অনুবাদঃ তানভীর হেদায়েত
<৬, ৬০, ৬৮৬-৬৮৮>
শিরোনামঃ সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বাংলাদেশ তৎপরতা
সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ নিউজ লেটার। শিকাগো; নম্বর – ১২
তারিখঃ – ১০ ই নভেম্বর, ১৯৭১
.
সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বাংলাদেশ বিষয়ক কর্মকাণ্ড
অ্যান আরবর, মিশিগান
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ অনুষদ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত “ফ্রেন্ডজ অফ বাংলাদেশ” নামক সংগঠন ৬ই নভেম্বর, ১৯৭১ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রাবাসে একদিনের অনশন কর্মসূচীর আয়োজন করেছে। অধ্যাপক রডরিক হুবার এবং জনাবা ডেব্রাহ বার্নহার্ড বাংলাদেশের ত্রাণ তহবিল সংগ্রহের জন্য এই কর্মসূচীর আয়োজন করেন।
২৮শে অক্টোবর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের অনুষ্ঠানে, “ফ্রেন্ডজ অফ বাংলাদেশ” সংগঠনের সমন্বয়ে বাংলাদেশের উপর পাক সেনাদের পাশবিক নির্যাতন ও বর্বরতার চিত্র একটি নাটকের মাধ্যমে মঞ্চায়স্থ করা হয়। অধ্যাপক পিটার হুক এবং শ্রীমতী স্নেহলতা দীক্ষিত এর পরিকল্পনায় এই নাটকে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ এবং এর পেছনে আমেরিকার ভূমিকা তুলে ধরা হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর এ. আর. মল্লিক এবং প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ডক্টর আসহাবুল হক ( উভয়ই জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ) , গত ২৬শে অক্টোবর, ১৯৭১ এ পূর্ব ল্যানসিঙ্ক এর একটি জনসভায় বক্তব্য দেন এবং স্থানীয় টিভি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন।
একই দিনে তারা অ্যান আরবরে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং অনুষদ সদস্যদের এক সভায় বক্তব্য দেন।
গ্র্যান্ড র্যাপিডস, মিশিগান
আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্বাধীনতা পরিষদ এবং YWCA এর শান্তি গোষ্ঠীর কার্যনির্বাহী দলের যৌথ পরিচালনায় YWCA কেন্দ্রে গত ১১ই অক্টোবর, ১৯৭১ এ বাংলাদেশের সমসাময়িক অবস্থার অবগতির জন্য এক সম্মেলন আয়োজিত হয়। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশের সমিতির সভাপতি জনাব মোজাম্মেল হককে এই শিক্ষা সম্মেলনে বক্তব্য দেবার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। শিক্ষা সম্মেলনের শেষে মিসেস জ্যানেট ম্যায়ের এর সভাপতিত্বে স্থানীয় জনগণকে বাংলাদেশের সমসাময়িক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত এবং ত্রাণ তহবিল সংগ্রহের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি বাংলাদেশ সংঘ গঠন করা হয়। জনাব হক, গ্র্যান্ড ভ্যালী স্টেট কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশেও বক্তব্য রাখেন।
মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলের বাংলাদেশ সমিতি
মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলের বাংলাদেশ সমিতির এন বিবৃতিতে জানা যায়, সংগঠনের প্রতিনিধিরা ক্যাপিটাল হিল, ওয়াশিংটন ডি.সি. র উপর সর্বদা সতর্ক নজর রাখছে। তাদের সাথে কলম্বাস, ওহাইও অঙ্গরাজ্যের সংগঠন ” ফ্রেন্ডজ অফ ইস্ট বেঙ্গল ” এর প্রতিনিধিরাও ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে।
বাংলাদেশের প্রচারণার সাথে সম্পৃক্ত সংগঠনগুলো বর্তমানে বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংঘের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করছে। এর মধ্যে পারডিউ, ওহাইও অঙ্গরাজ্য, মায়ামি-পশ্চিমাঞ্চল, একরন, কেস-পশ্চিমাঞ্চল এবং ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য উল্লেখযোগ্য। প্রচারণার মাধ্যমে শিক্ষা সমাবেশ, সাহিত্য বিতরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্র সমূহে চিত্র প্রদর্শনী এবং তহবিল সংগ্রহ করা হয়।
সংগঠনটি বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য শীতবস্ত্রের এক বিশাল চালান পাঠিয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা পরিষদ
গত ২৩শে অক্টোবর, ১৯৭১ এ জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী ডক্টর এ. আর. মল্লিক এবং ডক্টর আসহাবুল হক বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা পরিষদের পরিচালনা পর্ষদের এক সভায় উপস্থিত থেকে বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক ও সামরিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরেন।
একটি জীবন বাঁচাতে একদিনের উপবাস
৩রা নভেম্বর, বুধবার; যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্ররা একদিন উপবাস করবে। তাদের মধ্যাহ্নভোজ, নাস্তা এবং এই সম্পর্কিত অর্থ যা তারা খাবারের জন্য খরচ করতো, তার পরিবর্তে সেদিনের টাকা পশ্চিমবঙ্গের শরণার্থী শিবিরের লক্ষাধিক ক্ষুধার্ত শরণার্থীদের খাবারের জন্য দান করা হবে। “৩রা নভেম্বর, একটি জীবন বাঁচাতে একদিনের উপবাস” নামক এই প্রকল্পের সাথে বিভিন্ন সংগঠন সম্পৃক্ত রয়েছে। সংগৃহীত সকল তহবিলের অর্থ অক্সফাম-আমেরিকার মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।
তিন হাজার কলেজ এবং ৩০,০০০ উচ্চ বিদ্যালয় এই প্রকল্পে অংশ নিতে পারে। রোড আইল্যান্ড এবং আরাকান্সাস রাজ্যের রাজ্যপাল ৩রা নভেম্বেরকে তাদের রাজ্যে “পূর্ব পাকিস্তান শরণার্থী” দিবস হিসেবে ঘোষণা দেন।
মৃত্যুর দূতের সাথে মিস ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজ এর বিবাহ
শিকাগোর ” ফ্রেন্ডজ অফ ইস্ট বেঙ্গল ” সংঘ, ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজ এর বিরুদ্ধে তাদের প্রচারণা জারি রেখেছে। ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজ পাকিস্তানের সামরিক জান্তার অস্ত্র ও সেনা বহর বাংলাদেশে বহনের সুবিধার্তে ২টি বোয়িং ৭০৭ বিমান ইজারা দেয়। ২১ শে অক্টোবর “ফ্রেন্ডজ” সংঘ ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজ এর সাথে মৃত্যু দূতের এক “প্রতীকী বিয়ে” র আয়োজন করে। বিবাহ অনুষ্ঠানটি ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজএর কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। বিপুল সংখ্যক শিকাগোবাসী এই বিবাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল।
বাংলাদেশের জন্য জোয়ান বায়েজের গান
অ্যান আরবর, ২৪শে অক্টোবর:- ক্রাইস্লার এরেনায় ২০ হাজার শ্রোতার উপস্থিতিতে জোয়ান বায়েজ ২ ঘণ্টা ব্যাপী সঙ্গীত পরিবেশন করেন। জোয়ানের সঙ্গীতে মূলত নিক্সন প্রশাসন এবং সংস্থাপন রাজনীতির উপর ক্ষোভ ফুটে উঠে। বাংলাদেশের সত্যিকার রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই গত রাতের বেশ কিছু বিশেষ গানের সৃষ্টি।
“যখন সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়ে
ঝোরে পড়ে লক্ষ বাংলাদেশীর প্রাণ ”
জোয়ান উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দেশে আবেদন করেন বাংলাদেশকে সমর্থন করতে এবং যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী শরণার্থীদের সাহায্য করতে।
বাংলাদেশের কল্যাণে রবিশংকরের অবদান
আইওয়া শহরের “আইওয়া বেঙ্গল ত্রাণ সংগঠন” এর আয়োজনে গত ২১শে অক্টোবর ,১৯৭১ এ স্বনামধন্য সেতারবাদক ওস্তাদ রবি শংকর বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে এক অনুষ্ঠান করেন। অনুষ্ঠানের পূর্বে এই সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের উপর নেমে আসা বিপর্যয়ের মাত্রা এবং এর ফলশ্রুতি সম্পর্কে বিশাল প্রচারণা চালানো হয়।
অনুগ্রহ করে লক্ষ করুন
১. মুক্তি বাহিনীর প্রচুর পরিমাণে শীত বস্ত্র, ঔষধ, তাবু এবং কম্বল প্রয়োজন। আপনি আশ্চর্যিত হবেন, এসব সামগ্রী নিজ প্রচেষ্টায় নিজস্ব সম্প্রদায় থেকে কি বিপুল পরিমাণে সংগ্রহ করা সম্ভব। সংগঠনের মাধ্যমে আরও বেশী সংগ্রহ করা সম্ভব। আজকেই উদ্যোগ নিন। মুক্তিবাহিনীর কাছে বিনা মূল্যে এসব সামগ্রী বিমানে পরিবহনের জন্য যোগাযোগ করুন —
ডক্টর মোহাম্মাদ ইউনুস
৫০০ প্যারাগন মিলস রোড। এপার্টমেন্ট- বি-৭
ন্যাশভিল, টেনেসি – ৩৭২১১
ফোনঃ- (৬১৫) ৮৩৩-৩০৬৪
২. চিকিৎসকগণ সহজেই ঔষধ প্রস্তুতকারক কারখানা থেকে লিখিত ভাবে এবং সহকর্মীদের নমুনা ঔষধ দান করার আহবান জানিয়ে বিভিন্ন ঔষধ সংগ্রহ করতে পারেন। ন্যাশভিলের চিকিৎসকগণ ইতোমধ্যে ৯০ বাক্স ঔষধ মুক্তি বাহিনীর হাসপাতালে পাঠিয়েছে। আপনিও এই কাজে সাহায্য করতে পারেন। বিনামূল্যে বিমানে পরিবহনের জন্য উপরে উল্লেখিত ঠিকানায় যোগাযোগ করুন।
৩. আমরা আমাদের পাঠকের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে চিঠি পেয়েছি। চিঠিতে তারা মাসিক সদস্যপদের মাধ্যমে বাংলাদেশ নিউজ লেটার পত্রিকা প্রকাশনায় অবদান রাখার আশা ব্যক্ত করেছেন। আমরা এই মুহূর্তে আলাদা করে পত্রিকার জন্য কোন অবদান গ্রহণ করছিনা। তবে আমরা দৃঢ়ভাবে পাঠকদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর কার্যক্রমের সাহায্য ও সমর্থনে অবদান রাখতে। আপনি কি মাসিক / সময়মত আপনার অবদানের অংশ দিতে পারবেন না?