জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রতিনিধি মাহমুদ আলীর বিবৃতি

৭.৬৯.১৩৯ ১৪৬

শিরোনামঃ ৬৯। জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রতিনিধি মাহমুদ আলীর বিবৃতি

সুত্রঃ বাংলাদেশ ডকুমেন্টস

তারিখঃ ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

.

জাতিসংঘে সাধারণ সভায়  পাকিস্তানের প্রতিনিধি মাহমুদ আলীর বিবৃতি :২৭শে সেপ্টেম্বর,১৯৭১

 

        ভারতের সম্মানীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর উত্থাপিত বিবৃতির আদেশ ক্রমের ভিত্তিতে বাধ্য হয়ে আজকে আমি এই বিবৃতি দিচ্ছি। তার বিবৃতির বৃহত্তম অংশে যে বিষয়ে উদ্বেগ  প্রকাশ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং তা  আমার দেশের অভ্যন্তরীণ অধিকারভুক্ত অঞ্চলের মধ্যে সম্পর্কগত ভাবে অবস্থান করে। আমার প্রতিনিধিত্ত মূলনীতির দ্বারা পরিচালনা করা হয়েছিল যা অনুচ্ছেদ ২, ক্রিয়াশীল অনুচ্ছেদ ৭, জাতিসংঘের দলিলের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। দৃষ্টান্তস্বরূপ যেখানে বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য রাষ্ট্ররা অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না।

        এই নীতি সর্বসম্মতি ক্রমে গৃহীত হয় এবং তা আফ্রিকান ঐক্য সংস্থাতেও পাওয়া যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থার সাথে সাথে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার ফোরামেও পাওয়া যায়। যেমন জোট নিরপেক্ষ অধিবেশন এবং আফ্রিকান – এশিয়ান অধিবেশন সংস্থা। আমরা জানতে চাই এই নীতিটি কেন অসমর্থন করা হচ্ছে  এবং তার সাথে কটাক্ষও করা হচ্ছে?  কারন পাকিস্তানের কিছু গোপন করার আছে -কিন্তু আজ সকালে ভারতের প্রতিনিধিত্বর কারনে তা কঠিন করছে। আর তা হলে কার্যকরী পদবতিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনা করা অসম্ভব হয়।

        ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছে, আন্তর্জাতিক আচরণ, আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদের সব নিয়ম লঙ্ঘন করে।আন্তর্জাতিক আইন সকল রাষ্ট্রের প্রতি সম্মান রেখে প্রাদেশিক অধিকারভুক্ত অঞ্চলের জন্য সমস্ত রাষ্ট্রের জন্য একটি পরিষ্কার বাধ্যবাধকতা রাখে। ডিসেম্বর , ১৯৬৫ তে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় কেবলমাত্র একটি না ভোটের বিপরীতে রেজুলেশন অবলম্বন করেছিল যেখানে অভিহিত ছিল ‘’ স্বাধীনতা ও সারভৌমত্ত রক্ষার জন্য রাষ্ট্রের ঘরোয়া বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং অগ্রহণীয়তা  ঘোষণা করা হয়েছে। ‘’

        রাষ্ট্রের বলবত ১ম অনুচ্ছেদ,

        কোন রাষ্ট্রের যে কোন কারনেই প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে  অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অথবা বহিরাগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে না। ফলে সশস্ত্র হস্তক্ষেপ এবং অন্যান্য হস্তক্ষেপের রুপ অথবা রাষ্ট্রের ব্যক্তিগত বিষয়ে ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা অথবা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক অথবা সাংস্কৃতিক উপাদানের উপর হস্তক্ষেপের চেষ্টার বিরুধে নিন্দা করা হয়।

        বলবত ২য় অনুচ্ছেদ পঠিতঃ

……… কোন রাজ্যকে সংঘবদ্ধ করা, সাহায্য করা, উসকে দেওয়া, প্ররোচিত করা অথবা নিসিদ্ধ কাজে বাঁধা না দেয়া, সন্ত্রাসী অথবা যে কোন কার্যকম  অন্য রাষ্ট্রর শাসন ব্যবস্তাকে সহিংস করা অথবা অন্য রাষ্ট্রের অসামরিক শত্রুতায় হস্তক্ষেপ করা।

