<৪,১৩১,২৪১-২৪২>
অনুবাদকঃ ওমর বিন কিবরিয়া
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৩১। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও জনগনের প্রতি বাংলাদেশের জনগনের আবেদন | আমেরিকান লীগ অফ বাংলাদেশ প্রকাশিত বুলেটিন | ১৫ এপ্রিল,
১৯৭১ |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও জনগনের প্রতি বাংলাদেশের জনগনের আবেদন
উপকূল অঞ্চলে মাত্র ৪ মাস পূর্বে একটি সাইক্লোন আঘাত করেছিলো যখন বাংলাদেশের জনগন (ভূতপূর্ব পূর্ব পাকিস্তান) বর্তমান সময়ের বৃহত্তম প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভোগ করেছে। সে সময় সমগ্র বিশ্ব সামরিক শাসনকালের চরম ঔদাসীন্য এবং উপেক্ষার সাক্ষী ছিল। আজ একই সামরিক জান্তা সম্পাদন করছে বর্তমান যুগের বৃহত্তম মানব সৃষ্ট ট্রাজেডি।
গত ৩ দিন যাবত সেনাদের দিয়ে মেশিনগান এবং বোমার মাধ্যমে গণহারে একসঙ্গে নিরস্ত্রদের গনহত্যা চলতে থাকে। হাসপাতালগুলোতে বোমা হামলা হয়েছিলো , জনবহুল এলাকা গুলো সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংস হয়েছিলো , নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষদের রাস্তায় হত্যা করা হয়েছিলো চিত্রটা এমনই ছিল যেটি ওয়ার্ল্ড প্রেস কে ঢাকায় অবস্থানকারী বিদেশি প্রতিনিধির মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে হত্যাকাণ্ড যখন শুরু হয়েছিলো।এটি সামরিক বাহিনীর জঘন্য পরিকল্পনার একটি মাপকাঠি-যে তারা বিদেশী প্রতিনিধিদের বন্দুকের মুখে তাড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করে। যা আধুনিক ইতিহাসের নজিরবিহীন গণহত্যার স্থান করে নিয়েছিলো।
বাংলাদেশের জনগনকে নিয়মিতভাবেই হত্যা করা হচ্ছিলো কারন তারা এটি চেয়ে অপরাধ করেছিলো যে, ইয়াহিয়া পরিচালিত সামরিক জান্তা জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।যখন তিনি অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন এই প্রতিজ্ঞা ইয়াহিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবেই করেছিলেন এবং গত বছরের অক্টোবরে জাতিসংঘের সাধারন অধিবেশনের পূর্বে পুনরায় বলেছিলেন।
যদি সেখানে কোন সন্দেহ ছিল,এই মাসের ঘটনাগুলিতে এটাই পরিষ্কার হয়েছে , যে সামরিক জান্তার জনগনের কাছে ক্ষমতা ত্যাগের কোন ইচ্ছাই ছিল না , অথবা বাংলাদেশের উপর থেকে তাদের প্রভাব হারানোর ইচ্ছাও ছিল না। তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল যে বাংলাদেশকে অপরিবর্তিত অবস্থায় চলতে হবে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের কাছে বন্দী হয়ে থাকতে হবে, যদিও এর মানে ছিল কেবলই বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা।
বাংলাদেশের জনগন বেশ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে মুক্ত হতে চেয়েছিল একটি বাধ্য হয়ে থাকা জনগোষ্ঠী থেকে সাথে পশ্চিম পাকিস্তানি অত্যাচারীদের থেকে ।
এখানে কোন সন্দেহই নাই যেহেতু এটা তাদের প্রতিবাদের ইচ্ছার ফলাফল। তারা আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ,আমরা সজ্জিত আমাদের অজেয় বিশ্বাস নিয়ে। তারা ভাড়াটে সৈনিক আমরা মুক্তিযোদ্ধা। তারা অল্প আমরা অনেক। তাদের নীতি ক্ষয়িষ্ণু আমাদের নীতি বলিষ্ঠ। তারা হয়ত কিছু লড়াই জিততে পারে , কিন্তু আমরা যুদ্ধটাই জিতব।
বাংলাদেশে এখন যে লড়াই চলছে তা সমগ্র বিশ্বের আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তির পদক্ষেপ এর একটা অংশ। এটি সেই সংগ্রাম থেকে ব্যাতীক্রম নয় যেখানে আমেরিকার জনগণ দুই শতাব্দী পূর্বে তাদের শাসকের বিরুদ্ধে করেছিলো। আমেরিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশের মত,পূর্ব পাকিস্তান ও হাজার মাইল দূরে থাকা বহিরাগত শাসকদের স্বার্থে শোষিত হচ্ছিল।আপনাদের মত,আমাদেরও ট্যাক্স দিতে হচ্ছে দূরবর্তী সরকারকে যা মূলত আমাদের উন্নয়নের জন্য নয়,কোন রকম প্রতিনিধিত্বের অধিকার ছাড়াই। আপনাদের মত, আমরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের। আপনাদের মত, আমরাও সাফল্যের সঙ্গে লড়াই করব, এর জন্য যে কোন মূল্যই দিতে হোক না কেনো।
আমেরিকার জনগনের বিশাল ঐতিহ্যের কথা জেনে, বাংলাদেশের মানুষের এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই যে আমেরিকার সরকার এবং জনগণ এই পৈশাচিক গণহত্যা রোধে তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। যাই হোক ,সময় এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি নিষ্পাপ মানুষগুলোকে রক্ষা করতে হয় , এখনই প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়ার সময়।
মানবতার নামে,আপনাদের কাছে আমাদের আবেদন নির্বিচারে এই হাজার হাজার নিষ্পাপ নাগরিকদের হত্যা বন্ধ করতে বিশ্ব রাজনীতিতে ক্ষমতাশালী রাষ্ট্র হিসেবে আপনারা আপনাদের প্রভাব ব্যাবহার করুন।
আমাদের উপর উৎপীড়নকারীদের সাহায্য না করে আপনারা আমাদের সাহায্য করতে পারেন। আমরা আপনাদের কাছে প্রার্থনা করি আপনারা ইয়াহিয়া শাসকগোষ্ঠীকে যে কোন ধরনের সামরিক কিংবা অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদানে বিরত থাকবেন।
বাংলাদেশের নবগঠিত অস্থায়ী সরকারের সাথে পরিচিত হয়ে আপনারা আমাদের সাহায্য করতে পারেন। আপনার কাছে আমাদের প্রার্থনা খুব শিঘ্রই এই গণতান্ত্রিক সরকারের সাথে পরিচিত হউয়ার।
এপ্রিল ১৫ ,১৯৭১ আমেরিকান লিগ অফ বাংলা ৪১৬, সিঙ্কলেয়ার এভনিউ, গ্লেন্ডেল, সিএ ৯১২০৬