১৮৯. ২৬ সেপ্টেম্বর ইয়াহিয়ার শক্তির উৎসে আঘাত করো

শিহাব শারার মুকিত

<৬,১৮৯,৩২৬-৩২৯>

শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ
ইয়াহিয়ার শক্তির উৎসে আঘাত কর সাপ্তাহিক বাংলা

১ম বর্ষঃ ২য় সংখ্যা

২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

 

ইয়াহিয়ার শক্তির উৎসে আঘাত কর

ফেরদৌস আহমদ কোরেশী

মুক্তিবাহিনীর দুঃসাহসিক বীর যোদ্ধাদের অবিশ্বাস্য রণনৈপুণ্যে প্রতিটি রণাঙ্গনে আজ ইয়াহিয়ার হানাদার বাহিনী মৃত্যুর বিভীষিকায় আতঙ্কের দিন গুনছে। একদিকে বিশ্বময় সাধারণ মানুষের হৃদয় নিংড়ানো সমর্থন ও সহানুভূতিধন্য সংগ্রাম, আরেকদিকে সভ্যতার ও মানবতার তীব্রতম ঘৃণায় কলঙ্কিত পেশাদার দস্যু বাহিনীর লোমহর্ষক বর্বরতা! সত্যের বিরুদ্ধে অসত্যের, ন্যায়ের বিরুদ্ধে অন্যায়ের শক্তি মদমত্ততার নগ্ন আস্ফালন ইতিহাস কোনদিন ক্ষমা করেনি। ক্ষুদে ডিক্টেটর ইয়াহিয়ার সাধ্য কি প্রকৃতির সেই অমোঘ বিধান পাল্টে দেয়?

কিন্তু তবু আত্মতৃপ্তি কিংবা অবশ্যম্ভাবী বিজয়ের আনন্দে কর্তব্যকর্মে শিথিলতা প্রদর্শনের কোন অবকাশ নেই। একথা অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে, মুক্তিযুদ্ধের আবেগ ও উচ্ছ্বাসের পর্ব শেষ হয়ে গেছে। এখন নিরেট, কঠোর ও বাস্তব বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে যুদ্ধ পরিচালনা পর্ব। কেবল রণাঙ্গনেই নয়, এ যুদ্ধ সমভাবে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় রাজনীতিতেও চালিয়ে যেতে হবে। সেজন্য কেবল প্রয়োজন সর্বাগ্রে শত্রুর শক্তি ও শক্তির উৎসগুলির সম্পর্কে সচেতন হওয়া।

       বৃহৎ শক্তিবর্গ এবং জাতিসংঘের রুদ্ধদ্বার কক্ষের কূটনৈতিক প্রভুরা বাংলাদেশ প্রশ্নে কি ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সে সম্পর্কে কেউ কেউ অতিমাত্রায় আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। এ থেকে মনে হচ্ছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মারপ্যাঁচ এবং ক্ষুদ্র দেশ ও জাতিসংঘের প্রতি বৃহৎ শক্তিবর্গের কসাই সুলভ নির্লিপ্ত নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে বাংলাদেশের এমনকি ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিপূর্ণভাবে সচেতন নয়। ফলে একদিন যেমন কোন কোন রাষ্ট্রের সমর্থনের ও সদিচ্ছার উপরে মাত্রাতিরিক্ত ভরসা করা হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে ইয়াহিয়া খানের জঙ্গি সরকারের শক্তিকেও অনাবশ্যকভাবে খাটো করে দেখানো হয়েছে। বিদেশ বাংলাদেশ প্রশ্নে সাধারণ মানুষ ও বুদ্ধিজীবী মহলে যে সহানুভূতি ও দ্যার্থহীন সমর্থন পাওয়া গেছে, তাকেই চূড়ান্ত ধরে নেওয়া হয়েছে এবং সেই সাথে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার সাফল্য সম্পর্কে একটা আন্ততৃপ্তিবোধও জন্ম নিয়েছে। সেই মুক্তি বাহিনীর সাফল্যে আত্মস্ফীত হয়ে ইয়াহিয়ার আসন্ন পতনের তারিখ ঘোষণার ব্যাপারেও কেউ কেউ রীতিমত প্রতিযোগিতা দিয়ে চলছে।

       সাধারণ মানুষের মধ্যে এসব চিন্তা ভাবনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু দায়িত্বশীল এবং নীতিনির্ধারণে নিযুক্ত ব্যক্তিরাই যদি এমনিভাবে উটপাখির মত বালিতে মুখ গুঁজে রেখে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরি করেন, তবে সে পরিকল্পনার গোড়াতেই গলদ থেকে যেতে বাধ্য।

