১৩ ও ১৫ নভেম্বর, ১৯৭১
বেকায়দায় পাকিস্তানঃ চূড়ান্ত সময় সন্নিকটেঃ জাতিসংঘের জন্য সতর্কবার্তা
.
নিউজউইকের একজন সিনিয়র সম্পাদক ঢাকা জেলার দখলকৃত ও মুক্ত এলাকায় কিছুদিন অবস্থান করে মুজিবনগর হয়ে ব্যাংককের পথে রয়েছে। ভারত- ইসলামাবাদ আসন্ন ভয়াবহ যুদ্ধ সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী নানা জল্পনা শর্তেও তিনি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করেন ভারতের সাথে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়ানোর মত অবস্থানে পাকিস্তান নেই। বাংলাদেশে দখলদার বাহিনী আশাহত অবস্থায় দিন পার করছে। ঢাকা ভিতরে এবং আশেপাশে মুক্তি বাহিনীর কিছু শক্তিশালী অবস্থান ভ্রমণ শেষে তিনি উপসংহারে পৌঁছান যে মুক্তিবাহিনী শুধু মাত্র একটি সক্ষম বাহিনীয় নয় বরং তারা ইতোমধ্যেই দখলদার বাহিনীকে বেকায়দায় ফেলতে সক্ষম হয়েছে। পাকিস্তানী বাহিনীর গোলাবারুদ সরবরাহ এতই কম যে অধিকাংশ সময় তারা মুক্তিবাহিনীর শেলিং এর প্রতিউত্তর দিতে ব্যর্থ হয়। ৫০ ভাগেরও বেশি অপারেশনে মুক্তিবাহিনী শত্রুপক্ষের অস্ত্র ও গোলাবারুদ দখলে নিতে সক্ষম হয়। তিনি আরো বলেন মুক্তি বাহিনী তাদের এইসব সফলতায় এখন এতই আত্মবিশ্বাসী যে তারা আকস্মিক আক্রমণের পর এখন আর পিছুহটে না। তারা একটি এলাকা দখল করার পর সেখানেই অবস্থান করে। সাম্প্রতিক এই কৌশল ইতোমধ্যেই তাদের কে নানা ভাবে উপকৃত করেছে। এই কৌশল শুধুমাত্র শত্রুবাহিনীর মনোবলই ধংস করছে না বরং একই সাথে দিন দিন জনগণের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলছে। পাকিস্তানীদের সাধারন অভ্যাস হচ্ছে মুক্তি বাহিনীর হাতে কোথাও পরাজিত হওয়ার পর প্রতিশোধ নিতে নিরস্ত্র সাধারন জনগনের উপর আকস্মিক আক্রমন করা। এখন মুক্তিবাহিনীর এই ‘আঘাত এবং ধংস’ কৌশল সাধারন নাগরিকদের হতাহত হওয়ার হার উল্লেখযোগ্য পরিমানে কমিয়ে এনেছে। নিউজইউকের রিপোর্টার যিনি ভিয়েতনাম, আলজেরিয়া, দক্ষিন আফ্রিকা এবং বায়াফ্রা যুদ্ধ সহ আরো অনেক যুদ্ধের ব্যাপারে অভিজ্ঞ অভিমত দেন যে ইসলামাবাদ সামরিক ভাবে প্রায় নিঃশেষিত। তারমতে ইন্দো-পাক যুদ্ধ ছাড়াই, পশ্চিমা পর্যবেক্ষকরা যা ভাবেন তার থেকে অনেক দ্রুতই এই যুদ্ধ জেতার সক্ষমতা মুক্তিবাহিনীর আছে। তিনি আত্মবিশ্বাসের সাথে তার এক বন্ধুকে বলেন, পাকিস্তান নিশ্চিত যে তারা এক বরজোর দুই মাসের মধ্যে পরাজয়ের স্বাদ গ্রহন করবে।
এই ধরনের মুল্যায়ন যা এসেছে ইয়াহিয়ার ঘনিষ্ঠ কারো কাছ থেকে তা অবশ্যই বিবেচনার দাবী রাখে। সম্ভবত ইয়াহিয়া তাকে ব্যক্তিগত ভাবে অনুরোধ করেছিল বাংলাদেশে তার সেনাবাহিনী সম্পর্কে একটি গোপন বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য।
এই ঘটনা অবশ্যই মুক্তি বাহিনীর ছেলেদের জন্য বরং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে যারা এই সংবাদ দাতাকে তাদের গোপন ক্যাম্প ও কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান সমুহ দেখিয়েছে।
