অনুবাদঃ রাশেদ সাইফুল
<৬, ৮৯, ৭৩৭>
শিরোনামঃ সম্পাদকীয় মুক্তিবাহিনী
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ ভলিউম-১: নং- ৮
তারিখঃ ২২ অক্টোবর, ১৯৭১
.
সম্পাদকীয়
মুক্তিবাহিনী
গত এপ্রিলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে এই অঞ্চলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ছিল মুক্তিবাহিনীর আবির্ভাব।
মুক্তিবাহিনী সফলতার সাথে স্বাধীনতার জন্য বাঙ্গালীর সংগ্রামকে পুনর্জীবিত করেছে। সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠেছে এবং সমাজের সর্ব স্তরে তাদের সমর্থক রয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানের বৃহৎ স্বার্থে তারা বিধ্বংসী নয় বরং উন্নয়নশীল এবং বিশ্বব্যাপী গুরুত্বহীন হিসেবে পরিগণিত হলেও তারা প্রমাণ করছে যে তারা খুব ভয়াবহ অন্তর্ঘাত বজায় রাখতে সক্ষম।
মুক্তি বাহিনী আকারে, কৌশলে এবং দক্ষতায় উন্নতি করছে। তাদের দর্শনীয় কাজের মাঝে রয়েছে ঢাকায় অবস্থিত ইন্টারকন্টিনেল্টাল হোটেলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন যা পশ্চিম পাকিস্তানী সেনা সদরদপ্তর এর দৃষ্টিসীমার মাঝে অবস্থিত। বাঙ্গালী নৌ কমান্ডোরা বাংলাদেশ বন্দরে ডজন খানেক পশ্চিম পাকিস্তানী এবং বিদেশি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে। যেহেতু ইয়াহিয়া খানের সেনাবাহিনী বিদেশি স্বার্থের পর্যাপ্ত নিরাপত্ত দিতে ব্যর্থ হয়েছে, ব্রিটিশ শিপিং লাইন এরই মধ্যে বাংলাদেশে সব ধরনের নৌ চলাচল স্থগিত করেছে।
এছাড়াও যখন থেকে মুক্তিযোদ্ধারা যখন থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করা শুরু করেছে তখন থেকে ১৫৭ টি প্রধান সড়ক এবং রেল ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তারা বাংলাদেশের প্রধান রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। সড়ক যোগাযোগও বন্ধ হয়ে রয়েছে কারণ ব্রিজগুলো মেরামতের আওতার বাইরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
বীর বাঙ্গালী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি প্রদীপ্ত শ্রদ্ধা নিবেদন করে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (অক্টোবর ১৭) লিখেছে, যদি ভিয়েতকংরা ছয় মাস পরে এরকম করতে পারত তাহলে তারা এটাকে একটি ভালো সূচনা হিসেবে মূল্যায়ন করত।
সাধারন ভাবে বলতে গেলে, মুক্তিবাহিনী ব্যাপক ভাবে সেনা শাসনের আইন, আদেশ এবং সরকারি প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার ক্ষতিসাধন করেছে। এটি ইয়াহিয়া খানের সেনাবাহিনীর মাঝে বিষন্নতা এবং হতাশা বাড়াতে সাহায্য করেছে। অতি সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বিরুদ্ধে হাতাহাতি লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছে এবং পশ্চিম পাকিস্তানী সেনা বাহিনী এরই মাঝে অবাধ্যতারা চিহ্ন দেখাতে শুরু করেছে।
মনোবলহীন পশ্চিম পাকিস্তানের দখলদার বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর বিজয় অবশ্যম্ভাবী। আমেরিকার গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং আলজেরিয়ার মুক্তির সংগ্রামের মতই এই বিজয় নিশ্চিত।