যুদ্ধকালে বৃটেনের বিভিন্ন শহরে মঞ্চায়িত নৃত্যনাট্য “অস্ত্র হাতে তুলে নাও” এর পান্ডুলিপি

<৪,২৮৪,৬৪৪-৬৪৯>

অনুবাদকঃ জিহাদ

শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৮৪। যুদ্ধকালে বৃটেনের বিভিন্ন শহরে মঞ্চায়িত নৃত্যনাট্য “অস্ত্র হাতে তুলে নাও” এর পান্ডুলিপি

 

বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি সংসদের দলিলপত্র রচনাকাল

আগষ্ট ১৯৭১

 

 

 

। । অস্ত্র হাতে তুলে নাও । ।

রচনা ও সুরারোপঃ এনামুল হক

 

[বৃষ্টির শব্দ। মেঘের গর্জন]

কিষাণীরা । ।  বরষা নেমেছে যেন বন্যাধারা

মেঘেরা ডাকিছে যেন বাজে নাকাড়া । ।

রিমঝিম রিমঝিম ঝরো ঝরো সারাদিন

পড়িছে আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি বিরামহীন

শ্যামল পৃথিবী হোলো আত্মহারা ।।

 

বিজুলী চমক দেয় জোনাকীরা ঝলসায়

বউ কথা কও পাখী এলো বুঝি জলসায়

ভরে দিক গানে প্রাণ শ্রাবণ ধারা ।।

 

[ভীষণ মেঘের গজীন। আরো বৃষ্টি বন্যা]

কিষাণ । ।     হায় হায় এইবার আমাদের কি হবে উপায়

              ফসলের সব ক্ষেত ডুবে গেল বরষায় । ।

              মাঠে ছিল পাকা ধান যত

              স্রোতে সব হোয়ে অবনত

              আমাদের রেখে গেল কঠিন ক্ষুধার তাড়নায় । ।

কিষাণী । ।     তবুও আসবে জোতদের

              চাইবে ধানের ভাগ তার

              কি করে ঠেকাবে তাকে আশা দেব কোন ভরসায় ।।

 

[ভীষণ মেঘের গজীন। ঠুলীর প্রবেশ]

টুলী । ।        টাক ডুমা ডুম বদ্যি বাজে শোনো স্বদেশ বাসী

              পঁচিশ টাকায় বিক্রি হবে পাঁচশ টাকার খাসি । ।

কিষাণ । ।     বাজার বেজায় সস্তা দেখি বলত ভাই খুলে

              এমন ভাবে দাও বুঝিয়ে যাই না যেন ভুলে ।।

টুলী । ।        দেশের যত সমস্যা ভাই উঠছে কেবল জমে

              তাই দেখে সব খান সাহেবদের ঘুমটা যাচ্ছে কমে

              সৈন্য-সেনা আর আমলা মিলে পাকাচ্ছে এক জোট

              ভুখা পেটে নাচতে নাচতে দিতে হবে ভোট । ।

কিষাণ । ।     বল কি হে ভোট দিয়ে কি পেটের ক্ষুদা যাবে । ।

টুলী । ।        ওই ভোটটা দিলেই গরম গরম পেটের খাবার পাবে

              টাক ডুমা ডুম বদ্যি বাজে শোনো স্বদেশ বাসী

              পঁচিশ টাকায় বিক্রি হবে পাঁচশ টাকার খাসি । ।

 

[টুলীর প্রস্থান। ছাত্র ও যুবক দলের প্রবেশ।]

যুবক দল । ।  নৌকার দলে ভোট দে সবে ভাই

              নৌকার দলে ভোট না দিলে বাংলার বাঁচাবার উপায় নাই । ।

এক ছাত্র । ।  দেশ শাসনের কেতাব নাই

              হিসাব করে লিখবে সবাই

              তাইত তোমার ভোটটা চাই

              নৌকার দলে ভোট দে সবে ভাই । ।

সকলে । ।     জয় বাংলা । । জয় বাংলা । ।

(যুবকদলের প্রস্থান।)

