<৪,২৮৩,৬৪০-৬৪৩>
অনুবাদকঃ পুজা পলি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
২৮৩। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন এবং “বাংলাদেশ রিলিফ ফান্ডে” চাঁদা প্রদানের জন্য ছাত্র সমাজকে উদ্বুদ্ধ করার আবেদন জানিয়ে বৃটেনের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের উদ্দেশ্যে লিখিত চিঠি | ইউনাইটেড এ্যাকশন, বাংলাদেশের দলিলপত্র | ১২ অক্টোবর,১৯৭১ |
লক্ষাধিক শিশুহত্যা কি অব্যশই করণীয়?
রোড টু বাংলাদেশ
মহামান্য রাষ্ট্রপতি ১২ অক্টোবর,১৯৭১
একটি আবেদন
জনাব,
১.পূর্ববাংলায় সমরিক আক্রমণে প্রতিনিয়ত লক্ষাধিক নিরীহ মানুষ, নারী,শিশু হত্যা করা হচ্ছে। চারিদিকে ধিক্কারে সরব হয়েছে । যেন হিটলারের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখছে সমগ্রবিশ্ববাসী এবং তার স্বাক্ষী হচ্ছে।এসব নিপীড়িত মানুষের প্রতি তাদের সাহায্যদান খুবই ক্ষীণ তবুও তারা তাদের জন্য গাইছেন এবং বেঁচে থাকার লড়াইয়ে পাশে দাড়িয়েছেন।এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সহাবস্থান তুলোনায় সাহায্যের পরিমাণ অপরিমিত ছিলো।এটা প্রায় নব্বই লক্ষ জনসংখ্যার বিপরীতে(সুইডেন-নিউজিল্যান্ডের সমন্বিত জনসংখ্যা এবং লন্ডনে অবস্থিত জনসংখ্যার সমান)যারা যুদ্ধাক্রান্ত হয়ে ভারতের শরণার্থী শিবিরে রয়েছে।এই ভীতিকর অবস্থার শেষ হয়নি,থামেনি পথযাত্রা।সেই মার্চে শুরু হওয়া সামরিক আক্রমণের ফলস্বরূপ এটা এখনো বিদ্যমান।বর্তমানে,প্রতিমাসে ৪০,০০০ হাজার মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করছে।এ নির্মম অবস্থা আতংকজনক এবং অবর্ণনীয়।এপ্রেক্ষিতে আমরা ‘সানডে টাইমস’ এবং ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’ দুটি পত্রিকার অনুসন্ধান প্রতিবেদনের ছবি যুক্ত করছি।এই রিপোর্টটি তাদের প্রতিবেদনকারীরা স্বচক্ষে দেখেছিলেন মার্চে এবং জুন মাসে।বহুল আলোচিত এসব ছবি পশ্চিম বাংলার দুর্দশা, শরণার্থী শিবিরের এবং বাংলাদেশের পথগামী মানুষের একটি নির্ভেজাল প্রতিচ্ছবি তৈরি করে।
২.পূর্ববাংলার অভ্যন্তরীন অবস্থা অধিকতর খারাপ।সামরিক অত্যাচার এখনো চলছে।গ্রামগুলো এখনো পুড়ছে।হাজার হাজার লোক এখনো দেশত্যাগী হচ্ছে।ভিয়েতনাম যুদ্ধের মত এখন বাংলাদেশেও গৃহযুদ্ধের অবতারণা হয়েছে।এই যুদ্ধটা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ভয়াবহ আকার নিয়েছে এবং অনেকখানে অঙ্কুরিত হচ্ছে।গেরিলা আক্রমণের ফলে খাদ্য বিতরণ এবং যোগাযোগব্যবস্থা বিছিন্ন হয়ে পড়েছে।পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পুনরায় সংগঠিত হতে পারে।চরম হুমকি মুখে আছে নারীরা এবং যদি যথাসময়ে উদ্ধারের কার্যক্রম না হয় তবে সেটা সাংঘাতিক আকার ধারণ করবে।মানব ইতিহাসে সেটা ভয়ানক দুর্বিপাক হয়ে উল্লেখ থাকবে।বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছেন,বিশ্বসংস্থাগুলো শীঘ্রই যদি কোন পদক্ষেপ না নেয় তবে ৪ কোটি মানুষ ধ্বংস হয়ে যাবে।