তিনি ইয়াহিয়ার হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছিলেন না এমন বলা যায় না। সম্ভবত মুক্তিবাহিনীর জন্য এখনই সময় বিদেশি সাংবাদ দাতাদের বিরুদ্ধে একটি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা। গত এক সপ্তাহে বা তার বেশি সময়ে শত শত এমন সংবাদ দাতা হন্যে হয়ে মুক্তি বাহিনীর খোজ করেছে।
সম্মুখ যুদ্ধ প্রচেষ্টা বাদ দেয়ার পর এবং দীর্ঘ ৬ মাস সফলতার সাথে পাকিস্তানী বাহিনীকে আঘাত করার পর হটাত করে তারা তাদের কৃত ভুলের ব্যপ্তি উপলব্ধি করতে পেরেছে। তারা অবশ্য কিউবান উপায়ে তাদের গল্প প্রকাশে আগ্রহী। মুক্তিবাহিনী যদি তাদের বিজয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চায় তাহলে তাদেরকে অবশ্যই তাদের সংগ্রামের রাজনৈতিক চরিত্র নির্ধারণ করতে হবে। তারা কি সবাই জাতীয়তাবাদী নাকি ছদ্মবেশী কম্যুনিস্ট? অতীত অভিজ্ঞতা বলে এই সমস্ত উপসংহারের সাথে বাস্তবের সম্পর্ক খুব ক্ষীণ। তাই যে কোন সম্ভব্য উপায়ে তাদের কাছ থেকে দূরে থাকা সব সময়ই মঙ্গলজনক। এমনকি মুক্তি যোদ্ধাদের সাথে যদি এই সব লোকের দেখাও হয়ে যায় কোন ভাবে তাহলে তাদের সাথে কোন ভাবেই রাজনীতি বা যুদ্ধ কৌশল নিয়ে আলাপ করা উচিৎ নয়। তাদেরকে অবশ্যই সবাইকে অবিশ্বাস করতে হবে।
রাজনীতি অথবা রণকৌশল এদের অবশ্যই অবিশ্বাস করতে হবে যদি না তারা প্রমানসহ একে অপরের বিপরীত হয়। এখন এইটা ঢাকাবাসীদের জন্য বড় সংকেত। এই অবস্থায় শত্রুরা যদি ক্রমাগত আশাহত হয় তবে সম্ভবত তারা চাইবে শহরকে আক্রমণ ও ধ্বংস করতে। জনগণের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে সেই দিনের জন্য। তিনি এইটা নিশ্চিত করেছে এইবার এটা এক পক্ষীয় ঘটনা হবে না।নাগরিকদের শুধু মুক্তিবাহিনীদের সহায়তা করলেই হবে না সাথে সাথে তাদের যা আছে তাই নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হওয়া শত্রুবাহিনীদের হত্যার জন্য ঝাপিয়ে পড়তে হবে এবং রাস্তা রাস্তা লড়াইয়ের মাধ্যমে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। তোমাদের ভয়ের কিছু নেই । আমরা সংখ্যায় অনেক বেশী এবং এখন তাদের কাছে অনেক শক্তিশালী।এর মধ্য অনেক গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে যে জাতিসংঘ চিহ্ন সংবলিত আমেরিকান সাজানো জাহাজ চীনের বন্দরে অবস্থান করছে। জাতিসংঘ ও আমেরিকান সূত্রমতে এই জাহাজে অন্য কিছু নয় বরং শুধুমাত্র খাদ্য বহণ করছে। এই প্রচারের লক্ষ্য হল প্রতিষ্ঠা করা যে মুক্তিযোদ্ধারা চায় দূর্ভিক্ষপীড়িত বাংলাদেশের মানুষ খাদ্যের অভাবে মারা যাক। আক্রান্ত লক্ষাধিক বাংলাদেশী এই গল্পটা বিশ্বাস করুক আর নাই করুক এই অপপ্রচার হবে তা অনুমান করা কঠিন কিছু না। তারা জানে কারা তাদের ও জাতিসংঘের বন্ধু যারা বাংলাদেশে চালানো ইয়াহিয়ার গণহত্যাকে নীরব সমর্থন করে যাচ্ছে। জাতিসংঘের পরিহাসমূলক পরিসংখ্যানে এমন কিছু নাই যাতে আমাদের বাচা মরার ব্যাপারে তারা চিন্তিত। তদুপরি আমরা এটাও নিশ্চিত না যে জাহাজটিতে খাদ্যশষ্য আছে এবং এতে লুকানো কোন অস্ত্র নাই। যদি এখানে খাদ্য থেকেও থাকে তবে এই খাদ্য কি পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর জন্য আনা হয়েছে কিনা তাও আমরা জানি না। এর আগেও অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জন্য রেড ক্রসের দেয়া দুধ পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীকে খাওয়ানো হয়েছে।