অবেশেষে, কার্যকর অনুচ্ছেদ ৪ এর বলেঃ

        ‘’ ৪, এই বাধ্যবাধকতাগুলি কঠোর ভাবে মান্য করা প্রয়োজনীয় যাতে একটি জাতি অন্য একটি জাতির সাথে শান্তিতে বসবাস করতে পারে, যে কোন ধরনের হস্তক্ষেপের অনুশীলন শুধুমাত্র জাতিসংঘের দলিলের মূলনীতিতে আঘাত করে না বরং তা আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তাকে হুমকির দিকে পরিচালিত করে। [রেজুলেশন ২১৩১ ( XX ) ]

        এইটি উল্লেখযোগ্য যে ভারত কমিটির একটি সদস্য ছিল যেটি ডিসেম্বরে প্রস্তুত করেছিল।

        আমি নিশ্চিত যে এখানে উপস্থিত সকল প্রতিনিধি অজ্ঞাত নয় যে আমরা পাকিস্তানের সমস্যার  একটি সমাধান খুজে পেতে চেষ্টা করছি। মিটমাট  করার ক্ষেত্রে যে সমসা তৈরি হয়েছে তা অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং আঞ্ছলিক দাবী ………… যা পাকিস্তানের মতো একটি দেশের জন্য অনন্য নয়। তারা বহুভাষিক, বহুবিচিত্র সংস্কৃতি , বহুজাতি হিসাবে রাষ্ট্রের সমস্ত জায়গায় উপস্থিত হয়। এই সমস্যায় ভারত নিজেও কবলিত, তথাপি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আমার দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অবস্থার বিষয় বলাটাকে শোভন মনে করেছে। আমি তার দেশের মধ্যে কি চলছে সে বিষয়ে কথা বলাটা এখানে প্রস্তাব করি না এবং এই বিষয়ে বেশি কিছু বলারও নেই। আমরা সবাই জানি এবং বিশ্ব জানে ভারতের মিজো  এবং নাগাদের কি ঘটেছিল । পশ্চিম বঙ্গের ভারতীয় রাজ্যের টারমিল এবং অসামরিকদের কন্দল সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। যা গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে বিগত ৪ বছরেও কিছু করা সম্ভব হয়নি। দক্ষিন ভারতের পাঞ্জাবের এবং তাদের অধিকারের চাহিদার বিষয়ে আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমার এই বিষয় খনন করার কোন অভিপ্রায় আমার নেই এবং আমি আমার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে এই অগাস্ট সমাবেশে নিশ্চিত ভাবে কোন প্রচার করার প্রস্তাব রাখি না যদিও দুর্ভাগ্যবশত দেখা যাচ্ছে আমার প্রতিবেশি এই বিষয়ে খুবই উপযুক্ত।  

        পাকিস্তানে বিরাজমান পরিস্তিতির মৌলিক কারন আছে, আমি নিশ্চিত , এখানের প্রতিনিধিদের তা  পার্থক্য করাটা খুব অজানা নয়। যদিও তা  প্রচারের ঝড়ের কারনে মেঘলা এবং বাষ্পভূত হচ্ছে যার  উধাহরন এই প্রভাতে শুনেছিলাম।

        মৌলিক কারণ হলও সাধারণ নির্বাচন  ডিসেম্বরের শেষে পুরো পাকিস্তান জুড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই নির্বাচন প্রাপ্ত বয়স্ক বাক্তিদের ভোটাধিকারের  ভিত্তিতে ধরা হয়েছিল। তারপর যা হলও পাকিস্তানের জনগন বৈধতার আকাঙ্খায় গণতান্ত্রিক ও কেন্দ্রীয় ধরনের যেটি একটি একক স্বায়ত্তশাসনের পূর্ণ মাপ দিবে এবং বহিরাগত একটা সংগঠিত চাল দেশ ভাগের জন্য ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করা হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানে সহিংসতা  ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল । জীবন এবং সম্মান শুধুমাত্র যারা রাষ্ট্র থেকে সরে আসতে চেয়েছে তাদের সাথে সাথে সাধার জনগন কেও বিপদ গ্রস্ত করে রাখা হয়েছিল। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন রাজনৈতিক দলের মাঝে একটি সন্ধি স্থাপনের জন্য, রাজনৈতিক দল থেকে যখনটা অস্বীকার করা হয়েছিল। যারা জাতীয় আসন সংখ্যা গরিষ্ঠতালাভ করেছে। এটি স্পষ্টত যে পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান প্রনয়ন করা যায়নি কিন্তু  যার মানে সহিংসতার মাধ্যমে তা  পরিচালনা করা।

        এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান যে নির্বাচনটি অনুস্থিতিত করেছিল তিনি বাধ্য হয়ে পাকিস্তানের সংহতি  অখণ্ডতা বজায় রাখার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে তাদের দায়িত্ব পালনে আদেশ দিয়েছিলেন। আমরা ভারতের তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া খুজে পেয়েছিলাম। উদ্ভাস্তুদের কোন সমস্যাই ছিল না। আজ সকালে যা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী পাকিস্তানে অনধিকার চর্চার জন্য একটি অজুহাত হিসাবে পেশ করেন।

        ভারতীয় পারলামেন্ট একটি সমাধান অবলম্বন করেছিল, যা ভারতীয় প্রধান মন্ত্রীর নিজস্ব মতবাদে চলছিল। তথাকথিত বাংলাদেশের জন্য সমর্থন ঘোষণা করেছে। একটি বিশাল এবং ঐক্য বদ্ধ প্রচার অসত্য ঘটনাকে গতি দিচ্ছে। কলকাতা এবং অন্যান্য জায়গায় অর্ধ-সত্য আর কলঙ্কের জাল বোনা হচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানে  যুদ্ধের গল্পটা হিসাব করে প্রচারিত হয়েছে। গল্পে খামখেয়ালি মৃত্যুদণ্ড এবং বিশাল অঙ্কের হত্যাকাণ্ড সহ আরও অনেক কিছু বলা হয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল, বুদ্ধিজীবীদের তাদের পরিবারের চোখের সামনে থেকে তুলে মেরে ফেলা হয়েছিল এবং চিটাগং পোর্ট কসাইখানায় পরিনত হয়েছিল।

        এই বিষয়ে আমাকে ভারতীয় সংবাদপত্রের মতামত আমাকে উল্লেখ করতে দিন।

        ৪ই আগস্ট, ১৯৭১, দিল্লীর স্তেটসম্যান পত্রিকায় লিখেছে যে অনেকের দাবী অতিরঞ্জিত পর্যায়ে পরিমাপ করা যায়। যদি তা সরাসরি উদ্ভাবন না করা যায় তা  অবশ্যই পরিস্কার যে তারা তা  তৈরি করেছিল। পরবর্তী প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছিল তাদের মাঝে  যারা বিষয়গুলো দাবী করেন এবং যারা নিজ শক্তিতে চিন্তা ছাড়াই বিষয়গুলো দৃঢ় ভাবে মেনে নেন।

        সেনাবাহিনীর প্রবর্তন করার এক সপ্তাহের চেয়ে কম সময়ের মাঝে ঢাকা শহর থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবহার করা হয়েছিল অস্ত্রাগার  অপশারন করার জন্য যেখানে শক্তিশালি অস্ত্র এবং বিস্ফোরক পাওয়া গিয়েছিল এবং যা দেশের বাহির থেকে গ্রহন করা হয়েছিল তা সত্তেও সব কাজ অক্ষতভাবে করা হয়েছিল। যে সব বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রতিবেদন করা হয়েছিল ভারতীয় প্রচারের মাধ্যমে, তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে যা নিউ ইয়র্ক টাইমসে কিছু মাস আগে প্রকাশ করা হয়েছিল।

