৭.২২২.৬৬৪
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
২২২। রাজাকার, মুজাহিদ, আল বদর ও আল শামস বাহিনীঃ গঠন ও তৎপরতা | সংবাদপত্র | ১৯৭১ |
ফুলপুরে রাজাকারদের ট্রেনিং সমাপ্ত
ঢাকা, ৯ই জুলাই (এপিপি)।– ফুলপুর থানা ট্রেনিং ও উন্নয়ন কেন্দ্রের মাঠে ১৬৯০ জন রাজাকার-এর এক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এরা সকলেই সাত দিনের ট্রেনিং শেষ করেছেন। এই অনুষ্ঠানে ট্রেনিং প্রাপ্ত ব্যাক্তিরা ছাড়াও শান্তি কমিটির সদস্য, ইউনিয়ন কাউন্সিলরসমূহের চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ এবং বিপুল সংখ্যক জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ১৬০ জন রাজাকারকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এছাড়া দু’জন রাজাকারকে তাঁদের কৃতিত্ব ও কর্তব্য নিষ্ঠার জন্য নগদ টাকা পুরষ্কার দেয়া হয়।
ফুলপুর থানা থেকে মোট সাড়ে ছ’শ রাজাকার মনোনীত করা হয় এবং এদের সকলকেই ট্রেনিং দেয়া হবে।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানটি “পাকিস্তান জিন্দাবাদ”, “কায়েদে আযম জিন্দাবাদ” ও “পাকিস্তানের সংহতি জিন্দাবাদ” শ্লোগানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
- দৈনিক পাকিস্তান, ১০ জুলাই, ১৯৭১
কুষ্টিয়ার মুজাহিদ ও রাজাকারদের কুচকাওয়াজ-
কুষ্টিয়া, ১৫ই জুলাই, (এপিপি)।– গতকাল সকালে স্থানীয় ইউনাইটেড স্কুল ময়দানে মুজাহিদ ও রাজাকারদের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে পদস্থ সরকারী অফিসার ও গণ্য মান্য বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গসহ বহু সংখ্যক লোক উপস্থিত ছিলেন। জেলা কমিটির চেয়ারম্যান জনাব সাদ আহমদ দুই হাজার রাজাকারের অভিবাদন গ্রহণ করেন।
রাজাকারদের উদ্দেশ্য প্রদত্ত ভাষণে জনাব সাদ আহমদ ভারতীয় অনুপ্রবেশ-কারীদের বিরুদ্ধে মাতৃভূমি রক্ষার কাজে রাজাকাররা স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসায় তিনি তাদেরকে অভিনন্দন জানান।
তিনি তাঁদের প্রতি সূদৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং শত্রুদের ধ্বংস করার কাজে সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য আহবান জানান।
উৎসাহী রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং সমাবেশে যোগদানকারী জনতার একটা অংশ বিভিন্ন শ্লোগান সহকারে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। তারা “ পাকিস্তান জিন্দাবাদ” প্রভৃতি শ্লোগান দেয়। ……
- দৈনিক পাকিস্তান, ১৬ ই জুলাই, ১৯৭১
ইসলামপুর শান্তি কমিটির সভায় রাজাকার বাহিনী গঠিত
গত রোববার ইসলামপুর ইউনিয়ন শান্তি কমিটির অফিসে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ইসলামপুর ইউনিয়ন শান্তি কমিটির আহবায়ক জনাব মোবারক হোসেন সভাপতিত্ব করেন।
ইসলামপুর ইউনিয়ন শান্তি কমিটির এক প্রেস রিলিজে বলা হয় যে, সভায় প্রত্যেকটি ইউনিটের ২৫ জন করে লোক নিয়ে একটি রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। সভায় মহল্লার শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সভায় পাকিস্তানের সংহতি ও ঐক্যের জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়। পাকিস্তান বাহিনীর সময় মত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সভায় পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করা হয়।
