২৫। রাজশাহীর গর্তে আরো নরকংকাল (৩৯৯)
সূত্র – দৈনিক বাংলা, ৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২
রাজশাহীর গর্তে আরো নরকংকাল
আধমরা লোকগুলোকে পশুরা মাটিচাপা দিয়েছিল
(নিজস্ব সংবাদদাতা প্রেরিত)
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে ষ্টেশনের পাশে নরকংকাল ভর্তি আরো গর্তের সন্ধান পাওয়া গেছে। দৈনিক আজাদের প্রতিনিধি ও রাজশাহী জেলা সংবাদিক ইউনিয়নের জেনারেল সেক্রেটারী জনাব মোহাম্মদ আবু সাইদকে হত্যার পর বর্বর পাক বাহিনী এই গর্তে পুতে রাখে। জানা গেছে যে, গত বছর ২৮শে জুন পাক বাহিনীর কতিপয় দালাল জনাব আবু সাইদকে ধরে নিয়ে যায়।
এই দালালদের মধ্যে তৎকালীন দৈনিক সংগ্রামের স্থানীয় প্রতিনিধিও ছিল। জনাব সাইদকে সার্কিট হাউসে নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে প্রায় এক সপ্তাহ আটক রাখা হয়। এরপর ৫ই জুলাই অপর ১৫ জন ব্যাক্তির সাথে জনাব সাইদকে জোহা হলে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে দিনাজপুরের জনৈক রেলওয়ে কর্মচারিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। বর্বর পাক বাহিনী মৃতদেহটি রেলওয়ে ষ্টেশনের দিকে বয়ে নিতে বন্দীদের বাধ্য করে। ষ্টেশনের পাশে একটি বাবলা গাছের নীচে তাদের সামনেই একটি গর্ত করা হয়। এরপর তাদের সকলকে জোর করে গর্তের মধ্যে ঠেলে দিয়ে বেয়োনেট দিয়ে খোঁচানো হয়। এই সাথে পাশ থেকে মাটি নিয়ে তাদের সবাইকে অর্ধমৃত অবস্থায় গর্তের মধ্যে চাপা দেওয়া হয়।
কিন্তু এদের মধ্যে রাজশাহী জিন্না ইন্সটিটিউটের পিয়ন আব্দুল কাদের, শ্যামপুরের জনৈক রুপভান মিয়া পরস্পরের সাহায্যে গর্তের মধ্য থেকে কোন রকমে উঠে ভারতে পালিয়ে যায়। বাংলাদেশে ফিরে আসার পর এদের কাছ থেকেই এই লোমহর্ষক কাহিনী জানা গেছে।
এ ছাড়া পাক বাহিনী আত্মসমর্পণের অব্যবহিত পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ছাত্র ও অপরাপর বুদ্ধিজীবীদের লাশ উদ্ধার করা হয়। শহরের পার্শ্ববর্তী গ্রাম সমূহের হাজার হাজার বাঙ্গালীকে বর্বর পাক বাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে লম্বা গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখে। এদেরকে গলা কেটে হত্যা করা হয় বলে জনৈক প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণীতে জানা গেছে।