অনুবাদঃ এ. এস. এম. হাসান লতিফ
<৬,৪৯,৬৬৬-৬৬৭>
শিরোনাম | সংবাদপত্র | তারিখ |
সম্পাদকের মন্তব্য ও
পরামর্শ |
বাংলাদেশ নিউজলেটার
শিকাগো: নং. ৭ |
২০ আগস্ট, ১৯৭১ |
সম্পাদকের মন্তব্য
আমাদের বিগত নিউজলেটারটি প্রকাশিত হবার পর বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সংঘটিত হয়েছে।
.
১। পাকিস্তানে সকল প্রকার সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগীতা স্থগিত করার জন্য মন্ত্রীসভা গালাঘর সংশোধন অনুমোদন করেছে। এটি প্রধানত সম্ভব হয়েছে এদেশে সমগ্র বাংলাদেশী গ্রুপের প্রচেষ্টায় ও আমাদের অনেক আমেরিকান বন্ধুদের কারণে। বাংলাদেশ তথ্য কেন্দ্র ক্যাপিটল হিলে তদবিরে যাবতীয় কাজ সমন্বয় করেছে। আমরা সংশ্লিষ্ট সকল সহায়তাকারীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি তাদের নিরলস প্রচেষ্টার জন্য যা ব্যতীত মন্ত্রীসভায় এরকম ব্যাপক সমর্থন পাওয়া যেত না।
.
আমাদের পরবর্তী বাধা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট। ইতোমধ্যেই সেখানে ৩২ জন সিনেটর রয়েছেন যারা সিনেটে স্যাক্সবো-চার্চ সংশোধণে পৃষ্ঠপোশকতা করেছেন। সেখানে অল্প কয়েকজন সিনেটর রয়েছেন যারা পৃষ্ঠপোশকতা করেননি এবং পাকিস্তানে সকল সহায়তা প্রদান বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। সেপ্টম্বরের শেষে অথবা অক্টোবরের শুরুতে কোন এক সময়ে সিনেটে সংশোধনের জন্য বিবেচণা করা হলে খুব বড় ধরণের কোন সমস্যা আমরা দেখছি না। যাহোক, সিনেট এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ না করা পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রম স্থগিত করতে পারি না। এজন্য সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে সিনেটে তদবীর করতে বিপূল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবীর প্রয়োজন পড়বে। আমরা আপনাদের সাবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি, এখন থেকেই ঐ সময় ওয়াশিংটন ডি.সি.তে অবস্থানের লক্ষে প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য। অক্টোবরে সাধারণ পরিষদের সভার সময় জাতি সংঘে তদবীরের প্রয়োজন হতে পারে।
.
২। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ঘটেছে যা হলো ওয়াশিংটন ডি.সি. -এর পাকিস্তান দূতাবাস ও জাতি সংঘের পাকিস্তান মিশনে কর্মরত সকল বাঙ্গালী কূটনৈতিক ও কর্মকর্তারা গত ০৪ আগস্ট, ১৯৭১ তারিখে পক্ষত্যাগ করেছেন। আমরা তাঁদের সকলকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি যাঁরা পক্ষ ত্যাগ করেছেন ও গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। আমরা আশা করি এর ফলে দীর্ঘ প্রতিক্ষিত আন্দোলনের সূচনা হবে যার ফলে পাকিস্তান সরকারে এখনও কর্মরত সকল বাঙ্গালী কর্মকর্তা পাকিস্তানের পক্ষত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের আনুগত্য প্রকাশ করবে।
.
