<৪,১২৬,২৩২-২৩৩>
অনুবাদকঃ সৈয়দা ইসরাত জাহান কনক
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১২৬। “বাংলাদেশ”-আমেরিকাস্থ ইস্ট পাকিস্তান লীগের মুখপাত্র | “বাংলাদেশ” ভল্যুম ১ নম্বর ১ | ৩১ শে মার্চ, ১৯৭১ |
বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্রস্থ পূর্ব পাকিস্তান লীগের একটি অঙ্গসংগঠন, ইনর্কোপরেট।
২৬৬৭ ব্রডওয়ে, নিউইয়র্ক, এন. ওয়াই. ১০০২৫
ভল্যুম ১ নম্বর ১ মার্চ ৩১, ১৯৭১
মুজিবের আহ্বান
নিমোক্ত পাঠ্যাংশটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে বিশ্ববাসীর জন্য একটি সম্প্রচারিত বার্তা, কলকাতার নিকটে একটি বেতার স্টেশন থেকে তা মনিটর করা হয়, শুক্রবার সকালে, ২৬ শে মার্চ, ১৯৭১ সালে। সম্প্রচারিত হওয়ার সময় ৯ টা ৮ মিনিট, ৫০০ কিলোসাইকেল পার সেকেন্ড: “পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী হঠাৎ আক্রমণ করে ঢাকায় অবস্থিত পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের ভিত্তি পিলখানা এবং রাজারবাগ পুলিশ স্টেশন, ২৬ শে মার্চ, মধ্যরাতে এবং অসংখ্য নিরস্ত্র মানুষদের হত্যা করে। ঢাকায় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস এবং পুলিশ বাহিনীর সাথে কঠোর যুদ্ধ হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মানুষ প্রাণপণে শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করছে। বাংলাদেশের সর্বত্র সর্বস্তরের জনগণ শত্রুবাহিনীদের প্রতিহত করার চেস্টা করছে। আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন এবং মুক্তির জন্য সংগ্রামে আপনাদের সাহায্য করুন। জয় বাংলা। ” -শেখ মুজিবুর রহমান |
বাংলাদেশই কেন
এটি বাংলাদেশের প্রথম সমস্যা। ইহাই একমাত্র কাজ যতক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তানি আগ্রাসকগণ, আমাদের শহরগুলোতে বোমাবর্ষণ ও জ্বালিয়ে দিচ্ছে এবং নিরস্ত্র মানুষদের হত্যা করছে, আমাদের পবিত্র মাটি ছেড়ে না যাচ্ছে, পাঠকগণ, আপনাদের বলে রাখছি, পাকিস্তানিরা আমাদের সকল জনগণের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত, রক্ত ও অশ্রু দিয়ে কেনা স্বাধীনতা, নিষ্প্রদীপ করার নিরর্থক চেস্টায় পর্যবসিত হয়েছে।
যে ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমাদের জাতির জন্ম হয়েছে, তা নির্ভয়ে প্রকাশ করার জন্য বাংলাদেশকে উদ্দ্যোগী হতে হবে, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে স্বদেশবাসীদের আশা এবং আকাঙ্খা নিশ্চয়ই এদেশে বসবাসরত ক্লিষ্ট মানুষদের আশা এবং আকাঙ্খার সাথে বিশ্বস্ত।
– সম্পাদকীয় বোর্ড
আমেরিকা ইস্ট পাকিস্তান লীগ অভিনন্দন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশি মানুষদের এবং ৭৫ মিলিয়ন বাঙালীর নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার সেই ঐতিহাসিক ঘোষণার সংবাদ বহন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা বাংলাদেশ রেডিও থেকে সম্প্রচার করা হয়।
যখন এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং সুখের ঘটনা হতে পারত , আমরা এখন এ উদযাপন সংযত করছি। আমরা সবাই জানি যে; পশ্চিম পাকিস্তানি অধিকারভুক্ত বাহিনী ঠিক এ মুহূর্তে বাংলাদেশে নির্মম এবং অসভ্য কর্মকান্ড চালাচ্ছে আমাদের নিরস্ত্র এবং নিরপরাধ মানুষদের বিরুদ্ধে। ওয়াশিংটন প্রদেশ বিভাগের মুখপাত্র বলেন, আমেরিকানগণ ঢাকাতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে, ঢাকা শহর জুড়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের ব্যাপক গোলাবর্ষণের কথা জানাতে পৌঁছেনেন। আন্তজার্তিক প্রেস থেকে আপনি জেনে থাকবেন যে, পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী বোমারুবিমান, ট্যাংক, ভারী কামান, মেশিনগান, জাহাজি বোমা ব্যবহার করছে আমাদের অসহায় মানুষদের বিরুদ্ধে।
এ বিশ্বের সকল মুক্তিকামী এবং বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ অবশ্যই নিন্দা করবে, বাঙালিদের বিরুদ্ধে এরূপ মধ্যযুগীয় নিষ্ঠুর হত্যালীলা এবং নগ্ন আগ্রাসনের যাদের অপরাধ ছিল আত্মসংকল্পের জন্য অবিচ্ছেদ্য অধিকার চাওয়া। পূর্ব পাকিস্তানের ৭৫ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানের পতাকাতল থেকে বের হয়ে এসে তাদের ভাগ্যকে একটি আকৃতি দিতে চেয়েছিল, পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা তারা নির্মমভাবে শোষিত হয়েছিল,যখনি তারা এটি প্রতিহত করতে চেয়েছিল কিংবা তাদের ন্যায্য ভাগ চেয়েছিল তখনই তাদের মেশিনগান দ্বারা নির্দয়ভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।
পশ্চিম পাকিস্তানি মিলিটারি মেশিনের অসভ্যতার নিন্দা প্রকাশ করার মত ভাষা আমাদের নেই। আমাদের নিরীহ মানুষদের বিরুদ্ধে ইহার নৃশংস এবং ভয়ঙ্কর মধ্যযুগীয় সন্ত্রাস কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক প্রেসে পরিপূর্ণভাবে রিপোর্ট করা হবে।
আলী আহমেদ কর্তৃক।
যুক্তরাষ্ট্রস্থ বাঙালিরা বাংলাদেশের জন্য আত্মত্যাগের সংকল্প নিল
আমেরিকাস্থ ইস্ট পাকিস্তান লীগের মিটিং অনুষ্ঠিত হয় নিউইয়র্কে, ২৮ মার্চ, ১৯৭১ সালে, সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার ৩০০ এর অধিক বাঙালি তাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতার দাবিতে একত্রিত হয়। তাছাড়া এ মিটিং আরো অনুরোধ জানায় পশ্চিম পাকিস্তানি আগ্রাসকদের বিরুদ্ধে বন্ধুরাষ্ট্র সমূহের সরকারদের, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং ভারতকে, যাতে তারা চট্রগ্রামে অবস্থিত মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে, শর্তাধীন বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুত স্বীকৃতি দেয় এবং যথাসম্ভব সাহায্যের হাত বাড়ায়।
ইন্ডিয়ার সংসদ সমাধান গ্রহণ করল
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভারতের দু’কক্ষবিশিষ্ঠ সংসদে সমাধানের প্রস্তাব উস্থাপন করেন ৩১ মার্চ, ১৯৭১ সালে, পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব বাংলার মানুষের উপর বলপ্রয়োগ এবং নিরস্ত্র মানুষের উপর গণহত্যার “দ্রুত অবশানের” দাবি করে তিনি বলেন, “নিয়মানুগ ধ্বংসকরণ দ্রুত তুলতে হবে এবং বন্ধ করতে হবে যা গণহত্যার পরিমাপক। “