৩.আমরা আপনাদের কাছে আশাবাদী হয়ে লিখছি সেসব নারীদের জন্য দ্রুত কিছু করুন।ব্রিটিশরা দুর্দশাগ্রস্ত লক্ষাধিক মানুষদের জন্য গুরুত্ববহ স্থানে রয়েছে।আমরা বিশ্বাস করি বাংলার এই দুঃসময়ে আপনারা কিছু করার জন্য বিশেষ অবস্থানে আছেন।আমরা নির্দিষ্ট প্রস্তাবনা রাখার আগে আপনাদের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ মতামত এবং ছবি সংযুক্ত করবো যা এই দুরাবস্থার গাম্ভীর্য সম্পর্কে ধারণা দিবে :-
ক) মি. রেগ্ প্রেনটিস্ এম.পি,যিনি সংসদসদস্য ছিলেন এবং প্রতিনিধিরূপে পাকিস্তান এবং ভারত সফর করেছেন বর্তমান সংকটাবস্থা নিয়ে পর্যালোচনার জন্য।১৬জুলাই,১৯৭১ এ নিউ স্টেটমেন্টে তিনি লিখেছেন, “আমরা যখন রাস্তা দিয়ে ড্রাইভ করছিলাম….হাজারাধিক নতুন শরণার্থীকে রাস্তার অপরপাশে যুক্ত হতে দেখেছি,তারা শুধু চলেছে আর চলেছে, মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে, বিভিন্ন বয়সের মানুষেরা তাদের রান্নার জিনিসপত্র এবং নূন্যতম সম্পত্তি সাথে নিয়ে আসছিল,ছোট বাচ্চারা কয়েক মাসের শিশু কোলে নিয়ে ছিলো,কিছু মানুষ অসহায়ভাবে খাটের মাঝে শুয়ে ছিলো…এবং প্রতিনিয়ত প্রায় দশ লক্ষ মানুষ ভারতে শরণার্থী হয়ে পৌঁছেছিল।
খ) মাদার তেরেসা,যিনি কুষ্ঠরোগীদের নিয়ে ভারতের একটি গ্রামে মিশনারি প্রতিষ্ঠান করেছেন এবং ইতোমধ্যেই তিনি পোপ শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন।
২৮ সেপ্টেম্বর তিনি লন্ডন পৌঁছে জানিয়েছেন,
“পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিবেদনসমূহ শরণার্থীদের নিয়ে পুর্ণবিবেচনা করার দিকে দৃষ্টিগোচর নির্দেশ করে।”
যা এটাই প্রকাশ করে পথমানুষের আগমন তখনও থামেনি।
গ) ২৫ সেপ্টেম্বরে পোপ জরুরিভিত্তিতে রোমান ক্যাথলিক ত্রাণ কর্মকতাদের সভা ডাকলেন।এর বিষয়বস্তু ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকা মানুষের জীবিকার উপর। পোপ-এর আহ্বানের পরপরেই ক্যাথলিক ত্রাণ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জানান, বিশ্বের পরাক্রমশালীরা যদি শীঘ্রই তাদের সাহায্যে এগিয়ে না আসেন তবে কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশের নারীরা সর্বনাশা পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে।