৩। একই সময়ে জনাব মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকির রাষ্ট্রদূত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে আগমনও পক্ষত্যাগের গুরুত্বকে বৃদ্ধি করেছে। জনাব এম. আর. সিদ্দিকি, যিনি চট্টগ্রাম থেকে জাতীয় এসেম্বলীর একজন সদস্য, বিগত ০৬ আগস্ট, ১৯৭১ এ ওয়াশিংটন ডি.সি. তে এসে পৌছেছেন। তিনি বর্তমানে এদেশে অবস্থানরত বাঙ্গালীদের সাথে পরিচিত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। তিনি ইতোমধ্যেই নিউ ইয়র্কে একটি সংবাদ সম্মেলণ করেছেন ও বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। আগামী এক/দুই সপ্তাহের মধ্যই তাঁর মাধ্যমে ওয়াশিংটন ডি.সি.তে একটি বাংলাদেশ মিশন উন্মুক্ত হবে। আমরা জনাব সিদ্দিকি’কে স্বাগত জানাচ্ছি এবং আমাদের হৃদয় নিংড়ানো সহযোগীতার হাত প্রসারণসহ শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
—————————————————————-
বাংলাদেশ গ্রুপের কার্যক্রম গ্রহণের জন্য পরামর্শ
.
ক) বাংলাদেশ মিশন, কোলকাতা হতে প্রাপ্ত টেলিগ্রামের পরামর্শক্রমে আমারদের উচিৎ হবে শেখ মুজিবের বিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ও তাঁর অবিলম্বে মুক্তির দাবীতে যুক্তরাষ্টসহ কানাডার বিভিন্ন স্থানে র্যালির আয়োজন করা। এবং আপনাদের বন্ধুদের এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট নিক্সন, জনাব উ. থান্ট, এ্যামেনেস্টী ইন্টারন্যাশনাল (ঠিকানা: তুরানগাইন লেইন, ফারিংডন স্ট্রীট, লন্ডন ইসি৬, ইংল্যান্ড) বরাবর লিখতে বলুন। টেলিগ্রামের জন্য প্রস্তাবিত ফরমেটঃ
“Pakistan military court holding secret
trial for Bengali leader Sheikh Mujibur Rahman on fictitious charges. We urge you to use your good offices to prevent President Yahya from doing so”.
.
[পাকিস্তানী সামরিক আদালাত কাল্পনিক অভিযোগে গোপনে বাঙ্গালী নেতা শেখ মুজিবের বিচার করছে। আমরা আপনার মহান দপ্তরের মাধ্যমে প্রেসিন্ডেন্ট ইয়াহিয়াকে এ কাজ হতে নিবৃত করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।]
.
খ) দখলকৃত বাংলাদেশে জাতি সংঘ পর্যবেক্ষণ দলের পর্যবেক্ষণের শর্ত পাকিস্তান কর্তৃক মেনে নেয়ার নেপথ্যের হীন পরিকল্পণা তুলে ধরুণ। এই নিউজলেটারে অপর কোনও পাতায় প্রকাশিত জনাব সিদ্দিকি’র বক্তব্য হতে যুক্তি তুলে ধরুণ।
.
গ) অন্যান্য যে কোন স্থানের চেয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকার মানুষের কথা শুনতে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট সদস্যগণ বেশী বাধ্য। আপনাদের এলাকার স্থানীয় পত্রিকাগুলোর সম্পাদকীয়তে কিংবা মন্তব্যে এর অনুকূলে কিছু প্রকাশিত হলে অনুগ্রহ করে সেগুলোর কপি আপনাদের সিনেটরদের নিকট প্রেরণ করুন।
.
ঘ) সম্প্রতি স্যাক্সবো-চার্চ সংশোধণীর অনুরূপ একটি রেজ্যুলুশন কার্যকরের নিমিত্তে ম্যাসাচুসেটস্ অঙ্গরাজ্যে অনুমোদিত হয়েছে। অনুরূপ রেজ্যুলুসন অনুমোদনের জন্য আপনাদের নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যের আইন প্রণেতাদের ও সহ-পৃষ্ঠপোশকদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করুন। এ ধরণের সকল রেজ্যুলুশন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের নিকট প্রেরণ করা হবে এবং তা হয়ত তাঁর ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলবে.