জলোচ্ছ্বাস কবলিতদের প্রতি উদাসীনতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট এর কাছে ১১ জন নেতার তারবার্তা

<2.132.577-578>

শিরোনামসূত্রতারিখ
জলোচ্ছ্বাস কবলিতদের প্রতি উদাসীনতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্টে-এর কাছে ১১ জন নেতার তারবার্তাদৈনিক ‘পূর্বদেশ’২৪ নভেম্বর,১৯৭০

 

প্রেসিডেন্টের কাছে পূর্ব বাংলার এগারোজন নেতার তারবার্তা

সরকারের ক্ষমহীন অবহেলা ও উদাসীনতা দেশবাসীর বিশ্বাসের উপর প্রচণ্ড আঘাত হেনেছে।

          ঢাকা, ২৩ নভেম্বর (পিটপিআই):- এগারোজন রাজনৈতিক নেতা গত রবিবার ঢাকায় এক বিবৃতিতে বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ গত সপ্তাহে সংগঠিত মানব সভ্যতার বৃহত্তম ধ্বংসলীলার প্রতি সরকারের ক্ষমাহীন অবহেলা, উদাসীনতা এবং খবর চাপা দেয়ার প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা করেছেন।

          পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, পিডিটি প্রধান জনাব আতাউর রহমান খান, ন্যাপ (ওয়ালী) পূর্ব পাকিস্তান শাঁখার সভাপতি অধ্যাপক মুজাফফর আহমদ, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কাউন্সিল) সভাপতি খাজা খয়েরুদ্দিন, প্রাদেশিক জামাত সভাপতি গোলাম আজম, মুসলিম লীগ কাইয়ুম গ্রুপ সাধারণ সম্পাদক খান সবুর, ক্রিসক-শ্রমিক পার্টি সভাপতি জনাব এএসএম সোলায়মান, নেজামে ইসলামের মাওলানা সিদ্দিক আহমেদ, জমিয়তে উলেমা পার্টির পীর মোহসেন উদ্দীন এবং পিপলস পার্টির গরীবে নেওয়াজ সম্মিলিতভাবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে এক তারবার্তায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন যে, সরকার কি করে এমন একটি ধ্বংসলীলাকে ধামা চাপা দিতে সচেষ্ট হচ্ছেন, যার জন্য কোন মানুষ অথবা সরকার দায়ী নয়।

 

          তারা আরো বলেন যে এটা অত্যন্ত গোলমেলে ব্যাপার যে, আমাদের নিজস্ব সরকারের চেয়ে অনেক বেশী ব্যাগ্রভাবে বি,বি,সি মার্কিন সিনেট এমনকি ভারতীয় পার্লামেন্ট সময়ের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন। একজনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উপদ্রুত এলাকার সফর করেন নি। এমন কি প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত প্রাথমিক খবর পাওয়ার পর দায়সার গোছের দায়িত্ব সম্পাদন করে পূর্ব পাকিস্তান থেকে চলে গেছেন।

 

          তার বারতায় বলা হয়, “মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী বিপর্যয়ের প্রশ্নে নিদারুণ অবহেলা, সহানুভূতিহীন অমনোযোগিতা, চরমা উদাসীনতা ও এই বিপর্যয়কে ধামাচাপা দেয়ার অশুভ প্রচেষ্টাকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগন তীব্র নিন্দা করছে। যে কাজের জন্য সরকার অথবা কোন মানুষ দায়ী নয় সেই মর্মান্তিক ঘটনা সরকার কেন ধামাচাপা দিয়ে রাখতে চাচ্ছেন তা বোধগম্য নয়। বিবিসি মার্কিন সিনেট ও ভারতীয় পার্লামেন্ট যখন সময়ের আহবানে ব্যগ্রভাবে সাড়া দিয়েছে তখন আমাদের সরকারের নীরবতা একটা গোলমেলে ব্যাপার। কোন মন্ত্রী এখানে নেই। আপনি নিজে ভাসা-ভাসাভাবে সফর করে প্রদেশ ত্যাগ করেছেন। বৃটেনে নিযুক্ত হাই কমিশনার ৫৮ টি হেলিকপ্টার ও পরিস্তিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন-এ প্রশ্নে অত্যন্ত দায়িত্বহীন ও ভিক্তিহীন বিবৃতি দিয়েছেন। যখন কর্তৃপক্ষ ইতিহাসের বৃহত্তম বিপর্যয়কে নাগালের মধ্যে নয় বলে নাকচ করে দেন এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ও বিপুল এলাকার ব্যাপক ধ্বংসের ব্যাপারে তাদের অজ্ঞানতা ও দায়িত্বহীনটার প্রমাণ দেন তখন তা মানুষের উপর প্রচণ্ড আঘাত হানে। এখনও পর্যন্ত মানুষ ও পশুর লাশ ইতস্ততঃ ছড়িয়ে আছে।”

 

“নিদারুণ ইবহেলার জন্য বহুসংখ্যক জীবিত লোক মৃত্যু বরণ করেছে ও এখনো মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। ব্যাপক মহামারীতে ইতিমধ্যেই বহু লোক মারা গেছে। যদি অবিলম্বে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গৃহীত না হয় তাহলে আরো লাখো মানুষের ভাগ্যে অনুরূপ হবে। বিদেশী সাহায্য সামগ্রী সমূহ দুঃখজনক অদক্ষতার সাথে নড়াচড়া করা হচ্ছে। দু’দিন ধরে সে সব ঢার‍্য স্তুপীকৃত হয়ে আছে। দুঃখের সাছে আরো এসেছে পুঞ্জিভূত অসন্মান, লজ্জা; অবহেলা।আপনার সদর দফতর এখানে স্থানান্তরিত করা আত্যাবশ্যক। সকল প্রকার সরকারী ও বেসরকারী সম্পদ কাজে লাগান। জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে পরিস্থিতিকে যুদ্ধকালীন জরুরী অবস্থার মত বিবেচনা করুন।”