাস্তব নয়
সংবাদপত্র: স্বদেশ (১ম বর্ষ: ৪র্থ সংখ্যা)
তারিখ: ২১ অক্টবর,১৯৭১
সম্পাদকীয়
বিচিত্র নয়- অবাস্তব নয়
ফ্রান্সের দৈনিক লামদ পত্রিকার প্রতিনিধির সাথে এক সাক্ষাৎকারে পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বলেছেন যে, “জনগণ চাইলে আমি শেখ মুজিবকে ক্ষমা করতে পারি।” এবং ভারত ও পাকিস্তান বিরোধ আলাপ- আলোচনার মাধ্যমে হওয়া উচিত যুদ্ধের মাধ্যমে নয়। তিনি আরো বলেছেন যে, এই বিরোধ মীমাংসায় তিনি যে কোন লোকের সাথে যে কোন স্থানে বসতে রাজী আছেন। ইয়াহিয়ার ‘জনগণ’ কারা তা আমরা জানি না। তবে আমরা জানি বিগত গণঅভ্যুত্থানের সময় বাংলার গণমানুষ ব্যারিকেড বেয়নেট-বেড়াজাল ভেদ করে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবীতে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। আজ সারা বিশ্ব জানে যে, বিগত সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে বাংলার সাড়ে সাত কোটি মুক্তিপাগল জনতা ছয় এবং এগারো দফার সপক্ষে রায় দিয়েছে। এবং সে রায় ঐতিহাসিক রায়। পৃথিবীর নির্বাচনের ইতিহাসে সে রায় অনন্য সে রায় ভাস্বর।
.
আজ যখন সুদূর চট্টল থেকে দিনাজপুরের রৌদ্রক্ষরা মালভূমি পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর বীর সেনানীরা দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছে,আঘাতে আঘাতে যখন পর্যুদস্ত করছে হানাদার পাক-দস্যুদের, তখন পাক সামরিকচক্র বাংলাদেশে তাদের নিশ্চিত পরাজয় জেনে, আজ ভুল করতে শুরু করেছে। এটা বিচিত্র নয়- এটা অবাস্তব নয়, এটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া ইয়াহিয়া ‘ভারত পাকিস্তান বিরোধের মত একটা কল্পিত ভূত আবিষ্কার করেছেন- বিশ্ব জনমতকে ধোঁকা দেয়ার জন্য। তিনি আবদার করেছেন যে, ‘যে কোন লোক’ এর সাথে ‘যে কোন স্থানে’ তিনি বিরোধ মীমাংসায় বসতে রাজী আছেন। কারা সেই যে কোন লোক কোন সে স্থান ? কারা সেই লোক যারা একটি বর্বর পশুর সাথে আলোচনায় বসতে যাবে ? মানব ইতিহাসে দুরপনেয় কলঙ্ক সৃষ্টিকারী নায়কের সাথে কারা আলোচনায় বসবে আমরা জানি না।কি সে বিরোধ আমরা তাও জানি না। তবে আমরা জানি বাংলাদেশের মাটি আজ দুর্জয় ঘাটিতে পরিণত হয়েছে। এক লক্ষ মুক্তিবাহিনী সুন্দরবনের বাঘেরমত ক্ষিপ্রতা নিয়ে যে কোন মুহূর্তে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করবে হানাদার পাক-বাহিনীকে। মুক্ত করবে বাংলার মাটি আর মানুষকে।