জাতিসংঘে কি হতে পারে তার আভাস পাওয়া গেছে পূর্বাহ্নে ইয়াহিয়ার হানাদার সৈন্যরা যে পৈশাচিক বর্বরতায় সভ্যতার ইতিহাস কলঙ্কিত করেছে, বিশ্ববিবেকের অভিভাবকত্বে সমাসীন জাতিসংঘের কর্মকর্তার এবং বিভিন্ন স্বাধীন দেশের প্রতিনিধিরা ততোধিক হৃদয়হীন নিষ্ঠুরতায় বাংলাদেশ সমস্যাটিকে পাশ কাটিয়ে যাবার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন। ইয়াহিয়া খুনি, তবে তার খুনটা কিছুটা “hot blooded” কিন্তু যারা বিশ্বের দণ্ড-মুণ্ডের কর্তা সেজে বসেছেন, বাংলাদেশ প্রশ্নে তাদের ক্ষমাহীন শীতলতা “cold blooded” এবং নিশ্চিতরূপেই ষড়যন্ত্রমূলক। এই ষড়যন্ত্র কেবল বাংলা ও বাঙালীর বিরুদ্ধেই নয়- মানবতার বিরুদ্ধে, জাতীয় সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে, সর্বোপরি মনুষ্যত্বের বিরুদ্ধে।

       ইয়াহিয়া খা কয়েক মাসেই দেনার দায়ে কাবু হয়ে যাবে, আভ্যন্তরীণ কলহে আপনা থেকেই তার তাসের ঘর ভেঙ্গে যাবে, যুদ্ধ খতম হতে হতে তার সৈন্যবাহিনী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, অথবা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতির মাধ্যমে ইয়াহিয়াকে বাংলার বুক থেকে হাত গুটিয়ে নিতে হবে, এসব চিন্তার একটিও যে পুরোপুরি বাস্তব বুদ্ধিজাত নয়- ইতিমধ্যেই তা কিছুটা প্রমাণিত হয়েছে। ইয়াহিয়ার দেনার দায় যতই থকুক, যতই বাড়ুক, একথা মনে রাখা দরকার যে, তার পিছনে ‘মহাজন’ মুরব্বীও আছে, যারা নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী ও বেনিয়া স্বার্থেই ইয়াহিয়ার পরমুখাপেক্ষী সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবে এবং পাকিস্তানের ‘ঋণনির্ভর’ অর্থনৈতিকে তারা বেশ কিছুকাল অতিরিক্ত (প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ) ঋণের অক্সিজেন তাঁবুতে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।

ইয়াহিয়ার ঘর একান্তভাবেই পশ্চিম পাকিস্তানে। সেখানকার জনসাধারণকে বাংলাদেশের আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়নি (বা করা সম্ভব হয়নি)। ফলে আজো সেখানকার রাজনীতি একান্তভাবে সামন্ত প্রভাবান্বিত এবং বাংলাদেশ প্রশ্নে সেখানকার সামরিক ও বেসামরিক প্রভুদের মনোভাব মোটামুটি এক। কাজেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পথ প্রশস্ত হবে এমন কোন আভ্যন্তরীণ কলহে সেখানে দল উপদলগুলি বেশিদূর এগুবে তেমন আশা অন্তত এই পর্যায়ে করা চলে না। আমাদের মুক্তিবাহিনী এখন নিঃসন্দেহে আগের চাইতে অনেক বেশি দৃঢ়তা ও কার্যকারিতার সাথে ইয়াহিয়ার পেশাদার সৈন্যদের মোকাবিলা করছে। এ ব্যাপারে ইয়াহিয়ার সৈন্যবাহিনীর বাস্তবিকই বেকায়দা অবস্থা।

সম্ভবত তা অনুমান করতে পেরেই ইয়াহিয়া এখন তার রণকৌশল বদলে নিয়ে ‘বাঙ্গালাইজেন’ নীতি গ্রহণ করেছে এবং বাংলাদেশেরই জনগণের একাংশকে ভয়ভীতি-প্রলোভনে কিংবা ব্যক্তিগত রেষারেষির সুযোগে উস্কানি দিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে এখন মুক্তিবাহিনীর হাতে নিহত ও আহতদের মধ্যে এসব দেশীয় ‘কোলাবরেটরদের’ সংখ্যাই বেশী। এটা খুব শুভ লক্ষণ নয়। অনুরুপভাবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ইয়াহিয়া খান একঘরে হয়ে পরবে এবং তার রক্তমাখা হাতের সাথে কেউ হাত মেলাবে না, এই আশাও বাস্তবের ধোপে টিকে না- কারণ, বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রযন্ত্রগুলির বেশির ভাগের হাতই যে রক্তমাখা। এক্ষেত্রে বরং চোরে চোরে মাসতুতো ভাই হবারই সম্ভাবনা বেশি।

বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের পরিচালনা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার উপর বর্ণিত অন্ধকার দিকটি সামনে রেখে তারই মোকাবিলার জন্য আজ আমাদের তৈরি হতে হবে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে ইয়াহিয়া সরকারকে কাবু রাখার জন্য দরকার মুক্তিবাহিনীর তৎপরতাকে জোরদার করা। সেজন্য আরও গভীর, আরও ব্যপক ও বিরাটভাবে আঘাত হানা দরকার। এ ব্যপারেও আমাদের এখনো অনেক কিছু করণীয় আছে। যুদ্ধের কৌশলগত ও নীতিগত দিক আলোচনা করা অনুচিত বিধায় এ সম্পর্কে আর বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না।

কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে মুক্তিবাহিনীর সাফল্যের পাশাপাশি যদি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে আমরা সমান সাফল্য অর্জন করতে না পারি, তবে চূড়ান্ত বিজয় অসম্ভব হয়ে পরতে বাধ্য।

রাজনৈতিক পর্যায়ে “Isolate the enemy” এই নীতি অবলম্বন করে দেশের অভ্যন্তরে সমস্ত শক্তিকে সংহত করা অত্যাবশ্যক। বিলম্বে হলেও কয়েকটি দলের সমন্বয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন এব্যপারে একটি শুভ পদক্ষেপ হয়েছে। এই পরিষদকে সম্প্রসারিত করে দল এমনকি গ্রুপগুলিকেও অঙ্গীভূত করে নেওয়ার জন্য প্রত্যক্ষ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এমনকি যারা দোটানায় আছে কিংবা ভয় ভীতিতে শত্রুর সহযোগিতা করছে, বাংলাদেশ সরকারের আশু কর্তব্য তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেও দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি সম্পর্কে তাদের মনে আস্থা সৃষ্টি করা এবং শত্রুকে তাদের সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা। ইয়াহিয়া সরকার যেভাবে সর্বপ্রকার চেষ্টা চালিয়ে বাংলাদেশ থেকেই সমর্থন সংগ্রহের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকেও সেইভাবে তাদের কোণঠাসা করে রাখতে  এবং প্রতিটি বাঙ্গালীকে স্বাধীন বাংলার পতাকার নিচে জমায়েত রাখার জন্য চেষ্টা চালাতে হবে। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে, কিংবা অবহেলাভরে একটিমাত্র মানুষকেও শত্রুশিবিরে ফেলে দেওয়া এই পর্যায়ে আমাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

বাংলাদেশে ইয়াহিয়া যেভাবে , divide and rule এর চেষ্টা চালাচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে পশ্চিম পাকিস্তানে এমনকি ইয়াহিয়া-সমর্থক বাঙ্গালীদের মধ্যেও রাজনৈতিক তৎপরতা চালানো দরকার। বাংলাদেশ আজ হোক কাল হোক স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা পাবেই এ বিশ্বাস সবার মনে বদ্ধমূল করে দিতে হবে এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ ইয়াহিয়ার শক্তির প্রথম উৎস। এই উৎসে আঘাত হানার সুযোগ এখনও আছে। পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের কায়েমীস্বার্থের সিংহাসনে ফাটল ধরাবার নিরন্তর চেষ্টা চালাতে হবে। কোন ব্যর্থতাকেই ব্যর্থতা মনে করা যাবে না। এজন্য প্রয়োজনবোধে একটি বিশেষ দল গঠন করা যেতে পারে।

পশ্চিম পাকিস্তানে বিশেষত ইয়াহিয়া সামরিক বাহিনীকে অদ্যবধি ঐক্য বজায় রাখার জন্য ধর্মোন্মাদনা, আঞ্চলিক স্বার্থচেতনা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের অবলুপ্তির সম্ভাবনাজনিত ভিত্তিকেই বেশী করে কাজে লাগানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে পশ্চিম পাকিস্তানে জনমত খুবই বিভ্রান্ত। তবে এই কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পৃথিবীর মুসলিম রাষ্ট্রগুলির দ্ব্যর্থহীন সমর্থনেই আজ পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় প্রতীক একান্তভাবেই ইয়াহিয়ার হস্তগত হয়েছে। দেশের বৃহত্তর অংশ হয়েও বাংলাদেশে সেই প্রতীকের উপর স্বীয় দাবি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।