- দৈনিক পাকিস্তান, ২৭ জুলাই, ১৯৭১
রাজাকাররা, ৭০ জন দুষ্কৃতীকারীকে হত্যা করেছে
রাজাকাররা ময়মনসিংহ জেলায় গত মাসে ৭০ জন রাষ্ট্র বিরোধী লোককে নিহত এবং বহুজনকে আহত করেছে। এছাড়া তারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করেছে। গতকাল সোমবার ঢাকায় এপিপি এ খবর পরিবেশন করেছে।
এখানে প্রাপ্ত বিস্তারিত খবরে প্রকাশ দুষ্কৃতকারীরা গত ৪ঠা জুলাই শেরপুরের কাছে একটি গ্রামের সেতু ধ্বংস করার চেষ্টা করে। রাজকাররা তাঁদের বহুজনকে হতাহত করে সেতু ধ্বংস করার চেষ্টা ব্যার্থ করে দেয়।
“দুষ্কৃতকারীরা” ১৯টি লাশ ১৩ খন্ড টিএনটি, কয়েকটি হাতবোমা, ট্যাংক বিধ্বংসী মাইন এবং ভারতে তৈরী ১৯টি বিস্ফোরক টিউব ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
শেরপুর থেকে ২০ মাইল দূরবর্তী একটি গ্রামে “দুষ্কৃতকারীদের” অবস্থানের খবর পেয়ে পরদিন রাজাকাররা উক্ত গ্রামে গিয়ে ২০ জুন দুষ্কৃতকারীকে হত্যা করেছে এবং কিছু রাইফেল, হাতবোমা এবং ৩০০ মন চাউল উদ্ধার করেছে।
১৩ ও ১৪ ই জুলাইয়ের রাতে রাজাকাররা যখন নিয়মিত টহলদারিতে নিয়োজিত সেই সময় নকলা এলাকায় “দুষ্কৃতকারীদের” সাথে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে রাজাকাররা ৪জন দুষ্কৃতকারীকে হত্যা করে। তারা দু’টো স্টেনগান, ৬ টি হাতবোমা, ৬০ রাঊন্ড ৩০৩ রাইফেল এর গুলি উদ্ধার করে।
- দৈনিক পাকিস্তান, ১০ আগস্ট, ১৯৭১
রাজশাহীতে রাজাকারদের কুচকাওয়াজ
রাজশাহী, ১৫ই আগশ্ত,(ইউপিআই)। ট্রেনিং সমাপ্তি শেষে রাজাকারদের দ্বিতীয় দলটি গত বৃহস্পতিবার এখানে তাদের কুচকাওয়াজে পাকিস্তান ও ইসলামের স্বার্থে তাদের জীবন উতসর্গ করার শপথ গ্রহণ করে। সাহেব বাজার জামে মসজিদের ইমাম তাদের অভিবাদন গ্রহণ করেন। রাজাকারদের তাদের পবিত্র দায়েতাব সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। শান্তি কমিটির সদস্যবৃন্দ সহ অপরাপর নেতৃবৃন্দও উক্ত অনুষ্ঠানে ভাষণ দান করেন।
- দৈনিক পাকিস্তান, ১৬ ই আগস্ট ১৯৭১
গফরগাঁয়ে আল-বদর বাহিনী গঠিত
(নিজস্ব সংবাদদাতা, প্রেরিত)
গফরগাঁও, ২রা সেপ্টেম্বর, গতকাল বিপুল উতসাহ-উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে গফরগাঁয়ে আল- বদর বাহিনী গঠিত হয়েছে। এতদুপলক্ষে এখানে এক সভার আয়োজন করা হয়, এবং তাতে স্থানীয় শিক্ষক, ছাত্র, যুবক, রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যবর্গসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোক যোগদান করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি মাওলানা আনিসুর রহমান মুর্শিদাবাদী বক্তৃতায় আল-বদর বাহিনীর আদর্শ ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন এবং আল-বদর বাহিনীর দেশ প্রেমিক যুবকদের দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে আত্মনিয়োগ করতে বলেন।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিষ্টিটিউটের ছাত্র সংঘের নেতা জনাব মহিউদ্দিন ও ময়মনসিংহ জেলার ইসলামী ছাত্র সংঘের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জনাব মুজিবুর রহমান।
- দৈনিক পাকিস্তান, ৬ ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
আল-শামস বাহিনীর তৎপরতা