সতর্কতামূলক ভাবে মনে রাখা হোক এই মূহুর্তে শত্রু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দরে যদি কোন জাহাজ নোঙ্গর করে তবে তা হবে পাকিস্তানীদের সহযোগী। ওইসব জাহাজ ধ্বংস করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। যে কোন রাষ্ট্র যদি জনগণের মঙ্গল কামনা করে বাংলাদেশে খাদ্য পাঠায় তবে তা বাংলাদেশের সরকারের মাধ্যমে পাঠানোই হবে আইনগতভাবে স্বিদ্ধ। এই চেষ্টাকে অন্য দিকে ধাবন করলে তা শত্রুতামূলক কাজ বলে গণ্যহবে।নিউজউইকের এক মুখপাত্রের প্রশ্নের উত্তরে ইয়াহিয়ার অধীনস্থ মূল ঘাতক জেনারেল নিয়াজী হুমকী দিয়ে বলেন, যদি মুক্তিবাহিনী ঢাকার মধ্যে আসার চেষ্টা করে তাহলে তিনি আবার ঢাকাবাসীর বিরুদ্ধে পুণরায় ট্যাংক মোতায়েন করবেন। তিনি তার শার্ট ছুড়ে ফেলেন এবং বলেন বাঙালীদের জানা উচিৎ দখলদার বাহিনী নিরস্ত্র ঢাকার মানুষদের সাথে কি কি করতে পারে। এটাই ছিল মূলত নিরস্ত্র ও অসহায় ঢাকার নাগরিকদের উপর ২৫শে মার্চ তারা যে হামলা চালায় তার প্রথম জনসম্মুখে স্বীকারোক্তি।বোকা জেনারেল অনুধাবন করতে পারেনি বিদেশীদের সামনে দেখানো তার এই দাম্ভিকতা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল অথবা সেটা পাকিস্তানি বাহিনীর কাপুরুষত্ব ফুটিয়ে তুলেছে। যাই হোক মুক্তিবাহিনী এখন খুব ভালভাবে প্রস্তুত যে কোনো ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ তৈরি হও সে সময়ে যে সমস্ত সাংবাদিক বাংলাদেশের অব্রুদ্ধ এবং মুক্তাঞ্চলে প্রবেশ করতেন, তাদের প্রায় সবাই মুজিবনগরে আসতেন আগ্রহী লোকেদের তাদের রিপোর্ট শোনাতে। এই বিশেষায়িত জনগোষ্ঠী গত ২-৩ সপ্তাহে প্রচুর পরিমাণে আসতে শুরু করেছেন, এদের মধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ভাবে প্রচারিত সংবাদ্মাধ্যমের সাংবাদিক ও রয়েছেন, যারা সারা বিশ্বকে তাদের নিজস্ব ভঙ্গীতে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, ২৫ মার্চ রাতেই পাকিস্তানের মৃত্যু হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ এখন কেবল একটি বাস্তবতাই নয়, বরং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তারা ক্রমক্ষয়িষ্ণু দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পূর্ণ সামরিক বিজয় লাভে সক্ষম হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য যে, এই সাংবাদিক বা ফটোগ্রাফারদের অনেকেই কেবল নিজের পেশাগত খ্যাতির তাড়নায় একটি অনবদ্য গল্পের লোভে এই ঝুকিপূর্ণ এলাকায় প্রবেশ করেছিলেন, কোন শুভ উদ্যোগের সঙ্গী হতে নয়, যে কারনে, অনেক ক্ষেত্রেই তাদের রিপোর্ট যদিও জনগণের দুর্ভোগের সঠিক প্রতিফলন হয়ে উঠতে পারেনি, কিন্তু কি ঘটেছে তার একটি দিক নির্দেশক হিসেবে এগুলো চমৎকার কাজ করেছে।