An Historic Five-Party Agreement : Proof. Galbraith

১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

একটি ঐতিহাসিক পাঁচ দলীয় সম্মতিঃ প্রফেসর গাল্ব্রেইথ বাঙ্গালি সত্ত্বাকে বুঝতে ভুল করেছেন

গতকাল মুজিবনগরে একটি ঐতিহাসিক পাঁচ দলীয় সম্মতি সম্পাদিত হয়েছে। ২ দিনের দীর্ঘ আলোচনা শেষে আওয়ামি লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামি পার্টি (ভাসানী গ্রুপ), ন্যাশনাল আওয়ামি পার্টি (মোজাফফর গ্রুপ), বাংলাদেশ কম্যুনিস্ট পার্টি এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল কংগ্রেস ৮ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় কনসাল্টেটিভ কমিটি গঠন করতে সম্মত হয়েছে। কমিটিকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ব্যাপারে আলোচনার জন্য পাওয়া যাবে। ২৫শে মার্চের পর এই প্রথম মাওলানা ভাসানী এই বড় পর্যায়ের রাজনৈতিক আলোচনায় অংশ নিলেন।

জাতীয় কনসাল্টেটিভ কমিটি গঠিত হয়েছে নিম্নোক্ত সদস্যদের নিয়েঃ মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ, ন্যাশনাল আওয়ামি পার্টির প্রফেসর মোজাফফর আহমেদ। বাংলাদেশ কম্যুনিস্ট পার্টির মনি সিং এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল কংগ্রেসের মনোরঞ্জন ধর। দুজন আরো সদস্য যোগ অন্যান্য দল থেকে যোগ দিতে পারে যাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শর্তাধীন আনুগত্য রয়েছে।

কমিটি পুনরায় বিজয় পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের পূর্ণাংগ স্বাধীনতা ব্যাতীত যে কোন রাজনৈতিক বক্তব্য বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না, এটা যতটা সম্ভব পরিষ্কার করে বলা হয়েছে.

কমিটির বিশ্বের সভ্য দেশের কাছে আবেদন বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের সঙ্গে সংহতি ঘোষণা করতে এবং তাদেরকে ডেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে চিনতে। কমিটি অস্ত্র এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য গোলাবারুদ সহ পূর্ণ সমর্থনের জন্য সব দেশের কাছে আবেদন করে।

এশীয় ইতিহাসের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে জাতীয় পরামর্শমূলক কমিটি গঠনের পর শীঘ্রই মুজিবনগর থেকে তার ঘোষণার পর বিভিন্ন মহল এ মর্যাদা দেওয়া হয়।

কমিটির সামনা-সামনি জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘোষণা স্বীকৃতি এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ জন্য তার আবেদন । এই প্রথমবারের মতো এমন একটি সর্বজনীন আবেদন যা আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারসহ যেকোন রাজনৈতিক দল দ্বারা স্বীকৃতি জন্য তৈরি করা হয়েছে জন্য। এটা বিশ্বাস করা হয় যে এই আবেদন বাংলাদেশের মানুষের জন্য প্রশ্নাতীত সহানুভূতি থাকা অনেক দেশের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। বস্তুত, নির্ভরযোগ্য সূত্র ইঙ্গিত দেয় যে, রাষ্ট্রের একটি সংখ্যা দ্বারা প্রজাতন্ত্রের স্বীকৃতি ঘনায়মান সম্ভবত হয়। এখন কিছু সমাজতান্ত্রিক দল  ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের সাথে যোগদান করতে পারে , এই যুদ্ধের ব্যাপারে পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে কথা বলতে পারে যা স্বীকৃতি ও বস্তুগত সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসতে দেশগুলোকে উৎসাহিত করতে পারে। নির্ভরযোগ্য উৎস সম্পর্কে অবগত যে জার্মান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অর্থাত ইস্ট জার্মানি, প্রসঙ্গক্রমে, এছাড়াও ইউরোপ চতুর্থ বৃহত্তম শিল্প শক্তি, প্রথম দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে পারে। জিডিআর এর উদাহরণ অবশ্যই অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশ  গ্রহণ করবে। পাকিস্তানি গণহত্যার প্রাদুর্ভাব থেকে যুগোস্লাভ সরকারের ধারাবাহিকভাবে অনুকূল মনোভাব ভুলে গেলে চলবে না। আসলে, আশ্চর্যজনক হবে না যদি যুগোস্লাভিয়া জিডিআর এর আগে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে সার্বভৌমত্ব স্বীকৃতিদানকারী প্রথম দেশে পরিণত হয়। আরেকটি ভালো সম্ভাবনা হল হাংগেরি।  চেকোস্লোভাকিয়া এবং পোল্যান্ড আসছে, তবে ধীর হতে পারে কারণ তারা পাকিস্তানের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক হিসাবে রাখছে। এছাড়াও কিছু এশীয় দেশসমূহের শীঘ্রই প্রজাতন্ত্রকে স্বীকৃতি দিবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিউবা সহ লাতিন আমেরিকার দেশগুলো কম সহযোগিতা করে না। পরবর্তী কয়েক দিন অনেক ঘটনাবহুল হবে যা পাকিস্তানের সমাপ্তি সম্পর্কিত।