গতকাল মঙ্গলবার রাজাকার সংস্থার স্বেচ্ছাবাহিনী “ আল-শামস” ময়মনসিংহ, যশোর ও চট্রগ্রামে সাফল্যের সঙ্গে তিনটি অভিযান চালায়। আল-শামস রাজাকার সংস্থার একটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী। এরা সেনাবাহিনীর তদারকিতে ট্রেনিং গ্রহণ ও কাজ করেছে। ময়মনসিংহে তারা কিশোরগঞ্জের দক্ষিণ- পূর্বে ভারতীয় চরদের একটি গোপন আড্ডায় আক্রমণ চালিয়ে স্টেনগান, ৯ টি রাইফেল এবং ৫ টি হাত বোমা উদ্ধার করে।
এসব অস্ত্র উদ্ধার করার সময় তারা একদল ভারতীয় চরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং তাদের ৩ জনকে হত্যা করে। অন্যান্যরা পালিয়ে যায়। চট্রগ্রাম থেকে এপিপির খবরে বলা হয়, দেশপ্রেমিক নাগরিকদের মাধ্যমে সন্ধান পেয়ে আল-শামস চট্রগ্রামের উত্তরে হাট হাজারীতে একটি বেসরকারি বাড়িতে হানা দিয়ে নাশকতা মূলক প্রচুর বই পুস্তক উদ্ধার করেন।
তারা বাড়ীর মালিককে ও গ্রেফতার করে। যশোর আল-শামস ঝিনাইদহের দক্ষিণ পূর্বে আরেকটি পাড়ায় ভারতীয় চরদের সঙ্গে এক সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং তাদের ৪ জনকে হত্যা করে। এতে আল-শামস এর একজন সদস্যও আহত হয়। ভারতীয় চরদের আঘাত হানার পর আল-শামস ভারতীয় অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের একটি ডিপোর সন্ধান লাভ করে। সেখান থেকে ১৩ টি রাইফেল, ২৪ টি সর্ট মাইন এবং ৬০ পাউন্ড বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করে।
- দৈনিক পাকিস্তান, ৩ নভেম্বর, ১৯৭১
রাজাকারদের সাফল্যজনক অভিযান
পিরোজপুর, ৪ঠা নভেম্বর। মহকুমার নাজিরপুর থানার রাজাকাররা থানার পুলিশের সাহায্যে সাতকানিয়ায় একদল ভারতীয় চরের সঙ্গে সাহসিকতার সাথে লড়াই করে। সংঘর্ষে ৪ জন ভারতীয় চর নিহত হয়েছে এবং একজন ভারতে তৈরী একটি স্টেনগান, একটি রাইফেল ও দু’টো স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র সহ ধরা পরেছে বলে এক সরকারী হ্যান্ড আউটে প্রকাশ। ভারতীয় চর লুতফর রহমান জানায় যে তাদের ভারতে ট্রেনিং দেয়া হয়েছে এবং ভারতীয় সেনা বাহিনী তাদের অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করেছে।
এপিপি পরিবেশিত খবরে প্রকাশ, রাজাকাররা দ্রুত অভিযান চালিয়ে বান্দরবন এলাকা থেকে ভারতীয় চরদের নির্মুল করেছে। তারা দুজন ভারতীয় চরকে হত্যা ও দুজনকে বন্দী করেছে, এছাড়া তারা ভারতে তৈরী বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেছে। এই সব ভারতীয় চর স্থানীয় লোকদের হয়রানী করছিল, তাদের বাড়ী ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছিল ও সম্পত্তি লুট করছিল।
সিলেট থেকে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, রাজাকারদের আল-শামস বাহিনী সুনামগঞ্জের উত্তর পশ্চিম এলাকায় টহল দেয়ার সময় দু’টো সন্দেহ জনক নৌকাকে চ্যালেঞ্জ করলে আরোহীরা তাদের প্রতি গুলি ছুড়তে শুরু করে। ফলে একজন রাজাকার আহত হয়। রাজাকাররা সাথে সাথে পাল্টা গুলি চালালে নৌকার আরোহীরা পানিতে লাফিয়ে পড়ে পালাবার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের ৪ জন নিহত হয়। রাজাকাররা নৌকা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে। ভৈরব বাজার থেকে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ আল- বদর বাহিনী ভৈরব বাজার থেকে ৩ মাইল উত্তর পূর্বে শিমুল কান্দিতে ভারতীয় চরদের গোপন আড্ডায় হানা দিয়ে ৬ টি রাইফেল, ৪ টি স্টেনগান, ৮ টি বেয়নেট ও গোলা বারুদ উদ্ধার করে।
