ইসলামের দৃষ্টিতে

শিরোনাম সূত্র তারিখ
১১। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র

প্রচারিত ধর্মীয় আলোচনা

অনুষ্ঠানের কয়েকটি কথিকা

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের

দলিলপত্র

…….১৯৭১

ইসলামের দৃষ্টিতে

…জুলাই, ১৯৭১

মানুষ যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন অথবা যে স্বভাবেরই হোক না কেন, আল্লাহতায়া কতগুলো বিষয় থেকে তাকে কখনো বঞ্চিত করেন না। একজন মানুষ অবিশ্বাসী হতে পারে, নাস্তিক বা কাফের হতে পারে, অথবা আল্লাহর বিরুদ্ধে শত্রুতা করতে পারে, কিন্তু তবুও মানুষ হিসাবে তার কতগুলো অধিকার ইসলামে স্বীকৃত। সেসব অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করবার ক্ষমতা কারোরই নেই। এ অধিকারগুলো হচ্ছে- আলোর অধিকার, বাতাসের অধিকার, পানির অধিকার এবং মৃত্তিকার অধিকার। অর্থাৎ মানুষকে আলো থেকে বঞ্চিত করবার, বাতাস থেকে বঞ্চিত করবার, পানি থেকে বঞ্চিত করবার এবং মৃত্তিকা থেকে বঞ্চিত করবার অধিকার কারো নেই।

আল্লাহতায়ালা চরমতম পাপীকেও এ সমস্ত অধিকার থেকে মাহরুম করেননি। সুতরাং যেখানে আল্লাহতায়ালা শাশ্বতরূপে কতগুলো অধিকারের সংগে মানুষকে যুক্ত রেখেছেন সেখানে পৃথিবীর কোন প্রচল শক্তিরই অধিকার নেই সেই কল্যাণ থেকে মানুষকে বঞ্চিত করার। যখন মানুষ নিষ্ঠুর হয়ে আল্লাহর নাফরমান হয়ে এসমস্ত অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করতে চায়, তখন সে মানুষ ইসলামের দৃষ্টিতে যথার্থ পাপী বলে চিহ্নিত হয়।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বর্তমানে যে নৃশংস অন্যায় লীলা চলছে সেগুলো পরিপূর্ণভাবে ইসলামবিরোধী এবং আল্লাহতায়ালার শাশ্বত ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তাদের ঘরসংসার, কৃষিজীবন এবং সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে জীবনযাপন করছিল- সে সমস্ত মানুষকে তাদের সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করে পথে যারা বের করেছিল তারা সম্পূর্ণভাবে ইসলামবিরোধী। যে মানুষ ক্ষুদ্র এক মাটির ওপর ঘর বানিয়ে সংসার যাপন করেছে, যে মানুষ উৎসবে-আনন্দে প্রতিবেশীদের সঙ্গে মানবিক সম্পর্ক নির্লিপ্তি হচ্ছে সেসব মানুষকে তাদের সকল প্রকার সম্পদ থেকে বিচ্ছিন্ন করা শুধু যে মানবিক বিচারে অন্যায় তাই নয়, এটি জঘন্যতম পাপাচার এবং ইসলামের মর্মমূলে প্রচণ্ড আঘাত। কোরান শরীফের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহতায়ালা ফলবান বৃক্ষের সাক্ষ্য দিচ্ছেন, নদী এবং সমুদ্রের সাক্ষ্য দিচ্ছেন, বাতাস এবং মৃত্তিকার সাক্ষ্য দিচ্ছেন। এগুলো দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহতায়ালা মানুষকে এই চারটি সম্পদের মধ্যে প্রকাশিত দেখতে চান।

অর্থাৎ কোন মানুষ খাদ্যের অভাবে কষ্ট পাবে না, পানির অভাবে পিপাসার্ত থাকবে না, বাতাসের অভাবে নিঃশ্বাস রুদ্ধ হবে না এবং মৃত্তিকার অভাবে গৃহহারা হবে না। সুতরাং, যে সমস্ত লোক বাংলাদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে, বঞ্চনা এবং হত্যাকাণ্ডে সময়কে কলুষিত করছে, তারা ইসলামের নাম মুখে উচ্চারণ করলেও পৃথিবীতে তারাই একমাত্র ইসলামবিরোধী। সুতরাং আল্লাহর লানৎ তাদের ওপর একদিন না একদিন পড়বেই।

যারা নিষ্পাপ, নিরপরাধ- যারা শুধু বাঁচার অধিকারের কথা ঘোষণা করতে চাচ্ছে তাঁদের জয় একদিন হবেই। বাংলাদেশের মুসলমান অত্যন্ত নিগৃঢ়ভাবে ধর্মবিশ্বাসী এবং আল্লাহর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ। এ সমস্ত মানুষের বিরুদ্ধে যারা অন্যায়ভাবে মারণ অস্ত্র ধারণ করেছে, আমি ইসলামের নামে তাদের বিরুদ্ধে অভিশাপ ঘোষণা করছি।

আমাদের জয় হবেই, আমাদের জয় অপরিহার্য ।।

(সৈয়দ আলী আহসান রচিত)

Scroll to Top