৬৭. ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ আন্দোলনের খবর

অনুবাদঃ এ. এস. এম. হাসান লতিফ

<৬,৬৭,৭০৩-৭০৪>

শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ
বাংলাদেশের আন্দোলনের খবর বাংলাদেশ

টরোন্টোঃ নং.৩

২৫ আগষ্ট, ১৯৭১

 

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের টরোন্টো পরিদর্শন

জনাব এম. আর. সিদ্দিকি, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নিয়োগকৃত বাংলাদেশের নয়া রাষ্ট্রদূত দক্ষিণ এশিয়ার উপর আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে যোগদিতে টরোন্টোতে অবস্থান করেছিলেন। ২২শে আগষ্ট তিনি [বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ কানাডা (টরোন্টো)] এর সদস্য বর্গের সাথে সাক্ষাৎ করেন ও মতবিনিময় করেন।

.

বাংলাদেশ বিষয়ে সেমিনার

বিগত আগষ্ট ০৫, ১৯৭১ তারিখে [বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ কানাডা (টরোন্টো)] কর্তৃক [বাংলাদেশেসংকট] শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধান বক্তা ছিলেন জনাব এন্ড্রু বারউইন এমপি, যিনি ইতোপূর্বে কানাডিয়ান সংসদিয় প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে গতমাসে ভারত, পিপিকে ও বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন। প্যানেলের অন্যান্য সদস্যগণ যারা সম্প্রতি ভারত থেকে ফিরেছেন তাঁরা হলেন টরোন্টো টেলিগ্রামের জনাব ফ্রেডেরিক নোসাল, অক্সফামের জনাব লেসলী স্মিথ এবং ইউনিসেফের জনাব পল ইগনিটিফ। সভাপতিত্ব করেছেন জনাব স্ট্যানলী বার্ক।

.

সকল বক্তা ভারতে অবস্থানরত ৭ মিলিয়ন শরণার্থীর ভয়াবহ জীবনযাত্রার বর্ণণা তুলে ধরেন। যখন জনাব স্মিথ ও জনাব ইগনিটিফ নিজেদের বক্তব্য শুধুমাত্র শরণার্থী সমস্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখছিলেন, তখন জনাব বারউইন ও জনাব নোসেল রাজনৈতিক ও অন্যান্য দিক থেকে সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। জনাব বারউইন তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, তাঁর মতে বাংলাদেশ সংকটের একমাত্র সমাধান হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। জনাব স্মিথ তাঁর বক্তব্যে শরণার্থী শিবিরের ছবি ফুটিয়ে তোলেন।

.

তথাকথিত [পাকিস্তান শান্তি কমিটি]-এর দুইজন বাঙ্গালীসহ একদল পশ্চিম পাকিস্তানী তাদের অবাধ্যতার নমুনা স্বরূপ বিক্ষোভ মঞ্চস্থ করে এবং চরম লজ্জাজনক ও শিশুসুলভ আচরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের কার্যাদি পন্ড করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। অনুষ্ঠানের দর্শকমন্ডলী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে তারা দ্রুত সভাস্থল ত্যাগ করে। তারা সভাস্থল ত্যাগ করার পর একজন কানাডিয় নাগরিককে বলতে শোনা যায়, “এখন আমি জানি আসল সমস্যাটি কোথায়।” অন্যজন বলেন, “ এই যদি হয় স্বদেশীদের প্রতি তাদের (বিক্ষোভ প্রদর্শণকারী) আচরণ, তবে আমি বুঝতে পারছি না তাদের মধ্যে কি করে অর্থপূর্ণ সহাবস্থান সম্ভব।

সেমিনারটি সফল হয় ও এতে ৫০০ এরও বেশী অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।

.

দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি
শীর্ষক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স

কানাডার অক্সফাম কর্তৃক টরোন্টোতে ২০ ও ২১ আগষ্ট একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজিত হয়েছে। কনফারেন্সটিতে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। পাকিস্তানের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণের আশা ব্যক্ত করলেও শেষ পর্যন্ত তা করতে অসমর্থ হয়েছেন।

প্রতিনিধিগণ, যাদের সকলেই ভারত ও পাকিস্তান বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন, উদ্দেশ্যের ব্যাপারে নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করেন এবং পরিশেষে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটি ঘোষণা প্রকাশ করেন। উক্ত ঘোষণায় সকল সরকারের প্রতি এই মর্মে অনুরোধ করা হয়ঃ

১। পাকিস্তানে সমগ্র সামরিক পণ্যের সরবরাহ বন্ধ করা।

২। পাকিস্তানের অনুকূলে সকল অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ করা।

৩। জাতিসংঘের ব্যবস্থাপনায় সম্ভাব্য সকল উৎস কে জোরদার করে [পূর্বপাকিস্তান]-এর দূর্ভিক্ষ মোকাবেলায় ব্যাপক ভাবেজরুরী ত্রাণ সরবরাহ কার্যক্রম গ্রহণ করা।
৪। ভারতের শরণার্থী সমস্যাজনিত কারণে অর্থনৈতিক চাপ সহণীয় রাখতে সহযোগীতার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করা।

৫। শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন বাঁচাতে হস্তক্ষেপ করা।

বাংলাদেশের স্বীকৃতি না থাকায় ঘোষণাটি বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়নি।

Scroll to Top