৩৬। নৃশংসতার আরেক স্বাক্ষর ভারতেশ্বরী হোমস (৪১৯)
সূত্র – দৈনিক আজাদ, ৮ই ফেব্রুয়ারি ১৯৭২
নৃশংসতার আরেক স্বাক্ষর ভারতেশ্বরী হোমস
।। নিজস্ব নিবন্ধ ।।
একাত্তরের মে মাসে যখন জল্লাদ বাহিনী আক্রমণ করে তখন তাদের সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। বাংলাদেশে গণহত্যার কাপালিক দলের অন্যতম জল্লাদ ক্যাপ্টেন আয়ুব হোমসে ঢুকেই তীব্র ঘৃণা ভরে তাচ্ছিল্যের সাথে বলেছিলো এটা হিন্দু তৈরির কারখানা।
অথচ জাত ধর্মের বর্ণের এখানে কোন প্রশ্ন নেই। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে এখানে সবাই জ্ঞান অর্জন করতে পারে। সে বলেছিল এ কারণে যেহেতু সংখ্যালঘু তথা হিন্দুদের সম্পর্কে তারা এলার্জিক, তা ছাড়া ২৫শে মার্চ রাতে যখন তাদেরকে হত্যাযজ্ঞে পাণ্ডা কুখ্যাত টিক্কা খান বলেছিলো শেখ মুজিবের নেতৃত্বে এ দেশের সব মানুষ হিন্দু হয়ে গেছে অতএব তাদেরকে শায়েস্তা করতে হবে, মুসলমান বিবর্জিত এ সব পাকিস্তানীরা তার স্বাক্ষর রেখে গেছে বাংলাদেশের সর্বত্র।
ক্যাপ্টেন আয়ুব আরো বলেছিল, পাকিস্তান মুসলমানের জন্য, হিন্দুস্থান হিন্দুদের জন্য, বার্মা বৌদ্ধদের জন্য। পাকিস্তানে থাকতে হলে সবাইকে মুসলমান হতে হবে। এক পর্যায়ে হোমসের ছাত্রীদের সে নামাজের সুরাহ কেরাত জিজ্ঞাসা করে। স্বাভাবিকভাবেই হিন্দুরা তার জবাব দিতে পারেনি। আয়ুব তখনও রাগে থর থর করে কাঁপছিলো। তার মুখ থেকে মদের গন্ধ বেরিয়ে আসছিল। বলছিল, সবাইকে নামাজের সুরাহ কেরাত শেখাতে হবে। চোখে কাজল আর কপালে টিপ দেয়া চলবে না। আর তার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল হোমসের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল মিস সালমা রহমানের উপর। আয়ুবের সাহায্যকারী স্থানীয় জামাতে ইসলামের কুখ্যাত পাণ্ডা মওলানা অদুদের জনৈক ছেলে তাকে বলেছিল, “এদেরকে শায়েস্তা করতে হবে, ইসলামকে বাঁচাতে হলে এসব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলতে হবে।“ প্রিন্সিপাল মিসেস মুৎসুদ্দীকে শাসিয়ে বলেছিল, তোমরা হিন্দু, তোমরা ভারতের চর, আওয়ামী লীগের সমর্থক।
তিনি দেখেছেন কিভাবে পাক বর্বর বাহিনী মির্জাপুরের অসহায় নিরীহ বাঙ্গালীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, লাইন করে মেশিনগান দিয়ে শতশত বাঙ্গালীকে হত্যা করছে। বাড়িঘর লুটপাট করেছে। পশুরা হোমসের সকলকে শাসিয়েছে। ভয় দেখিয়েছে। যাওয়ার পথে হোমসের আর হাসপাতালের ক’জন দারোয়ানকে হত্যা করে গেছে।