ভারতীয় চররা রাজাকারদের দেখা মাত্র আড্ডা ছেড়ে পালিয়ে যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রাপ্ত অপর এক খবরে বলা হয়েছে যে, রাজাকাররা বিদ্যাকোটের কাছে ভারতীয় চরদের সাথে এক সংঘর্ষে ৩ জন কে হত্যা করেছে অপর ৫ জন অস্ত্রশস্ত্রসহ আত্মসমর্পন করেছে।
- দৈনিক পাকিস্তান, ৫ নভেম্বর, ১৯৭১
আল- শামস ও আল- বদর বাহিনীর সাফল্যজনক অভিযান
রাজাকারদের আল-শামস ও আল –বদর বাহিনী গতকাল শনিবার কুমিল্লা ও রাজশাহী জেলায় দুটো সাফল্যজনক অভিযান পরিচালনা করে বলে এপিপির খবরে প্রকাশ।তারা ১হাজার ৮শ ৫০পাউন্ড গুলিসহ ১০টি রাইফেল ,১১টি ম্যাগজিনসহ ২টি স্টেনগান,৯৫টি হাতবোমা ও ১৩০ পাউন্ড বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করে।
কুমিল্লা থেকে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, আল- শামস ও রাজাকাররা জানতে পারে যে একদল ভারতীয় চর শান্তি প্রিয় গ্রামবাসীদের হয়রানি করার জন্য কুমিল্লা জেলার চাঁদপুরের দক্ষিণে অবস্থিত গুলসিয়া গ্রামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ।ভারতীয় চররা গ্রামটিতে পৌঁছা মাত্র রজাকাররা তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ৫জনকে হত্যা করে। অন্যান্যরা ৩শ ৭৫ রাউন্ড গুলিসহ ৩টি রাইফেল,১১টি ম্যাগাজিন সহ ২টি স্টেনগান ও ৬০টি হাতবোমা ফেলে পালিয়ে যায়।
রাজশাহী থেকে প্রাপ্ত অপর এক খবরে বলা হয় যে আল বদর- রাজাকাররা গতকাল নওগাঁর ১০ মাইল দক্ষিণে চৌধুরী ভবানীপুরের কাছে ভারতীয় চরদের একটি গোপন আড্ডায় হানা দেয় । তদের আগমনের খবর পেয়ে ভারতীয় চররা ১ হাজার ৪শ রাউন্ড গুলি সহ ৭টি রাইফেল, ৩৫টি হাতবোমা ও ১৩০ পাউন্ড বিস্ফোরক দ্রব্য ফেলে রেখে পালিয়ে যায় ।
-দৈনিক পাকিস্তান, ৭ নভেম্বর, ১৯৭১
বদর দিবস পালিত
পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও সংহতি রক্ষার দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা
গতকাল রোববার বদর দিবস পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল বিকেলে বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে ঢাকা শহর ইসলামী ছাত্র সংঘের উদ্যেগে এক গনজামায়েত অনিষ্ঠত হয়। এরপর এক মিছিল বেরোয়। গনজামায়েতে পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মোজাহিদ এই বদর দিবস উপলক্ষে সংঘের পক্ষ থেকে একটি ৪দফা ঘোষণা করেন।তিনি ঘোষণা করেন যে-
(১) “দুনিয়ার বুকে হিন্দুস্তানের কোন মানচিত্রে আমরা বিশ্বাস করি না যতদিন পর্যন্ত দুনিয়ার বুক থেকে হিন্দুস্তানের নাম মুছে না দেয়া যাবে ততদিন পর্যন্ত আমরা বিশ্রাম নেব না”। লাইব্রেরীসমূহের প্রতি লক্ষ্য করে তিনি তার দ্বিতীয় দফা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন-
(২) “আগামী কাল থেকে হিন্দু লেখকদের কোন বই অথবা হিন্দুদের দালালী করে লেখা পুস্তকাদি লাইব্রেরীতে স্থান দিতে পারবেন না বা বিক্রি বা প্রচার করতে পারবেন না। যদি কেউ করেন তবে পাকিস্তানের অস্তিত্বে বিশ্বাসী স্বেচ্ছাসেবকরা জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেবে”। জনাব মুজাহিদের বাকি দুটো ঘোষণা হলোঃ
(৩)পাকিস্তানের অস্তিত্বে বিশ্বাসী স্বেচ্ছাসেবকদের সম্পর্কে বিরূপ প্রচার করা হচ্ছে । যারা এই অপপ্রচার করছে তাদের সম্পর্কে হুশিয়ার থাকুন এবং