গত প্রায় ২ সপ্তাহ ধরে আমি ব্যক্তিগত ভাবে এরকম অনেক সাংবাদিকদের সাথে দেখা করেছি, তারা সবাই আমাকে পাকিস্তানী বাহীনির অসহায়তার কথা বলেছে। এক মাস আগেও তারা এভাবে বলতে সংকোচ বোধ করত। দখলকৃত এলাকায় অবর্ণনীয় অত্যচার আর হত্যযজ্ঞের বিবরণেও পাকবাহিনির নার্ভাস্নেসের বিষয়টি বোঝা যায়। আসলে, মুজিব বাহিনির এক একটি বিজয়ের সাথে সাথে পাক বাহিনির অরাজকতা আরো বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। অবরুদ্ধ এলাকায় থাকা জনগণ, বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার জনগণকে যেকোন পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হবে। ধীরে ধিড়ে জাল গুটিয়ে আসছে, সব দিক থেকে মুক্তি বাহিনির ছেলেরা এগিয়ে যাচ্ছে ঢাকার দিকে। হানাদার বাহিনীর রসদ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে থাকলে আমরা ধারণে করছি যে তাদের কর্মকর্তারা তাদের নির্বোধ গোয়ার সৈন্যদের তাদের অস্ত্র আর গোলাবারুদ শেষ হবার আগ পর্যন্ত নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালাবার নির্দেশ দিয়ে বিমানে করে বাংলাদেশ ত্যাগ করবে, আর সেই সৈন্যদল নিরবিচার হত্যাযজ্ঞের পর নিজেরাও মারা যাবে। এর খুব বেশি দেরি নেই, অতএব, সাধারণ জনগনের এখনি প্রস্তুতি নিতে হবে, ঠিক যেভাবে প্রস্তুতি নেওয়াকে তাদের কাছে সবচেয়ে কার্যকর মনে হয়। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হতে হবে বেচে থাকা এবং মুক্তিবাহিনি যখন সেনানিবাস অবরোধ করবে তখন তাদের যেভাবে সম্ভব সাহায্য করা। খুব সম্ভবত সেনানিবাসের ভিতর থেকে শেল আর মরটারের সাহায্যে তারা পুরো শহর গুড়িয়ে দেবার চেষ্টা করবে, এমনকি মিনি চীনা ট্যাংক দিয়ে শহরে আক্রমণ চালাতে পারে, তবে ট্যাংক নিয়ে ভয়ের কিছু নেই কেননা এই ট্যাংক ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনীয় এন্টি ট্যাংক অস্ত্র মুক্তি বাহিনীর কাছে যথেষ্ট পরিমাণে আছে।ইতোমধ্যে পশ্চিমাঞ্চলে পাক বাহিনি এরকম ১৩ টি ট্যাংক হারিয়েছে। খুব সম্ভবত পাক বাহিনিসেনানিবাস থেকে বেরিয়ে এসে মুক্তি বাহিনির মোকাবিলা করবে না কেননা তারা রাস্তায় নেমে মুক্তি বাহিনির মোকাবিলে করতে ভয় পাচ্ছে। যুদ্ধ কতক্ষন স্থায়ী হবে তা নির্ভর করবে পাক বাহিনী কতক্ষণ সেনানিবাস ধরে রাখতে পারবে তার উপর। মুক্তিবাহিনির উদ্দেশ্য হলে তাদের এদেশের মাটি থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করা, এটা মাথায় রেখে জনগণকে তৈরি হতে হবে। সময় নষ্ট করার অবকাশ নেই। সেনানিবাস থেকে দূরে থাকুন। অন্যদিকে, গত সপ্তাহের শেষ দিকে ঢাকায় ঘটে যাওয়া গণহত্যার ব্যাপারে এখনো সারা বিশ্ব অন্ধকারে আছে। হঠাত করে কার্ফিউ জারি করে ১৫ ঘন্টা ধরে বেসামরিক নাগরিকের উপর যে হত্যাযজ্ঞ তারা চালিয়েছে বলে আমরা শুনতে পারছি, তা বিশ্বের কোন সংবাদ মাধ্যম বা রেডিও তো আসেনি। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় এই খুনী কর্তৃপক্ষ কিভাবে সংবাদ প্রতিনিধিদের হত্যাযজ্ঞের খবর প্রকাশে বাধা দিচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই, তারা সকল হত্যাযজ্ঞের খবর চিরন্তনের জন্য চাপা দিতে পারবেনা। অচিরেই কিছু বিদেশী সাংবাদিক ঢাকায় আসবে কি ঘটেছে সে খবর সংগ্রহ করতে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদন অনুযায়ী সেদিন কার্ফিউ জারির অনেক আগেই মুক্তিবাহিনির সাথে পাক হানাদার বাহিনির সংঘর্ষ হয়। সেখানে পরাজয় মেনে নিতে না পেরে দখলদার বাহিনি পরে কার্ফিউ জারি করে বেসামরিক জনগনের উপর তাদের মনের ক্ষোভ মেটায়, যা কাপুরুষ এক সেনাবাহিনির আদর্শ রূপ।