পঞ্চম খণ্ড

রক্তের অক্ষরে লিখি* ১৪ নভেম্বর, ১৯৭১ শান্তির ললিতবাণী যাদের কাছে পরিহাসের সামগ্রী, সেই দানবের সঙ্গে সংগ্রামের তরে সংগ্রামীরা ঘরে ঘরে প্রস্তুত হচ্ছে- এই সংবাদ রবীন্দ্রনাথ আমাদের দিয়েছিলেন বহু বছর আগে। আজ বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে আমরা অনুভব করছি সংগ্রামীদের পদচারণা, বীরের মতো তারা যুদ্ধ করছে শত্রু র সঙ্গে, প্রাণ দিচ্ছে অকাতরে প্রাণ দেয়া-নেয়ার এই উৎসবের মধ্য […]

পিপ্তির প্রলাপ * ১২ নভেম্বর, ১৯৭১ জঙ্গী শাসক ইয়াহিয়া খাঁ আর তার জল্লাদ বাহিনীর তোতাপাখীগুলা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত একই শেখানো বুলি আউড়ে চলেছে রেডিও গায়েবি আওয়াজে গ্রামোফোন কোম্পানীর কুকুরের ছবিওয়ালা সেই রেকর্ডের মতো। পিন দিয়ে চড়িয়ে দিলেই হোল কলেরগান বাজতে শুরু করবে। বাঁধা গতে গান হবে। সকালসন্ধ্যা-রাত-যখনই শুনুন না কেন, পড়ানো লবজই বেতারের একমাত্র

বিশ্ববিবেক ও বাংলাদেশ ১১ নভেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এখন পৃথিবীর সজাগ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বের মানুষের কাছে এখন সবচেয়ে আলোড়নকারী ঘটনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। পৃথিবীর প্রতি অঞ্চলের মানুষের চোখ বাংলাদেশের ওপর- সেখানে কি ঘটছে, কি চলছে সেখানে। কিন্তু জল্লাদ ইয়াহিয়ার মিথ্যা প্রচারণার কুয়াশা ভেদ করে বাংলাদেশের ঘটনাবালী সঠিক চিত্র কি সব সময় তাদের চোখে

পুতুল নাচের খেল ৫ নভেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশের মানুষ দখলীকৃত ঢাকা বেতারের অনুষ্ঠান শোনে না। গত পঁচিশে মার্চের পর থেকেই ঢাকা বেতারের অনুষ্ঠান ধীরে ধীরে তারা বর্জন করতে শুরু করে। এখন এই অনুষ্ঠান বাংলাদেশের নারী, পুরুষ, শিশু কেউ শোনে না। কে শুনবে? যারা নিজেদের চোখে দেখেছে মেঘনা নদীকে কারবালার রক্তরাঙা ফোরাত নদী হয়ে যেতে, যাদের চোখের

জনতার সংগ্রাম ৫ নভেম্বর, ১৯৭১ আমাদের বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতা রচনা করেছে নয়া ইতিহাস। হরতাল, মিছিল আর বিক্ষোভের স্তর পার হয়ে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম যে মুহুর্তে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের রূপ নিয়েছে, সে মুহুর্তে জনতার মধ্য থেকে বেরিয়ে এসেছে সশস্ত্র মুক্তিবাহিনী, অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে আপনাআপনি। ফুল ফুটলে যেমন সুগন্ধ বেরিয়ে আসে, ঠিক তেমনিভাবে। দুনিয়ার ইতিাহসে দেশের এমন ঘটনা অবশ্য ঘটেছে

কাঠগড়ার আসামী ১৪ নভেম্বর, ১৯৭১ পৃথিবীর ইতিহাসে নৃশংস হত্যাকারীর তালিকায় সংযোজিত হয়েছে দুটি নাম। একটি ইয়াহিয়া খান, অপরটি টিক্কা খান। জঘন্য জালেম হিসেবে সারা বিশ্ব তাদের ধিক্কার দিচ্ছে। টিক্কা খান শুনেছ সেসব কথা? তোমার বক্তব্য আছে কিছু? বিচারের কাঠগড়ায় হলফ করে বলো, কেন এই গণহত্যা অনুষ্ঠিত করলে? বাংলার মাটি মানুষের রক্তে কেন লালে লাল হয়ে

দর্পণ ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১         সম্প্রতি প্রখ্যাত ফরাসী সাহিত্যক ও কূটনীতিকে মঁসিয়ে আঁদ্রে মালর বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণকে সংগ্রামী ভিয়েৎনামী জনগণের মত জবাব দিতে বলেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীকে তিনি আমরণ যুদ্ধ চালিয়ে যাবার আবেদন করেছেন।         তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে রক্ষা করার জন্যে যুদ্ধ করছেন না- তাঁরা আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ করছেন। মঁসিয়ে মালর দৃঢ়তার

পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে ২৫শে আগষ্ট, ১৯৭১ রোগাগ্রস্ত ভদ্রলোকের অপচেষ্টা বিদ্রোহের অগ্নিতে ভষ্মীভূত ইয়াহিয়ার পাকিস্তানে বিশ্বের বৃহত্তম উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠানের অয়োজন চলছে। পৃথিবীতে এতো ব্যাপক উপ-নির্বাচন বোধ হয় আর কোন দেশে হয়নি। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় মূক ও শঙ্কিত নাগরিকগন অস্ত্রের হুঙ্কারে একটি তথাকথিত সাধারণ নির্বাচনের স্বাদ পেতে হয়তো চলছেন। বন্দী নাগরিকদের অন্ধকূপের মধ্যে নিক্ষেপ করে ইয়াহিয়া যে

শেখ মুজিবের বিচার প্রহসন ২৭শে জুলাই, ১৯৭১ (দ্বিতীয় পর্যায়) বাংলদেশ রত্নগর্ভা। বাংলাদেশে শুধু সম্পদ নয়, আছে মানুষের মত মানুষ। বাংলাদেশের জননেতারা যুগের পর যুগ, বছরের পর বছর নিজ দেশের জনগণকে ভালোবেসে যে নির্যাতন ভোগ করেছেন, তার তুলনা সমকালীন ইতিহাসে নেই। বঙ্গজননী তার কোলে শুধু তীতুমীর, ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, বাঘা যতীনদের মত বিপ্লবীদের ধারণ করেনি, করেছে চিত্তরঞ্জন,

অভিজ্ঞতার আলোকে ২৪ জুলাই, ১৯৭১ বাংলার মুক্তি আন্দোলনে যারা রক্ত দিয়েছেন, যারা বিভিন্ন রণাঙ্গনে শত্রুসেনার সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন তাদের উদ্দ্যেশে সশ্রদ্ধ অভিবাদন জানিয়ে শুরু করছি। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের রায়কে উপেক্ষা করে, গণতন্ত্রের সমস্ত নীতি পদদলিত করে এবং মানবতার সমস্ত শিক্ষাকে মথিত করে স্বৈরাচারী বিশ্বাসঘাতক পাকিস্তানী বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরপরাধ নিরস্ত্র বাঙালী জনতার উপর