৭৪. ৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ আন্দোলনের খবর

অনুবাদঃ তুষার শুভ্র

<৬,৭৪,৭১৪-৭১৫>

শিরোনামঃ বাংলাদেশ আন্দোলনের খবর

সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ ভলিউম ১ নং ১

তারিখঃ ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

.

পাকিস্তানকে দেওয়া সব ধরনের সাহায্য বন্ধের জোর দাবি জানালেন ইউ.এস সিনেটররা

.

ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তের রেফিউজি ক্যাম্পে সপ্তাহব্যাপী পরিদর্শন শেষে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি পাকিস্তানের প্রতি ইউ.এস পলিসির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ” পশ্চিম পাকিস্তানে সরবরাহ করার জন্য আর কোনো ইউ.এস অস্ত্রের চালান থাকলে তা এখনই আমাদের বন্ধ করতে হবে। মনুষ্যত্বের মৌলিক নীতিকে যে সরকার নিয়মিত লঙ্ঘন করছে সে সরকারকে দেওয়া সব ধরনের অর্থনৈতিক সাহায্য আমাদের বন্ধ করতে হবে।”

.

২৬ শে আগস্ট,ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে সিনেটর কেনেডি এক আবেগপূর্ণ ভূমিকায় বলেন, “পশ্চিম পাকিস্তানের জেনারেল এবং বিশ্ববাসীকে আমাদের অবশ্যই স্পষ্ট করে দিতে হবে যে, যে পর্বতসম গনহত্যা পূর্ব পাকিস্তানকে বিদ্ধস্ত করেছে তার প্রতি ইউনাইটেড স্টেটস্ এর গভীর সহানুভূতি ও মনোভাবের স্থায়ী পরিবর্তন আছে।”

.

সিনেটর কেনেডি,জুডিশিয়ারী সাবকমিটি অন রেফিউজিস এর চেয়ারম্যান বলেন যে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট আমেরিকানদের জন্য বিশেষভাবে বেদনাদায়ক হবে কারন ” আমাদের মিলিটারি হার্ডওয়্যার,আমাদের অস্ত্র,আমাদের ট্যাংক,আমাদের বিমানগুলো যেগুলো বেশ কয়েক যুগ ধরে তাদেরকে দেওয়া হয়েছে সেগুলোই এই দুর্দশা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী।”

.

তিনি আমেরিকানদের প্রতি জোড় দাবি জানান যে এমন কোন শাসকদের সাহায্য না করতে যারা নীতি বর্জিত এবং যাদের কারনে তার নিজ দেশের মানুষদের সারা পৃথিবী জুড়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে।

.

ম্যাসাচুসেটস সিনেটর এটিকে “বতর্মান সময়ের মানুষের দুর্দশার সবচেয়ে বেদনাদায়ক নিদর্শন” আখ্যায়িত করে তিনি আমেরিকানদের বুঝতে বলেছিলেন যে কোন ব্যাপারটি বাংলাদেশে এমন ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মূলে জড়িত।

.

সিনেটর কেনেডি ভিয়েতনামে আমেরিকানদের কার্যকলাপ এবং সম্প্রতি বাংলাদেশে ইউ.এস. এর ভূমিকার তুলনা তুলে ধরে তিনি বলেন ভিয়েতনামে গনতন্ত্রকে সাহায্য করতে গিয়ে ১০০বিলিয়ন ইউ.এস ডলার ও ৪৫,০০০ জীবন বিলিয়ে দেওয়ার পর এখন আমেরিকাকে তার নেতৃবৃন্দ কর্তৃক অনুরোধ করা হয়েছে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সংঘটিত হওয়া একটি নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য।

.

সিনেটর চার্লস পার্সি

সিনেটর চার্লস পার্সি ২৮শে আগস্ট নয়া দিল্লিতে একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন যে তিনি পাকিস্তানকে সব ধরনের অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধের পক্ষপাতী।

রিপাবলিকান এই সিনেটরটি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া এই গনহত্যাকে ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন।

.

টরেন্টো কনফারেন্সের বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ

.

বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানকে সামরিকভাবে বা অর্থনৈতিক ভাবে সহায়তা না করার জন্য সকলদেশের সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে টরেন্টোতে স্বনামধন্য পন্ডিত ব্যক্তি,সম্পাদকমণ্ডলী এবং সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।

.

কনফারেন্সটিতে এই বলে সতর্ক করা হয় যে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তির জন্য এক বিরাট হুমকি। “টরেন্টো ডিক্লারেশন অব কনসার্ন” নামে এই প্রস্তাবনায় বলা হয় যে ” গত কয়েকমাস জুড়ে পূর্ব পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া যে ঘটনাগুলো মানব সভ্যতার ইতিহাসে ভয়ংকর দূর্যোগের জন্ম দিয়েছে এতে কনফারেন্সে অংশগ্রহনকারী সবাই খুব ভীত।”

.

এতে আরো বলা হয় ” বর্তমান পরিস্থিতি দক্ষিন এশিয়া উপমহাদেশেই  শুধু নয় সমগ্র পৃথিবীর শান্তির জন্য এক বিশাল হুমকি যেহেতু এখানে বিভিন্ন পরাশক্তির অংশগ্রহনের আশংকা রয়েছে যা এই ধরনের নৃশংস ঘটনার গতি বহুগুণ বৃদ্ধি করবে।

.

১৯ থেকে ২১ শে আগস্ট অনুষ্ঠিত এই কনফারেন্সে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ছিলেন জাতিসংঘের টেকনিকাল অ্যাসিস্টেন্সের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল হিউ কিনলিসাইড, প্রাক্তন বৃটিশ শ্রমমন্ত্রী জুডিথ হার্ট, বৃটিশ এম.পি বার্নার্ড ব্রেইনি এবং চীনে নিযুক্ত প্রাক্তন  কানাডিয়ান অ্যাম্বাসেডর চেস্টার রানিং।

Scroll to Top