॥আর একটি রেইড॥
আর একটি ঘটনার কথা আমি উল্লেখ করছি। দিনটি ছিল ৮ই জুলাই। ২৭শে জুন যে স্থানেটিতে আমরা এ্যামবুশ করেছিলাম, পাক সৈন্যরা সেখানে নতুন করে কতকগুলো বাঙ্কার করেছিল। নতুন করে তারা আরো অনেক সৈন্য এনে তাদের অবস্থানকে মজবুত করে তুলেছিল। আমরা প্ল্যান করলাম রেইড করে শত্রুর নবনির্মিত বাঙ্কারগুলো উড়িয়ে দেবো। ২৭ শে জুন তারিখে আমাদের হাতে প্রচণ্ড আঘাত খেয়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা সীমান্ত এলাকার দিকে আর আসতো না অথবা অবস্থান ছেড়ে অন্য কোথাও নড়াচড়া করা তা অর্থহীন বলে মনে করতো। ২৭শে জুন এবং ৮ই জুলাই তারিখের মধ্যে আমরা বার কয়েক শত্রুঘাঁটির কাছে ওঁৎ পেতে ছিলাম কিন্তু পাক সেনারা তাদের ঘাঁটি ছেড়ে না বেরুনোর জন্য বিশেষ সুবিধা করতে পারিনি। এই সময়ের মধ্যে পাকিস্তানী সৈন্যদের অবস্থানের উপর আমরা কয়েকবার ৩ ইঞ্চি মর্টার দিয়ে গুলিবর্ষণ করেছিলাম।
৮ই জুলাই তারিখে আমরা সমস্ত কোম্পানী নিয়ে দুই দিক থেকে শত্রুর এলাকায় ঢুকলাম। ভোর চারটার দিকে অগ্রসর হলাম আমরা। শত্রুর অবস্থান ভারত সীমান্ত থেকে বেশী দূর ছিল না। সিদাই থানা থেকে তাদের অবস্থানগুলো আমাদের নজরে পড়তো। আমরা শত্রুকে মাঝখানে রেখে দুই পাশ থেকে ঢুকলাম। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা রিকেয়েললেস রাইফেল ও মর্টার শত্রুর দিকে তাক করে রেখেছিলাম। আগে থেকেই সময় নির্দিষ্ট করে রেখেছিলাম যাতে একই সময় রিকেয়েললেস রাইফেল, মর্টার, রাইফেল সব কিছুর সাহায্যে আমাদের সৈন্যরা একযোগে শত্রুদের উপর আঘাত হানতে পারে। ভোর সাড়ে পাঁচটার সময় শত্রুর অবস্থানের উপর আমরা অতর্কিতে গুলিবর্ষণ শুরু করলাম। রিকেয়েললেস রাইফেলের গোলার আঘাতে শত্রুদের দুটো বাঙ্কার উড়িয়ে দেওয়া হলো। সবচেয়ে ভাল কাজ করেছিল মর্টারগুলো। আমরা পনেরো মিনিট গোলাগুলি বর্ষণ করার পর পাক সেনারা আমাদের উপর কামানের গোলাবর্ষণ শুরু করে দিল। ঐ এলাকার শত্রুর প্রতি সম্ভাব্য আক্রমণের স্থানগুলো তাদের কামানের লক্ষ্য কেন্দ্র হিসেবে পূর্বনির্দিষ্ট ছিল। জ্যামিতিক নিয়মমাফিক তাদের কয়েকটা গোলা আমদের অবস্থানের উপর এসে পড়ে। বিপদ বুঝে ঐখান থেকে আমরা আমাদের বাহিনী সরিয়ে নিয়ে আসি। ঐ আক্রমণে পাক বাহিনীর কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল প্রায় এক সপ্তাহ পরে বেসামারিক লোক মারফত আমরা সে খবর পাই। পাক সেনাদের ৬ জন সৈন্য মৃতের তালিকা পূর্ণ করেছিল।