এই যুদ্ধ প্রমাণ করেছে পাকিস্তানের প্রভুরা সরাসরি মধ্যযুগীয় বর্বর সমাজের প্রতিনিধি এবং আধুনিক সমাজের কোন মূল্যবোধই তাদের মনে কোন দাগ কাটতে পারেনি। অন্যদিকে সৈনিক হিসেবে, তারা চুড়ান্ত রকমের ভীতু। তারা কেবল নিরস্ত্র নর নারি আর শিশুদের বিরুদ্ধেই প্রবল পরাক্রমে যুদ্ধ করতে পারে
খন্ড অবশ্যই হত্যাকারীরা পুরো ঘটনা সবসময় চাপা রাখতে পারবে না। শীঘ্রই হয়তো কিছু বিদেশি সাংবাদিক ঢাকা থেকে বের হয়ে পুরো পৃথিবীকে জানাবে সতিকার অর্থে সেখানে কি হয়েছে। আমাদের তথ্য অনুসারে, কারফিউ জারি হওয়ার অনেক আগেই মুক্তিবাহিনী এবং হত্যাকারীদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। যুদ্ধে হেরে অনুপ্রবেশকারীরা সাধারণ জনগণকে হত্যায় লিপ্ত হয় যা কি না তাদের কাপুরুষতার লক্ষন। এই যুদ্ধ প্রমাণ করে যে পাকিস্তানী শাষক গোষ্ঠী ইতিহাসে বর্ণিত মধ্যযুগীয়দের মতো বর্বর এবং আধুনিক সভ্যতা ও তার মূল্যবোধ তাদের উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। যোদ্ধা হিসেবেও তারাও অতিমাত্রায় ভীতু। তারা শুধু নিরস্ত্র নারী-পুরুষ এবং শিশুদের সাথেই যুদ্ধ করতে পারে। ২৪ নভেম্বর, ১৯৭১ শেষ যুদ্ধ শুরুঃ মুক্তি বাহিনী শীর্ষে বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার আগে দিয়ে আশ্চর্যজনক হারে অনেক পন্ডিত বিভিন্ন যায়গায় তাদের মতামত জ্ঞাপন করেছিলেন এই বলে যে আসন্ন শুকনা মৌসুমে বর্বর পাকিস্তানীরা হারকিউলিসের আর্মিতে পরিণত হবে এবং দূর্বল বাঙ্গালী মুক্তিযোদ্ধাদের নিশ্চিহ্ন করে দেবে। স্বাভাবিকভাবেই এই আশা সেসকল পন্ডিতেরাই করেছিলেন যারা কল্পনায় পাকিস্তানকে ধারণ করে। অর্ধেক ভবিষ্যতবাণী সত্যিও হয়েছিল আর সেটা হচ্ছে কিছু মানুষকে কুচি কুচি করে কাটা হয়েছিলো। এটা এতোটায় প্রকাশ্য ছিল যে অনিচ্ছুক বিদেশী সাংবাদিকরাও তা জানতেন। প্রায় চার সপ্তাহ আগে যখন থেকে মুক্তিবাহিনী তাদের হিট এবং রান কৌশল ছেড়ে হিট-স্টে-ক্রাশ কৌশল নেয়, সেসময় থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ যুদ্ধ সহ অন্যান্য যুদ্ধে অনুপ্রবেশকারীদের অনেক প্রাণহানি ঘটে এবং এতে করে বাংলার সাহসী তরুণ সিংহরা তাদের মনে স্থায়ী এক ভীতির সঞ্চার করে। নিজেকে সম্পূর্ণ ক্ষমতাহীন বুঝে ইয়াহিয়া সেই ক্ষোভ মেটান প্রতিবেশী ইন্ডিয়ার নিরাপত্তাহীন শহর এবং গ্রামগুলোতে শেল ফেলে এবং নিরাপরাধ সাধারণ জনগণকে হত্যা করে যাতে লুটেরা নাদির শাহ’র এই বংশধর বেশ অভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে। জবাবে ভারত অসীম ধর্য্যের পরিচয় দেয় যা দেখে ইয়াহিয়া-ক্লিকে তাদের মাংসল শরীর এলিয়ে দেয়। যেদিন থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা হাতে অস্ত্র তুলে নেয়, সেদিন থেকেই ইসলামাবাদের ভীতুগুলো বাংলাদেশ-ইসলামাবাদ দ্বন্দ্বকে আন্তর্জাতিকবভাবে প্রতিষ্ঠিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। যদিও