        পাকিস্তানের ঘটনার উপর ভারতীয়দের উৎকণ্ঠার কারন খুবই স্বচ্ছ এবং প্রকৃত পক্ষে তা আত্ম- স্বীকৃত। ওয়াশিংটন এর প্রতিবেদন, ২য় এপ্রিল এর প্রতিবেদন যা একজন ভারতীয় কর্মকর্তা বিবৃত করেছিলেন যে এটি একটি মনঃ স্তাত্তিক যুদ্ধ ছিল, যদিও তা রিপোর্ট করা হয়নি।

        একজন বিদেশী পর্যবেক্ষক, মিঃ ব্রউনও ডি হামেল লিখেছিলেন, ১৭ই এপ্রিল ’’ লন্ডন টাইমসে ’’, যে ভারতীয় সংবাদপত্রঃ 

‘’……… দেখা যাচ্ছে দায়িত্ব বোধের সব অনুভুতি হারিয়েছে। খবর দরকার, তখন অস্বাভাবিক গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে। দশের মাঝে নয় বারই প্রমানিত হয়েছে যে প্রতিবেদন গুলো অসমর্থিত এবং পরস্পর বিরোধী। নিরসংসতার  যে কোন প্রতিবেদন যা ছিল উদ্দিপনাময় এবং প্রমান ছাড়া নিশ্চিত ভাবে স্থাপন করা হয়েছিল। ‘’

        ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেনতার দেশের জন্য পাকিস্তানী উদ্ভাস্তুদের খাওয়ানো একটি বিশাল বোঝা হয়ে যাচ্ছে। তিনি নয় মিলিয়ন এর বেশি সংখ্যা উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন এখনও হাজার হাজার মানুষ সীমানা পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করছে। তিনি আগামি ৬মাসের তত্ত্বাবধানের জন্য ৬০০ মিলিয়ন ডলার দাবী করেছেন। এই সংখ্যা নিজেই নিজেকে স্তম্ভিত করে। এমনকি যদি ভারতের  সম্মুখে নয় মিলিয়ন উদ্ভাস্তুর বিষয়ে প্রশ্ন রাখা হয়!! আমি ভুল না হয়ে থাকলে চলতি বছরের ভারত সরকারের পূর্ণ বাজেট ৪০০ মিলিয়ন ডলার যা ৫০০ মিলিয়ন জনগন কে চালানর জন্য নির্ধারিত।

        এটা প্রাথমিক ও বাধ্যতামুলকভাবেযারা পাকিস্তানের বাড়িঘর ছেড়ে চলে গেছে এবং যারা এখন ভারতের উদ্ভাস্তু শিবিরে  বসবাস করছে তাদের সকলকে নিরপেক্ষ এবং সঠিক গননার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। আমার সরকার সতর্কতার  সাথে গননা করে বেড় করেছে যে ১লা সেপ্টেম্বর এর হিসাব অনুযায়ী পাকিস্তান ছেড়ে গেছে তাদের সংখ্যা ২০০২৬২৩ জন। আমরা এই হিসাব ভিত্তি ছাড়া বিশ্বাস করার জন্য দাবী করছি না। বিপরীত ভাবে, আমরা জাতিসংঘের সাধারণ সচিবকে অনুরোধ করছি তিনি যাতে যাচাইয়ের জন্য কোন নিরপেক্ষ সংস্থা মনোনয়ন করেন। আমার ঘটনা স্থলে সংস্থাটিকে যে কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়ার জন্য প্রস্তুত। আমি খুবই খুশি হব যদি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীতার সরকারের পক্ষ থেকে অনুরুপ নিশ্চয়তা প্রদান করেন । এটা আরও সম্ভব যদি নিরপেক্ষ সংস্থা নিজে তা পরীক্ষা  করে দেখে যে ভারতের দাবীকৃত বাস্তুহারা ব্যক্তিদের সংখ্যা অথবা তা এখনও অব্যাহত আছে কিনা। আমি একটি সঠিক সংখ্যার উদ্বাস্তু গননার স্বাধীন পরীক্ষা দাবী করছি , যেখানে আমার কোন উদ্দেশ্যই নাই যে মানুষের সমস্যার একটি বড় মাপের আন্দলনের গভীরতা কমানোর। এটা দুঃখজনক কিন্তু অনিবার্য ছিল। ঐ অঞ্চলের বসবাসরত ব্যক্তিগন যারা আছে অথবা মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দৃশ্যপট থেকে পলায়ন করেছে অথবা দাঙ্গার প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। সেই সংখ্যাগুলো যারা সংঘাতের বিপাকে বাস্তুহারা তাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব যা মানুষের মনের মধ্যে ভয় ঢুকে যাওয়ার কারনে উৎপন্ন। এই ধরনের ভয় উৎপন্ন করা তখনি সম্ভব যখন তাদের বলা হবে যে তারা পরিকল্পিত গনহত্যার স্বীকার হবে।