মুসলিম দেশগুলি ইয়াহিয়াকে সমর্থন করছে কেন? কেউ কেউ এ নিয়ে বিশ্বের মুসলমান জনসাধারণ এবং তাদের ধর্মীয় চেতনার প্রতি কটাক্ষ করেই তৃপ্ত হয়েছেন। বিষয়টি গভীরে প্রবেশের চেষ্টা করেননি। বস্তুত ইয়াহিয়া খাঁর প্রতি মুসলিম রাষ্ট্রযন্ত্রগুলির সমর্থনের মূল কারণ, এসব দেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের অধিকাংশের অগণতান্ত্রিক ও ক্ষেত্রবিশেষে গণবিরোধী চরিত্র। তার চাইতেও বড় কথা পাকিস্তান সম্পর্কে এ সব দেশের জনসাধারণের, এমনকি রাষ্ট্রযন্ত্রের সীমাহীন অজ্ঞতা। এসব দেশে পাকিস্তানি কূটনীতিক সাফল্যও এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। মুসলিম দেশগুলির মধ্যে পাকিস্তান বৃহত্তম, যে হিসেবে এসব দেশে পাকিস্তানি কূটনীতিকরা বরাবর বিশেষ মর্যাদা ভোগ করেছে। এসব কূটনীতিকরা পাকিস্তান সম্পর্কে বরাবরই একতরফা চিত্র তুলে ধরেছে এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বাঙ্গালীদের সংখ্যা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব, বাঙ্গালীদের স্বকীয়তা, এসব সম্পর্কে এসব দেশের মানুষকে কিছুই জানতে দেয়া হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই এসব দেশে একতরফাভাবে বাংলাদেশের অভ্যুত্থানকে ভারতীয় চক্রান্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে। তার পাশাপাশি বাংলাদেশের মুসলমানদের পক্ষ থেকে এসব দেশকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়নি। ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের কথা বলায় কার্যত হিতে বিপরীত হয়েছে, এমনকি জয়প্রকাশ নারায়ণের মত সজ্জন ব্যক্তির সফরও এসব দেশে বিকৃত ছাপ ফেলেছে। তাতে করে কেবল বাংলাদেশ সমস্যা ভারতের সৃষ্টি- এ ধারণাকেই জোরদার করা হয়েছে।

পাকিস্তানের পশ্চাতে মুসলিম দেশগুলির ঢালাও সমর্থনের অপরিসীম গুরুত্ব অনুধাবন করে এ ব্যাপারে আশু কর্তব্য নির্ধারণ অত্যন্ত জরুরী। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রায় ৩০টি দেশের শর্তহীন সমর্থন মোটেই অবহেলার বিষয় নয়। বিষয়টিকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার না করে কূটনীতির প্রয়োজনের নিরিখেই বিচার করতে হবে। বাংলাদেশের অধিকাংশ অধিবাসী মুসলমান। ইয়াহিয়ার নির্বিচার গণহত্যা, উৎপীড়নের শিকার হয়েছে এই মুসলমানরাই। ইসলামের দৃষ্টিতে সংখ্যালঘুর জানমাল রাষ্ট্রের পবিত্র আমানত। সে ব্যাপারে কি নিষ্ঠুর হৃদয়হীনতার প্রকাশ ঘটেছে, কিভাবে আবাল-বৃদ্ধ নির্বিশেষে নারীর উপর নির্যাতন চালানো হয়েছে, এমনকি কোরআন পাঠরত মহিলাকেও রেহাই দেয়া হয়নি, কিভাবে হানাদার সৈন্যরা বোমার আঘাতে মসজিদের মিনারও পুড়িয়ে দিয়েছে- এসব কথা মুসলিম দেশগুলির সাধারণ মানুষের কাছে পৌছায়নি। বাংলাদেশ যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কায়রোর মুফতিরও নাকি সেকথা জানা ছিল না।

ইয়াহিয়ার শক্তির এই উৎসমুখ বন্ধ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা দরকার। মুসলিম দেশগুলির সমর্থন বাংলাদেশের জন্য জরুরী। কারণ, একমাত্র তাহলেই ইয়াহিয়ার শাসনযন্ত্রের শেষ নৈতিক খুঁটিটি ধসে পরবে। পশ্চিম পাকিস্তানের মাটিতে ইয়াহিয়ার মুখোশ উন্মোচিত হতে পারে। একমাত্র তাহলেই বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে মুসলিম দেশগুলির ভাবনার কিছুই নেই, বরঞ্চ আরেকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রকে অভিনন্দন জানানোই তাদের কর্তব্য- এই সত্যটি তুলে ধরতে হবে।

পাকিস্তান সরকারের তৈরি বহুদিনের ভুল ধারণা নিরসন অতি সহজে হবে আশা করা যায় না। তবে এ ব্যাপারেও আপাত ব্যর্থতায় মুষড়ে পরলে চলবে না।

Scroll to Top