এরকম গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি এবং বাংলাদেশের মানুষের অনমনীয়তা যা যুদ্ধকে বিজয়ের দিকে নিয়ে যাবে, এরকম অবস্থায় ভারতের প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রফেসর জন গালব্রেইথের পূর্ব বাংলায় সার্বিক সায়ত্বশাসনের আহ্বান অবিবেচনাপ্রসূত। প্রফেসর জন গালব্রেইথ রেডিও বাংলাদেশের কলকাতা প্রতিনিধির কাছে গতকাল পৌছে বলেন যে বাংলাদেশ সমস্যার একটিই সমাধান হল পূর্ব বাংলায় তাদের নিজেদের শাসন যেন পাঞ্জাবীদের মত তারা নিজেরা তাসের ভাগ্যের মালিক মনে করে। তিনি আরও বলেন, যে যেমন একটি সমাধান বিশ্বের সভ্য জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে এই ধরনের একটি শিক্ষিত অর্থনীতিবিদ ও পাকা কূটনীতিক অধ্যাপক গালব্রেইথ  গেমে এত দেরিতে একটি অবাস্তব এবং অসম্ভব সমাধান পরামর্শ করছেন। এটা খুবই দুঃখজনক যে তিনি ইতিহাসের রায় বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি দেখতে ব্যর্থ হয়েছেন যে পাকিস্তান এমনই একটি অদ্ভুত ইউনিয়ন যেখানে পারস্পারিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা ছাড়া টিকে থাকা যায় না। তারপরও শেষ ২৩ বছর কিছু প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্ব-পশ্চিম সম্পর্ককে কলোনিয়াল চরিত্রে পরিণত করে যার সবথেকে খারাপ রূপায়ন হল, গত মার্চের বর্বোরোচিত গণহত্যা। প্রফেসর কিভাবে ভাবতে পারলেন অর্থপূর্ণ অংশীদারিত্বের প্রাথমিক শর্তগুলো আবার গড়ে উঠবে যেখানে কলোনিস্টরা অবহেলিত অঞ্চলের নিরপরাধ পুরুষ, নারী, শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করেছে? শুধু তাই নয়, এই অবর্ননীয় হত্যাযজ্ঞ এখনো চলছে, কলোনিস্টরা কৌশলে বাঙ্গালিদের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেংগে দিচ্ছে। এখন তারা একটি দুর্বল ও বিদেশী স্ক্রিপ্ট চাপিয়ে দিয়ে বাঙ্গালিদের মাতৃভাষা ধ্বংসের দিকে আগাচ্ছে, যার জন্য ইতিমধ্যেই অগণিত বাঙ্গালি প্রাণ দিয়েছে। কিভাবে যে কোন সভ্য মানুষ, প্রফেসর জন গালব্রেইথের মত একজন প্রখ্যাত স্কলার,  কোন ভিত্তিতে এই ইউনিয়ন চালু রাখার পরামর্শ দিতে পারে? এটা হতে পারে যে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ব্যাক্তিগতভাবে তথাকথিত রাজনৈতিক বক্তব্যের নামে হোয়াইট হাউজের ফর্মূলাকে প্রচার করছেন। যদি  বাংলাদেশের সার্বিক সায়ত্বশাসন এতই যৌক্তিক ফর্মুলা হয় তাহলে ইসলামাবাদের আমেরিকান প্রভুরা ২৫শে মার্চের আগে বাংলাদেশের মানুষকে পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম ভয়ংকর গণহত্যার শিকার হওয়ার আগে, কেন খুনি জেনারেলদের দিয়ে এটা করালো না? বাস্তবিকভাবে, শেখ মুজিবের ছয় দফার লক্ষ্য সায়ত্বশাসন থেকে বেশি কিছু ছিল না। তারপরও মার্কিন প্রশাসন এই গণহত্যা হতে দিয়েছে। প্রফেসর গালব্রেইথ- দয়া করে বোঝার চেষ্টা করুন, ২৫শে মার্চের পর থেকে ইতিহাস আর উল্টো দিকে না যাওয়ার জন্য আগাচ্ছে। বুঝতে চেষ্টা করুন যে একমাত্র সভ্য, বিবেচনাপ্রসূত ও শান্তিপূর্ণ সমাধান হল বাংলাদেশের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা।

 

Scroll to Top