এই জানোয়ারদের অনেক বিদেশী সহযোগী ছিল (তারপরও তারা তা প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হয়ে বিভিন্ন কারণে) আন্তর্জাতিকভাবে ব্যর্থ হয়ে তারা পাকিস্তানের সাড়ে ৪ কোটি মূর্খ, সন্দেহহীন জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করে। শেষ সপ্তাহের শুরুর দিকে, মুক্তিবাহিনী যখন স্বাধীনতার এই যুদ্ধের শেষ পর্যায়ের শুরু করে, পাকিস্তানী অনুপ্রেবেশকারীরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং সকল ক্ষেত্রে তারা পিছু হঠতে বাধ্য হয়। প্রতিটি পরাজয়ের পেছনে ইসলামাবাদ নিয়ন্ত্রিত রেডিও ভারতীয় সৈন্যের সম্পৃক্ততার মায়াকান্না শুরু করে।
radios cry hoarse over imaginary involvement of Indian troops অবশ্যই এই অফিসিয়াল লাইন টি শুরু থেকেই তাদের দাবি ছিল।তারা সবসময় মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী বলে আত্মতৃপ্তিতে ভোগে।এই মূর্খ ভুমিকা তাদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হাসির খোড়াকে পরিনত করেছে।কিন্তু তারপরেও ধিক্কার কিংবা আন্তর্জাতিক অপমান প্রায় চিনাবাদাম এর আকৃতির মস্তিস্কের উদ্ধত মহিষের কাছে একটু কমই।
এমনকি নিরপেক্ষ সাংবাদিক ইসলামাবাদের এই কাল্পনিক গল্প বিশ্বাস করবে না যে ভারতীয় ট্যাংক যশোরে দিকে এগুচ্ছে,এটি একজন ভয়ার্ত জেনারেল এর কাছে খুব সামান্য বিষয়।তারা ইতিমধ্যেই জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে এবং ক্ষিপ্ততার সাথে একটি থিতান যুদ্ধকে ভারতের আশার বিপরীতে এই আশা ছুড়ে দিয়েছে যে কেউ একজন বাংলাদেশে তাদের উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসবে।যদিও এখন একটি শিশু জানে ইসলামাদ ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিতে চায় কারন এটি শুধু বুঝাবে পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানি রক্ত ঝরছে।এখন পর্যন্ত হত্যাকারী জান্তা সফলভাবে পাকিস্তানের সমগ্র জনতাকে ভয়ানক মিথ্যার সহিত বাংলাদেশের ধ্বংস সম্পর্কে মারাত্মক ধোঁকা দিচ্ছে এবং the crisis that was precipitated by nobody else but the junta members almost out of the blue পাকিস্তানী সৈনিকদের হাজার হাজার দেহ বাংলাদেশে হয় কবর দেয়া হচ্ছে অথবা পেট্রোল পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এই খুনী জন্তা, বড় পরিসরে এবং সফলতার সাথে জঘন্য মিথ্যা দিয়ে পুরো পাকিস্তানী জনগণকে বাংলাদেশে হত্যাকান্ড এবং সঙ্কট সম্পর্কে অন্ধকারে রেখেছে, যা কোন সংকেত ছাড়াই এই জন্তার সদস্যা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে হাজার হাজার পাকিস্তানী সৈন্যের মৃতদেহ পুতে ফেলা হয়েছে অথবা পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এবং এসব মৃত সৈন্যদের লজ্জাজনক মৃত্যু সম্পর্কে কিছুই প্রকাশ করা হবে না। কিন্তু যখন ভারতীয় ট্যাঙ্ক এবং বিমান সত্যিকার অর্থে লাহোর, করাচি এবং রাওয়ালপিন্ডিতে আক্রমন করতে শুরু করেছে, আমাদের রক্তের বদলা হিসেবে পাকিস্তানী রক্তের বন্যা বয়ে যাবে, এবং জন্তার এই পুরো খেলাই শেষ হয়ে আসবে।