Monem Eliminated: Other Collaborators Shaking in Pants

মোনেম খান মৃতঃ ভীতসন্ত্রস্ত্র অন্যান্য সহযোগীরা

অবশেষে বিশ্বাসঘাতক মোনেম তার প্রাপ্য পেল। অপকর্ম যে সবসময় লাভের মুখ দেখায় না, বাংলাদেশে প্রথমবারের মত এটি প্রতিষ্ঠিত হল। প্রত্যাশিতভাবেই আইয়ুব খান জনসমক্ষে সেই লোকটির জন্যই অশ্রুবর্ষণ করল, যে একটা অ্যালসেশিয়ানের মতই ভক্তি এবং হিংস্রতার সাথে তার সেবাদানে রত ছিল। মোনেমের একটাই ভাল গুণ ছিল- সে কখনোই তার অন্তরের অনুভূতি নিয়ে সতর্ক হতে পারত না। একটা ছোটখাট বিভাগীয় উকিল থেকে তাকে গভর্নর বানানোর জন্য তার প্রতি তার প্রুভুর দয়াশীলতার কথা সে মাঝে মাঝেই নির্লজ্জের মত আউড়ে যেত। সে যে শুধু তার প্রভুর জন্য ক্রীতদাসের মত কাজই করে যেত না বরং  সে একজন আদর্শ ক্রীতদাসের প্রতিমূর্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। যখন আইয়ুব এবং তার অদ্ভূত একনায়কতন্ত্র জনগণের তীব্র ঘৃণার সম্মুখীন হচ্ছিল তখন “আইয়ুব আমার বাপ, আমার নেতা” এই কথা জনসমক্ষে উচ্চারণ করার মতন ঘৃণীত সাহস একমাত্র এই লোকেরই ছিল। তার সক্রিয় সাহায্যের ফলেই আইয়ুব খান পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্পের জন্য একটা ঔপনিবেশিক বাজারে পরিণত করেছিল। বাংলাদেশের মানুষ তাকে যতই ঘৃণা করত, ঠিক সেই পরিমাণ কারণই তাকে রেখে দেয়ার জন্য আইয়ুবের কাছে ছিল।  সে তাকে দীর্ঘ সাত বছর ধরে বাঙালি জনগণের উপর নির্যাতন করার জন্য বসিয়ে রেখেছিল।

বাঙালি জনগণের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন এবং বিশেষ করে শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নীল নকশা প্রণয়নের ক্ষেত্রে মোনেম ছিল আইয়ুব খানের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগী।

হাজার হাজার দেশপ্রেমিকে বাংলাদেশের কারাগার পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। শেখ মুজিব ও তার দলকে পিষে ফেলবার চেষ্টায় মোনেম তার সকল অসৎ ক্ষমতাই প্রয়োগ করেছিল যেটি আইয়ুব খানই তাকে দিয়েছিল। ১৯৬৬ সালের মে মাসে সে মুজিবকে গ্রেফতার করায়। একই বছরের ৬ জুন যখন ৬ দফা স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় তখন সে এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে তার পুলিশবাহিনীকে লেলিয়ে দেয়, ফলে কিছুকাল পরেই কারাগারগুলোতে অধিক বন্দীধারণের তিল পরিমাণ জায়গাও অবশিষ্ট থাকে না।

আতঙ্কের রাজত্বের পাশাপাশি সে দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির নজিরবিহীন উদাহরণ গড়ে তুলেছিল। ঘুষ ছাড়া অফিসে কিছুই নড়ত না। মোনেমের প্রত্যেক আত্মীয়ই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গিয়েছিল। শেষ বছরগুলোতে তার সাইরেন বাজিয়ে পাহারায় চলা আমেরিকান গাড়ির যাতায়াতের জন্য রাস্তায় সাধারণ গণপরিবহন থেমে থাকত। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মোনেম বাঙালি জাতির প্রতি আইয়ুবের জঘন্যতম কলঙ্কের প্রতীক হয়ে ছিল। আইয়ুব খান যে তার শেষকৃত্যে তাকে একজন মহান দেশপ্রেমিক হিসেবে উল্লেখ করেছে, এতে আশ্চর্যান্বিত হবার কিছুই নেই।

এই লোকটা এখন মৃত। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মধ্যে থাকা সত্ত্বেও মুক্তিবাহিনী তাদের শুদ্ধিকরণ অভিযানের মাধ্যমে তাকে সরিয়ে দেয়। একটু দেরিতে হলেও বিজয়  হয়েছে ন্যায়ের। বাংলাদেশ সম্পর্কিত কোন বিষয়েই তার আর কোন উল্লেখ থাকবে না। তার সমাধিফলক লেখারও কেউ নেই।

মোনেম খানের হত্যাকান্ডের সংবাদে বিশ্বাসঘাতক ও হানাদার বাহিনীর দেশীয় সহযোগীদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করতে থাকে। মোতালেব মল্লিকের পুতুল সরকারের তথাকথিত মন্ত্রীরা আতঙ্কিত। সেনাবাহিনীর পাহারা ব্যাতিত সাধারণত তারা বাইরে আসে না। প্রতিবাদন অনুযায়ী তথাকথিত রাজনীতিবিদ ফজলুল কাদের চৌধুরী পশ্চিম পাকিস্তানে পালিয়েছে। ফরিদ আহমেদও লুকিয়ে পড়েছে। অধিকন্তু, গুপ্তচর মাহমুদ আলী এখনো জানে না যে সে কি আদৌ বাংলাদেশে ফিরবে কিনা, ইয়াহিয়ার তাবেদার হয়ে যে দেশের মানুষের সাথে জাতিসংঘে সে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রেডিও পাকিস্তান এবং ঢাকা টেলিভিশনে থাকা বেঈমানদের দিনও ঘনিয়ে আসছে। তবে প্রায়শ্চিত্তের সময় এখনো আছে। শুধুমাত্র একটা অসৎ বিদেশী শত্রুকে সাহায্য করার জন্য নিজের জ্ঞাতি গোষ্ঠীর সাথে প্রতারণা বন্ধ করতে হবে। মুক্তাঞ্চলে এসে আত্মসমর্পণ কর। ক্ষমা পেলেও পেতে পার।

Scroll to Top