ঘ) হাভার্ড মেডিকেল স্কুলের লিংকন সি চেন এবং জন ই রোডি লিখেছেন, “অনিতিবিলম্বে সম্মুখে সংকটময় অবস্থা। ১৯৪৩ সালের নারীদের মত একই প্রথা অর্ন্তভুক্তি হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের নারীদের।এই যুদ্ধাহত দেশটির প্রায় ৭৫লক্ষ মানুষ(এখন ৯০লক্ষ)ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।যেটা পূর্ব পাকিস্তানের অধিকতর খারাপ অবস্থার কারণে হয়েছে।বর্তমান মূল্য বিশ্বাসযোগ্যভাবে বিচার করা যায় খাদ্যের মজুদাবস্থা থেকে।এ মজুদকৃত খাদ্য শুধুমাত্র ২৫লক্ষের জন্য হবে।কিন্তু সেখানে ভূমিহীন কৃষক,মজুর,বর্গাচাষী,তাঁতী,শ্রমিক এবং গ্রামের গরিব মানুষেরা রয়েছে।কত ক্ষুধার্ত মানুষ মারা যাচ্ছে সেটা এখনো অজানা।
ঙ) মি.পিটার সোর,এমপি প্রাক্তন শ্রমিককল্যাণ মন্ত্রী,যিনি কিছুদিন আগেই ভারত এবং পূর্বপাকিস্তান সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন।৫ সেপ্টেম্বর তিনি ‘সানডে টাইমস্’পত্রিকায় লিখেছেন, “নারীদের অবস্থা যতটুকু দেখছি তা ছিল ভয়ানক।কেউ জানাতে পারছেনা পূর্ববাংলায় কতটুকু খাদ্য ঘাটতি রয়েছে….জরুরী প্রয়োজনীয়তা ভয়াবহতা এড়াতে পারছে না।ভারত পূর্বপাকিস্তানের প্রায় ৮০লক্ষ মানুষের জন্য এগিয়ে এসেছে।তারা ক্ষুধার কারণেশরণার্থী নয়,তারা শরণার্থী হয়েছে নিপীড়ন এবং ভয়ে। যদিওপূর্বপাকিস্তানে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে বিগত কয়েক মাসে,এখনও দলে দলে মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চলেছে।
চ) পশ্চিম বাংলার শরনার্থী শিবিরের দুর্দশার কথা বর্ণনায় নিকোলাস টোমালিন ‘সানডে টাইমস’-এ একটি লেখা প্রকাশ করেন।যার শিরোনাম ছিলো”লক্ষাধিক শিশুর মৃত্যু কি আবশ্যিক? “(সানডে টাইমস,২৬ সেপ্টেম্বর),”প্রতিটি সপ্তাহের শেষদিনে তারা দেখতে পায় তাদের বরাদ্দকৃত খাবার ফুড়িয়ে এসেছে(২০০গ্রাম চাল)।তারা দ্রুত খাবার পাবার আশায় সারারাত সারিবদ্ধভাবে হাঁটুগেড়ে কালো ছাতার নিচে বসে থাকে।বাঁশের লম্বা বেড়া দিয়ে ঘেরা জায়গাটায়।তাদের দেখতে খোঁয়াড়ে বাঁধা গবাদিপশুরর মতো লাগছিলো।”
“আমি দেখেছিলাম তাদের মধ্যে একজন(একটি শিশু)তার কাছের ঘরে ফিরছিল।তার ক্ষুধার্ত পরিবার তার জন্য অপেক্ষারত।তাদের খাবার সংগ্রহের এবং শেষ হওয়ার এটা ছিলো ৬ষ্ঠ দিন। সে মাত্র পাঁচ বছরের শিশু।সে জেনেছে কি হচ্ছে,সেই সাথে সে তার পরিবারের দায়িত্ববান সদস্য।সে দেখেছে তার পিতলের দুধের গ্লাস তার আরও ছয়জনের সাথে ভাগাভাগি করতে হচ্ছে।তার বাবা বড় বড় ঢোক গিলছে আর তার ভাইবোনেরা লোভীর মত পান করছে,শেষ পর্যন্ত এটিতে একটা বড় টেবিল চামচের সমপরিমাণ দুধ ছিলো শিশুটির জন্য।
