২৯৬. ১০ নভেম্বর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে

অনুবাদঃ তানভীর হেদায়েত

<৬, ২৯৬, ৫০৯-৫১০>

শিরোনামঃ  বাংলাদেশের অভ্যন্তরে

সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ ভলিউম ১ নং ২০

তারিখঃ ১০ই নভেম্বর, ১৯৭১

.

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সংবাদ

বাংলাদেশের জনমানবশূন্য শহর

       পূর্ব বঙ্গের প্রতিটি শহর থেকেই প্রাক-মিছিলের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। এখনও গ্রাম অঞ্চলে আগুন জ্বলছে, দাঙ্গা, লুটতরাজ ছড়িয়ে পড়েছে এবং বাঙালী ও পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাদের মধ্যকার পারস্পরিক ঘৃণা ও বিভেদ কোন অংশেই হ্রাস পায় নি। সামরিক শাষিত সরকার এখনও প্রতি মুহূর্তে বাঙালীদের উপর সতর্ক নজর রাখছে এবং তাদের তথাকথিত ” অপরাধের ” কঠোর শাস্তি প্রদান করছে।

 

সমস্যায় জর্জরিত পাকিস্তানী সেনা বহর

       মুক্তি বাহিনীর কাছে পর্যায়ক্রমে হয়রানীর শিকার হওয়া ছাড়াও , পাকিস্তানী সেনা বহর বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ও সরবরাহ সংক্রান্ত ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

       সমগ্র বাংলাদেশেই পাক সেনারা খাদ্য বিষক্রিয়া ও পাকস্থলীর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এটা মূলত আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে দূষিত পানি থেকে সংক্রামিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পাক সেনাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

       বাংলাদেশে গম স্বল্পতার কথা এক বিবৃতিতে প্রকাশ করা হয়। এটা পশ্চিম পাকিস্তানীদের কাছে এক বিশাল প্রতিবন্ধকতার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যেহেতু, গম তাদের প্রধাণ খাবার।

       তবে, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পরিবার পরিজনের চিঠি বাংলাদেশে পৌঁছাতে না পারাটা পাকিস্তানী সেনাদের জীবনে সবচেয়ে বড় হতাশার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

       এই চিঠিগুলা সামরিক কর্মকর্তারা সুস্পষ্ট কারণেই বিতরণ করছে না। কারণ, চিঠিতে পরিবারের সদস্যদের উৎকণ্ঠা সৈনিকদের মধ্যে অস্থিরতার সৃষ্টি করতে পারে। আরও আশংকা করা হচ্ছে, এসব চিঠিতে পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দূরবস্থার কথা উল্লেখ থাকতে পারে।

 

বিপুল সংখ্যক সেনার জীবনাবসান

       লন্ডনের সানডে টাইমস পত্রিকার সংবাদদাতার বার্তা অনুযায়ী, বাংলাদেশে পাকিস্তানী সেনা মৃত্যুর হার বেড়ে দিন প্রতি ১৮৯ হয়েছে। তিনি আরও জানান, ঢাকা সেনানিবাসে সেনা কর্মকর্তাদের লাশ বহনের কফিন তৈরির জন্য পূর্ণ মেয়াদে কাঠ মিস্ত্রি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। লাশ ভর্তি কফিনগুলো কবর দেবার জন্য জাহাজে করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠানো হয়।

 

পাকিস্তানের বোয়িং বিমানের উড্ডয়ন পরিকল্পনার পরিবর্তন

       ঢাকার ভেতরে মুক্তিবাহিনীর জোরালো আক্রমণ পাকিস্তানী সেনাদের বিমানবন্দরের রাস্তার পাশে পিল বক্স ( কংক্রিট বাঙ্কার ) তৈরী করতে বাধ্য করেছে। এমনকি পাকিস্তান আন্তর্জাতিক বিমান বহরও মুক্তিবাহিনীর কার্যক্রমের প্রভাব অনুভব করতে পেরেছে। তাদের বোয়িং বিমান, যেগুলো পূর্বে বিমানের প্রজ্বলিত অবতরণ আলো জ্বেলে আন্তর্জাতিক বিমান পথে প্রতিদিন ঢাকায় অবতরণ করতো, বর্তমানে উড্ডয়ন পথ পরিকল্পনার পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। তাদের বিমানবহর বর্তমানে যতটা সম্ভব সমুদ্রের উপর দিয়ে দিক নির্দেশক আলো ছাড়াই উড্ডয়ন করছে।

 

নির্বাচনে কারচুপির প্রস্তুতি

       অসন্ন জাতীয় সংসদের ৭৮টি আসনের বিদায়ী নির্বাচনে সামরিক শোষকের সমর্থকদের পূর্ব বঙ্গ থেকে বিজয় ছিনিয়ে নেয়া নিশ্চিত করতে, পূর্ব অনুমিতভাবেই ইয়াহিয়া খানের প্রশাসন নির্বাচনে কারচুপির প্রস্তুতি নিয়েছে।

       পূর্ব বঙ্গের তাবেদার রাজ্যপাল ডক্টর এ. এম. মালিক নিউ ইয়র্ক টাইমস এর ম্যালকন ডাব্লিউ ব্রাউনের কাছে এক স্বীকৃতিতে জানান, “বিদায়ী নির্বাচনে প্রচুর অসঙ্গতি রয়েছে”।

Scroll to Top