অনুবাদঃ জয়ন্ত সেন আবীর
<৬, ২৯১, ৫০৩>
শিরোনাম | সংবাদপত্র | তারিখ |
মুজিবনগর সমাচার | বাংলাদেশ ভলিউমঃ ১, নম্বরঃ ১১ |
৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
মুজিবনগর থেকে
“আত্মসমর্পণ”
.
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ বাংলাদেশের অধিকৃত অঞ্চলগুলোর গভর্নর হিসেবে ড. মালিকের দায়িত্ব প্রাপ্তিকে আত্মসমর্পণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
.
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বাংলাদেশের অধিকৃত অঞ্চলগুলোর গভর্নর হিসেবে একসময়কার ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ড. এ. এম. মালিকের নিয়োগদান ইসলামাবাদের তথাকথিত সামরিক জান্তার আত্মসমর্পণের স্বরূপ মাত্র। নির্দয়ভাবে হত্যা, লুট, জ্বালাও-পোড়াও এবং ধর্ষণে টিক্কা খানের বীভৎস গৌরব বাংলার মাটিতে ন্যাক্কারজনকভাবে অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। মৃতরা বাতিলের খাতায় চলে গেছে। তার পৌরুষদীপ্ত মহিমা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। মাথা নিচু করে, আত্মসম্মান খুইয়ে অপদস্থ হয়ে তাকে চলে যেতে হচ্ছে। এতে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের প্রতিও এক পরিষ্কার বার্তা উল্লেখিত আছে।
.
পাকিস্তানি জান্তা একে বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার এক উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করছে। এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ইসলামাবাদের ঘাতকেরা শুধুমাত্র উপনিবেশেই “বেসামরিক শাসন” প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে, পশ্চিম পাকিস্তানে নয়। এটা আরেকটি পরিষ্কার ইঙ্গিত যে ঔপনিবেশিক শাসন মূল ভূখণ্ড শাসন থেকে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে পরিচালিত হয়। বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা ২৫ মার্চ, ১৯৭১ এর আগে আলোচ্য বিষয় ছিল। জনগণ প্রায় অবিসংবাদিতভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে দেশ পরিচালনার জন্য নির্বাচন করেছিল। সেসময়ে বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার অর্থ ছিল জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে দেশের শাসনভার অর্পণ, অনির্বাচিত কারো হাতে নয়।
.
জনাব মালিকের নিয়োগপ্রাপ্তি কেবল মাত্র বিশ্বের চোখে ধুলো দেয়া ও ধাঁধা সৃষ্টি করার এক অপপ্রয়াস মাত্র। বাংলাদেশের জনগণ এরূপ বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার পেছনে কী পরিকল্পনা রয়েছে তা জানে। আইয়ুব খানের ১৯৫৮ সালের ক্যু এবং ১৯৬৯ এ ইয়াহিয়ার ক্ষমতা দখলের পর এরকম দুটি “পুনঃপ্রতিষ্ঠা”র এরা প্রত্যক্ষদর্শী। যখন কোনো সামরিক শাসকের ঔপনিবেশিক শাসন সামরিক শাসকদের পক্ষে কটুগন্ধময় এবং বিব্রতকর হয়ে ওঠে তখনই তারা এক বিশ্বাসঘাতক বাঙ্গালী বেসামরিক ব্যক্তিকে বাংলার “সুবেদার” হিসেবে নিয়োগ দেয়। এবারো সামরিক শাসকেরা তাদের ঔপনিবেশিক শাসনের চেনা পথ ধরে চলছে। এই অতিপরিচিত চাল এবার আর বিদেশী শক্তিদের থেকে সাহায্য ও সহায়তা আনয়নে সমর্থ হবে না।
.
ড এ এম মালিক একজন বৃদ্ধ ব্যাক্তি। তার রয়েছে এক সন্দেহজনক অতীত, নেই কোনো ভবিষ্যত। তিনি লিখিত দিয়েছেন যে বাংলার মাটিতে তার প্রভুদের দ্বারা সংঘটিত সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যাওয়া অপরাধগুলো সম্বন্ধে তিনি একদমই ওয়াকিবহাল নন। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি দেয়ালের লিখন পড়তে অক্ষমতা প্রকাশ করছেন। আমাদের থেকে কেবল করুণাই তিনি আশা করতে পারেন, আর কিছু নয়।