 

[ গোলাগুলির শব্দ। টুলীর প্রবেশ।]

টুলী । ।        টাক ডুমাডুম টাক ডুমাডুম টাক ডুমাডুম ডুম

              মার খেয়ে সব মরতে হবে জঙ্গী লাটের হুকুম

              বাংলাদেশের থাকবে শুধু নফর চাকর দাসী

              পাঁচশ টাকায় কিনতে হবে পঁচিশ টাকার খাসি

              ও মিয়াঁ ভাই কি করি উপায় কিসে বাঁচাই প্রাণ

              পশুর মত আসছে তেড়ে পাঞ্জাবী আর পাঠান ।।

কিষাণ । ।     কেমন কথা আইন মত সবাই দিলাম ভোট

              তাতেও দেখি খান সাহেবের বেজায় গরম চোট ।।

টুলী । ।        খান সাহেবদের মাথা মোটা ধার ধারে না কারো

              সারা জীবন শিক্ষা তাদের খুন কর আর মারো

              শাসন আর শোষণ করে নেইক কোনোই দায়

              সহজে কি কেউ ক্ষমতা ছেড়ে মরতে চায় । ।

কিষাণী । ।    হায় বাঙ্গালী হায় বাঙ্গালী

              বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দেশ বাঙ্গালী

              ঘুম কি এবার ভাঙ্গবে রে তোর

              রাত কেটে ঐ আসল যে ভোর

              আরো রক্ত দিতে যে বাংলাদেশ আজ কাঙালি ।।

 

[টুলীর প্রস্থান। ভীষণ গোলাগুলির শব্দ।]

কিষাণ । ।     সহসা শুনি যে কোথাও বাজিছে যুদ্ধের কোলাহল

              শিরায় শোণিতে জাগিছে হিংসার দাবানল

              যুদ্ধের হুঙ্কার আমি       তুচ্ছ করি

              অন্যায় শক্তিকে আমি           ব্যর্থ করি

              মৃত্যুকে করি যে রূদ্ধ            মৃত্যু দিয়ে

              হিংস্রকে করি যে স্তব্ধ           বজ্র দিয়ে

              জীবনের সৈনিক আমি অন্যায়ের সাথে মোর দ্বন্দ

              জীবন সার্থক হোক সত্য জেনে সেইত আনন্দ ।।

সকলে । ।     শক্তির যে করে অপব্যবহার

              শক্তির হাতে তার হবে সংহার।

              শৃংখল পায়ে পায়ে পরায়ে

              পশ্চাতে যে টানে জড়ায়ে

              বিশ্বের ঘৃণা তারে দহে বারবার

              তাই তার প্রতিকার জন্মের অধিকার । ।

কিষাণী । ।    এবারে উঠেছে ঢেউ

              ঘরে বসে নেই কেউ

              স্বাধীনতা সংগ্রাম

              চলবেই অবিরাম । ।

সকলে । ।     শরীরের কোষে কোষে

              প্রতিবাদ জ্বলে রোষে

              আছে যারা পরাধীন

              তাদের নতুন দিন । ।

 

[মুক্তিফৌজের পোশাক পরে কয়েকজনের প্রবেশ]

