আব্দুল্লাহ আল নোমান
<৬,২২৪,৩৭৭>
শিরোনামঃ বাংলাদেশকে ভিয়েতনাম সৃষ্টির অপচেষ্টা প্রতিরোধ করুন
সংবাদপত্রঃ রণাঙ্গন*
তারিখঃ ৩০ অক্টোবর, ১৯৭১
[রণাঙ্গনঃ বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনতার সাপ্তাহিক মুখপত্র। সম্পাদক- মুস্তফা করিম কর্তৃক বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত। প্রধান উপদেষ্টা মতিইয়র রহমান এম,এন,এ। প্রধান পৃষ্ঠপোষকঃ করিমউদ্দিন আহমেদ এম,পি,এ। ]
বাংলাদেশকে ভিয়রতনাম সৃষ্টির অপচেষ্টা প্রতিরোধ করুন (কে, জি মুস্তফা)
বাংলাদেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বে দ্রুতগতিতে রাজনীতির পট-পরিবর্তন হয়ে গেছে। কম্যুনিষ্ট, সমাজের ঘোড় শত্রু সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠির সঙ্গে আতাঁত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে দুই শত্রু সমাজ। একই সঙ্গে বসবাস করার রঙ্গীন স্বপ্ন দেখছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্টের সর্বাধিনায়ক নিক্সন চীন দেশ সফর করার যাবতীয় পরিকল্পনা প্রণনয়ন করার জন্য তার প্রতিনিধিকে চীনে পাঠিয়েছেন এবং অদূরভবিষ্যতে তিনি চীন সফর করে তাদের দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব স্থাপন করার বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে স্পষ্ট আভাস পাওয়া গিয়াছে। এই মৈত্রী স্থাপন হলে হয়তো ভিয়েতনামের দীর্ঘদিনের অশান্তি অরিস্থিতির অবসান ঘটবে এবং সেখানে শান্তি বিরাজ করবে।
কিন্তু একদিকে একটি দেশে শান্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে যেখানে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ের অন্য একটি দেশের বুকে নতুন করে অশান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করার যে অশুভ ইঙ্গিত প্রদান করা হচ্ছে তা পৃথিবীর যে কোন বিবেকস্মপন্ন ব্যক্তিকেই একবাক্যে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠা আবশ্যক।
বিশ্বে রাজনীতির অঙ্গনে-আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব একটি লক্ষণীয় বিষয়। কোটি কোটি ডলার খরচ করে যুক্তরাষ্ট্র যে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগ স্থাপন করে বিশ্বের রাজনীতিতে নাক গলিয়ে থাকেন তা তাদের ধূর্তপনারই প্রকৃষ্ট প্রমাণ। নিজের দেশের প্রস্তুতকৃত উদবৃত্ত সামরিক সাজ-সরঞ্জাম বিক্রি করার মানসে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র পৃথীবির বুকে সব সময় অশান্ত ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থেকে কাজ চালিয়ে যায়। আর তাদেরই শিকারে পরিণিত হয় পৃথীবির নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের বুকের রক্তে এই হোলিখেলায় সামিল হয়।
অথচ বিশ্বের বিবেকসম্পন্ন জাতিসমূহ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের এই গর্হিত কাজের প্রতিবাদ না করে তাদেরই খপ্পরে পড়ে অযথা হয়্রানি ভোগ করে আসছেন। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ঘটনায় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র যে সাপ খেলায় মেতেছেন তার পরিণাম শুভ নয় তা প্রতিটি মানুষরই অনুধাবন করতে পারেন। বাংলাদেশের নীল আকাশে কালো মেঘের আবরণ ঢেকে এক অনিশ্চয়তা অতল গহবরে বাংলাদেশকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।
অপর পক্ষে কতিপয় সমাজবাদের ধারক বাহক কম্যুনিষ্ট দেশ বাংলাদেশের ঘটনা কে নতুন চাল ঢেলে যাচ্ছেন। একদিকে ভিয়েতনামে যুদ্ধ থেমে যাবার শুভ ইঙ্গিত-অন্যদিকে বাংলাদেশে কতিপয় আন্তর্জাতিক দেশের অশুভ হস্তক্ষেপে নতুন ভিয়েত্নাম সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে এবং সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের কতিপয় রাজনৈতিক দল এই এই ডুগডুগি বাজনায় মেতে গিয়ে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে কম্যুনিষ্ট প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাই বাংলাদেশের এই যুদ্ধের ধারা যাতে অন্যদিকে প্রবাহিত না হয় তার প্রতি গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারের সর্বদা সজাগ থাকা প্রয়োজন। কোন প্রকারেই বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ভিয়েত্নাম সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। এই শপথই হতে হবে আজকের মুক্তিপাগল মানুষের প্রধান শপথ।