(৪) বায়তুল মোকাদ্দাসকে উদ্বারের সংগ্রাম চলবে ।জনাব মুজাহিদ এই ঘোষণাকে বাস্তবায়িত করার জন্য ছাত্র, কৃষক ,শ্রমিক,জনতার প্রতি আহবান জানান,তিনি বলেন,- “এই ঘোষণা বাস্তবায়িত করার জন্য শির উঁচু করে,বুকে কোরান নিয়ে মর্দে মুজাহিদের মতো এগিয়ে চলুন । প্রোয়জন হলে নয়াদিল্লী পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে আমরা বৃহত্তর পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করবো”।
জামায়েত ঢাকা শহর ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি জনাব শামসুল হক শভাপতিত্ব করেন। বক্তৃতা দেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক জনাব মীর কাশেম আলী । তিনি বলেন যে ,- আজকে বদর দিবসের শপথ হলোঃ
(ক) ভারতের আক্রমণ রুখে দাঁড়াবো। (খ) দুষ্কৃতিকারীদের খতম করবো। (গ)ইসলামী সমাজ কায়েম করবো। জনাব মোহাম্মদ শামসুল হক বলেন জে,আজকের এই ১৭ই রমজানের পবিত্র দিনে বদরের বীরত্বপূর্ণ ঘটনার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা বাতিল শক্তিকে নির্মূল করার শপথ নতুন করে নিচ্ছি। গনজামায়েতর প্রত্যেক বক্তা পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও সংহতি রক্ষার জন্যে দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা ঘোষণা করেন।
পাকিস্তানের সীমান্তে ভারতীয় হামলা চলছে বলে উল্লেখ করে জনগণকে এর বিরুদ্ধে একাত্ম হয়ে সংগ্রাম করার জন্যে তারা আহবান জানান। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ থেকে প্রেরণা ও শিক্ষা লাভের জন্যও তারা আহবান জানান । সভার পর এক মিছিল বেরোয়। নওয়াবপুর রোড হয়ে বাহাদুরশাহ পার্কে গিয়ে তা শেষ হয়। মিছিলের কয়েকটি শ্লোগান ছিল :১/ আমাদের রক্তে পাকিস্তান টিকবে । ২/ বীর মুজাহিদ অস্ত্র ধর, ভারতকে খতম কর। ৩/ মুজাহিদ এগিয়ে চল,কলিকাতা দখল কর। ৪/বদর দিবস সফল হোক। ৫/ভারতের চরদের খতম কর ইত্যাদি।
-দৈনিক পাকিস্তান, ৮ নভেম্বর, ১৯৭১
সিলেট ও পাবনায় রাজাকার তৎপরতা
গতকাল সোমবার রাজাকাররা সিলেট ও পাবনায় ভারতীয় চর বহনকারী ৯টি নৌকা ডুবিয়ে দিয়েছে।ঢাকায় প্রাপ্ত এপিপিপরিবেশিত খবরে জানা গেছে, নৌকা যোগে প্রায় দুই শত ভারতীয় চর সিলেটের জাকিগঞ্জের নিকট পাকিস্তানী এলাকায় প্রবেশ করতে যাচ্ছে এই খবর জানতে পেরে ৫০ জন রাজাকার উক্ত এলাকায় গমন করে এবং শত্রুর অপেক্ষায় ওৎ পেতে থাকে।
নৌকাগুলো সীমান্তের এপাশে আসার সাথে সাথে রাজাকাররা তাদের উপর গুলিবর্ষণ করে। ভারতীয় চররা পাল্টা গুলি ছোড়ে এবং রাজাকারদের মারধর করার উদ্দেশে নৌকা থেকে নামানোর চেষ্টা করে । কিন্তু তাদেরকে একাজ করার সুযোগ দেয়া হয়নি।তাদের অধিকাংশ নৌকাতেই আঘাত পায় এবং অন্যান্যরা নৌকা সমেত পানিতে ডুবে যায়। ৩টা নৌকা ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্যান্য নৌকা ভারতীয় এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
রাজাকারদের গুলিতে পাবনা জেলার টিকোরির নিকট ভারতীয় চরবাহী আরও ৬টি নৌকা উল্টে পানিতে ডুবে গেছে । অপর এক খবরে জানা যায় যে গতকাল সোমবার রাজাকাররা রংপুর ও কুমিল্লা জেলায় একটি রেল সেতু ও একটি সড়কসেতু রক্ষা করেছে। রেল সেতুটি রংপুর জেলার গাইবান্ধার ২ মাইল দক্ষিণ ত্রিমোহনিতে অবস্থিত। আর সড়ক সেতুটি কুমিল্লা জেলার লাকসামের৮ মাইল পশ্চিমে মুর্গাপুরের নিকট অবস্থিত।
-দৈনিক পাকিস্তান, ১৬ নভেম্বর, ১৯৭১