কিষাণী । ।    কি যে উল্লাস জাগে দিকে দিকে

              স্বাধীনতা নাম বুকে লিখে লিখে

                     তাপিত হাজার প্রাণ

              প্রলয়ের মত সারা দিনক্ষণ

              বিদেশী প্রভুর সব আয়োজন

                     ভেঙ্গে করে খান খান । ।

কিষাণ । ।     স্বাধীনতা বলবার

স্বাধীনতা চলবার

       লিখবার গাইবার বাঁচবার

ভাগ্যকে ভাঙতে

হাসতে কি কাঁদতে

চাই সব করবের অধিকার ।।

সকলে । ।     জন্মভুমি ওগো বাংলাদেশ

              তোমার ব্যথার করব যে শেষ

                           খামারে অথবা যত কারখানা কলে

                           আর কারো দাস হোয়ে খাটি দলে দলে

                           মনে হয় এইবার সিব উঠি ফুঁসে

                           করেছে যেমন ওই চীনে আর রূশে । ।

কিষাণ । ।     হে-

              মার জোয়ানো            হেঁইও

              জোরসে টানো            হেঁইও

              সবাস জোয়ান            হেঁইও

              হও আগুয়ান              হেঁইও

সকলে । ।     সাবধানে বাই

              আমরা সবাই

              মজুর কিষাণ

              বাঁচাই পরাণ

কিষাণ । ।     পেটের টানে            হেঁইও

              সবাই জানে        হেঁইও

সকলে । ।  হেঁইও রে          হেঁইও

              হেঁইও রে          হেঁইও

কিষাণ ও কিষাণী ।      কারখানাতে        খেত খামারে

                     শহরে গাঁয়ে আর পাহাড়ে

                     বেলা অবেলা সকাল বেলা

              টানছি বোঝা ঠেলছি ঠেলা

              মহাজনের মেশিন চালাই

              সাহেব সুবার বাড়ী বানাই

সকলে । । এই কপালে কিছুই নাই

              আমরা মজুর পথে বেড়াই

              আমরা খাটি ফসল ফলাই

              তাইত গানে আগুন ছড়াই

কিষাণ । ।   হে-

নয়া জামানা       হেঁইও

দেয় নিশানা        হেঁইও

সাবাস জোয়ান           হেঁইও

হও আগুয়ান              হেঁইও

সকলে । ।  সাবধানে ভাই

আমরা সবাই

মজুর কিষাণ

বাঁচাই পরাণ

কিষাণ । ।   পেটের টান        হেঁইও

সবাই জানে        হেঁইও

সকলে । ।  হেঁইও রে          হেঁইও

হেঁইও রে          হেঁইও

কিষাণ ও কিষাণী ।। রাতের শেষ সূর্য যেমন

আলোয় ভরায় সারা ভুবন

আসবে আসবে সেই সুদিন

আসবে সমাজ শোষনীয়

আসবে আসবে সেই স্বরাজ

সাম্যবাদের শ্রমিক রাজ

সকলে । ।  এসো মজুর কিষাণ ভাই

এবার সবাই করব লড়াই

সবার মুক্তি অবশেষে

আসবে আসবে বাংলাদেশে

কিষাণ । ।   হে-

মুক্তি যদি পেতে চাও            হেঁইও হেঁইও হেঁইও

অস্ত্র হাতে তুলে নাও            হেঁইও হেঁইও হেঁইও

বুক ফুলিয়ে এগিয়ে যাও হেঁইও হেঁইও হেঁইও

মুক্তি ফৌজে নাম লেখাও হেঁইও হেঁইও হেঁইও

যার বুকে আছে দেশের টান     হেঁইও হেঁইও হেঁইও

সে দিতে পারে নিজের প্রাণ     হেঁইও হেঁইও হেঁইও

সাবাস বাংলার মজুর কিষাণ    হেঁইও হেঁইও হেঁইও

সাবাস বাংলার নওজোয়ান      হেঁইও হেঁইও হেঁইও

সব বেদনার হবে শেষ    হেঁইও হেঁইও হেঁইও

স্বাধীন হবে বাংলাদেশ    হেঁইও হেঁইও হেঁইও

মুক্তি যদি পেতে চাও            হেঁইও হেঁইও হেঁইও

অস্ত্র হাতে তুলে নাও            হেঁইও হেঁইও হেঁইও । ।

রচনা কালঃ আগষ্ট, ১৯৭১।

যুদ্ধকালে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে মঞ্চায়িত।

Scroll to Top