এসব ছোট ঘটনাগুলো লাখো ঘটে চলেছে।বর্তমানে সবচেয়ে এটা সবার জন্য ভয়ংকর দুর্যোগ।এই শিশুগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে জন্য আরো অধিক খাদ্য সংযোজন প্রয়োজন।
৪.জনাব, আমরা এই উক্তিগুলো আপনাকে প্রেরণ করেছি,কিন্তু আমরা নিশ্চিত আপনি ইতিমধ্যে এগুলো জেনেছেন।আমরা লিখেছি কারণ আপনার সাহায্য এবং নৈতিক সমর্থনের প্রত্যাশা করছি।আমরা সন্দেহাতীতভাবে জানি,আপনি পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার যন্ত্রণাকাতর মানুষদের জন্য ত্রাণ পাঠাবেন।সমস্যারর বিশালত্ব প্রকান্ড কিন্তু সাহায্য অপ্রতুল।মানবতার দৃষ্টিকোণে, সংক্ষিপ্তাকারেও যথাসাধ্য প্রত্যেকেরর এগিয়ে আসা উচিত।
এ কাজের জন্য আয়োজনগুলো:-
আপনাদের কাছে আমাদের আবেদন,আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিক্যাল কলেজ কিংবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংগঠিত করে অর্থসংগ্রহ করুন”ইউনাইটেড এ্যাকশন বাংলাদেশ রিলিফ ফান্ড”এর নামে।আপনি আরও করতে পারেন-
ক)একটা নাচের অনুষ্ঠান বা অন্য কোন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থসংগ্রহ করতে পারেন।
খ)”হেল্প বাংলাদেশ উইক”দেখতে পারেন এবং লোকজনকে অনুদানের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
গ) সেসব লক্ষাধিক অনাহারী মানুষের জন্য শিক্ষার্থীদের দৃঢ়তা এবং তাদের অনুদানের হার দেখুন।
ঘ)শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানুন নিয়মিত অনুদান দেয়ার জন্য ব্যাংক অর্ডার দেয়ার নিয়ম।
ঙ)অর্থতহবিলের অন্যকোন মাধ্যম
চ)কিংবা আপনার সরকারের সরকারী বা অন্যকোন অনুদান খাতে।
আপনার সাহাযার্থে আমরা তৈরি।আপনার প্রয়োজনে আমাদের মধ্যে যে কোন একজন আপনার সাথে কথা বলতে প্রস্তুত।
৬)”ইউনাইটেড অ্যাকশন বাংলাদেশ”-এর লক্ষ্য নির্দিষ্ট। ত্রাণ সংগ্রহ এবং পীড়িত মানুষের কাছে পৌঁছানো এদের উদ্দেশ্য।এই জন্যই এর নাম “ইউনাইটেড অ্যাকশন বাংলাদেশ রিলিফ ফান্ড”।ব্যাংকারা হলেন-
National Westminster Bank Limited
43 Kingway,London WC2B 6TN.
Ale No.01533118
Bank Code No.01-04-78
আপনার অনুদানটুকু সরাসরি এই অ্যাকাউন্টে,চেকে যা(ইউনাইটেড অ্যাকশন বাংলাদেশ রিলিফ ফান্ড)এর জন্য এবং যা A/C পে করা যাবে।
এই তহবিলের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আছেন-
১)অবঃ রেভ্ ট্রেভর হুডডেলস্টেন,বিশপ্ অফ স্টেফনি
২)লেডি গিফরড্
৩)অবঃ হোন রিচার্ড ক্রসম্যান,মেম্বার অফ পার্লামেন্ট
৪)জনাব.এস.আই.আজিজ,এ.এম.বি.আই.এ
আমরা আপনার বিশ্বস্ত
১)মো.এ.সামাদ খান
২)আর.ইউ.আহমেদ
৩)মো.আবদুর রব
৪)এ.মোতালিব
৫)…….
৬) এ.এইচ.জোয়ার্দার
ইউনাইটেড অ্যাকশন বাংলাদেশের জন্য