        অনুরুপ উদাহরণ ভারতের প্রধান মন্ত্রীর প্রত্রিক্রিয়ার থেকে পাওয়া যায় যখন ইয়াহিয়া খান উদবাস্তুদের কাছে আবেদন করেন  যাতে তারা তাদের ঘরে ফিরে আসে তখন তিনি বলেন। ‘’ আমি কসাইয়ের কাছে বাস্তুহারাদের ফিরে যাবার অনুমতি দিতে পারি না।‘’

        যারা কোন একটি কারনে নিজ দেশ ছেড়ে চলে গেছে এই জটিল সমস্যায় পাকিস্তান অভিলাস এবং স্থির করে তারা অন্য দেশ ছেড়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের নিজ বাড়ি এবং কর্মস্থলে ফিরে আসে। দৃঢ় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে তাদের পুনরায় সকল সুবিধা  ফেরত দেওয়া হবে। ১৮ই জুন ইয়াহিয়া খান তার আপিল এ বলেনঃ

        আমি ধর্ম নিরপেক্ষ, ধর্ম বিশ্বাস অথবা ধর্ম সমগ্র পাকিস্তান জাতির কাছে আবেদন করছি। পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের লোক কোন রকম দ্বিধা ছাড়াই তাদের বাড়ি ঘরে ফিরে  আসতে পারে। তাদেরকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা এবং সকল সুবিধা প্রদান করা হবে। তারা পাকিস্তানের সমান নাগরিক এবং বৈষম্যমূলক আচরনের কোন প্রশ্নই নেই। আমি তাদেরকে বলব তারা যাতে দুষ্ট অপপ্রচারে  বিভ্রান্ত না হয় যা পাকিস্তান এর বাইরে প্রচার করা হচ্ছে। পাকিস্তান সরকার সীমানা বরাবর ২১তি অভ্যর্থনা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত  করেছে যাতে ত্রাণ, সরবরাহ এবং যানবাহন দেওয়া হয়, যাতে গৃহহারারা  বাড়িতে ফিরে যেতে পারে। পাকিস্তানের যুদ্ধ বিরতির ঘটনা  হিসাবে পলাতক সামরিক ব্যক্তিদের সাথে সাথে সকল শ্রেণীর জনগণকে রাজক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে যারা বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

        ২৮শে জুন জাতির উদ্দেশে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি বলেনঃ

‘’ আমরা আনন্দে এবং কৃতজ্ঞ চিত্তে জাতি সংঘের যে কোন সাহায্য গ্রহন করব এই বাস্তুহারা লোকদের পাকিস্তানে ফিরিয়ে আনার জন্য সুবিধা বৃদ্ধি করব।

        ফলস্বরূপ পাকিস্তান সরকার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সাধারণ সচিবকে পূর্ণ সহযোগিতা বৃদ্ধি করা হয়েছে তাদের বাসস্থান উদ্ভাবন করার জন্য।

        পূর্ব পাকিস্তানে একটি বিশেষ কমিটি স্থাপন করা হয়েছে প্রশাসনিক সহায়তা জাতি সংঘের সংস্থাকে প্রধান করার জন্য।

        উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসন  সুবিধাজনক করতে সীমা রেখার উভয় পাশে উদ্ভাস্তুদের জন্য সেক্রেটারি – জেনারেল এর ১৯ শে জুলাইএর প্রস্তাব পাকিস্তান সরকার ২৪  ঘণ্টার মাঝে গ্রহন করেছে। এটি অবশ্যই লক্ষণীয় যে ভারত অবশ্যই পালনীয়  প্রস্তাবটি বাতিল করেছিল। পাকিস্তান সরকার জাতি সংঘের এই প্রস্তাবেও সম্মত হয়েছিল যে কিছু সংখ্যক জাতি সংঘের সদস্যকে পূর্ব পাকিস্তানে আসন দেয়া হবে ত্রাণ ও পূর্ণবাসন অপারেশনে সহায়তা করতে পারে।

        আমরা আমাদের নাগরিকদের দ্রুত প্রত্যাবর্তনের জন্য সব ব্যবস্থা  গ্রহন করেছি।  যারা ভারতে আছেন তারা এটা এতটাই গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করা হচ্ছে যে উদ্বাস্তুরা তাদের বাড়ি ঘরে ফিরে আসতে শুরু করেছে। শেষ গননা অনুযায়ী প্রায় ২০০০০০ জন ফিরে এসেছে। ভারত থেকে উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসনে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার সাহায্যে আরও দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।

        পাকিস্তান সরকার ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে একটি সম্মেলনে আমন্ত্রন জানিয়েছেন যাতে উদ্দেশ্যটি সম্পূর্ণ করার জন্য চিন্তিত পদক্ষেপ নেয়া যায়। পাকিস্তান সরকার তার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধান মন্ত্রীর সাথে যে কোন সময়ে যে কোন স্থানে এই সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনায় বসার। যদিও ভারত এখনও সহযোগিতা করতে অস্বীকার করছে শুধুমাত্র পাকিস্তান সরকারের সাথে নয় বরং সকল নিরপেক্ষ চেষ্টাকেও । যা উদ্বাস্তুদের ফিরিয়ে আনার জন্য গ্রহন করা হয়েছে। আমি আগেই বলেছি ভারত উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসন সুবিধা জনক করতে সীমারেখার উভয় পাশে উদ্বাস্তুদের জন্য সেক্রেটারি – জেনারেল এর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারত পাকিস্তান সমস্যা নিরসনে নিরাপত্তা পরিষদের একজন দক্ষ  অফিসার পাঠানো হবে পাকিস্তানের এই পরামর্শতেও সমর্থন দেয়া হয়নি। পশ্চিম বাংলায় ইসলামিক সচিবালয়ের প্রতিনিধিদলের সদস্যদের উদ্বাস্তু শিবিরে ভ্রমনের অনুমতি দেয়া হয়নি এবং আমার সরকারের প্রতিনিদিদের সাথে সম্মেলন টেবিলে বসতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।

এটা আপাতবিরোধী হয় যখন ভারতীয় প্রতিনিধিরা উদ্বাস্তুদেরদের জন্য সদস্যদের কাছ থেকে অঙ্গীকার আদায়ের জন্য আসে। ভারত গঠনমূলক যে কোন প্রস্তাব গ্রহনে অনিচ্ছুক যা নিরীহ মানুষের দুর্ভোগ শেষ করতে সহায়তা করবে। কেন ভারত সরকারের জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকের উপস্তিতি মেনে নিতে সমস্যা হচ্ছে ? যেখানে পাকিস্তান সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে  তার জনগণের বিরুদ্ধে ভয়াবহ কার্যসাধন করার জন্য, তারপরও পাকিস্তান সরকার কোন দ্বিধা ছাড়াই জাতি সংঘের  পর্যবেক্ষককে সীমানা অনুসন্ধান করার জন্য অনুমতি দিচ্ছে।

ভারতের সহযোগিতা করার বিষয়ে প্রতিরোধ করার কারন সুস্পষ্ট। ভারত আশা করছে বিশ্বের কাছ থেকে একটি সশস্ত্র সংঘাত আড়াল করতে পারবে। মানবিক সহায়তার অজুহাতে ভারত বিচ্ছিন্নবাদি একটি দলকে সেনা প্রশিক্ষন এবং সহায়তা করছে যারা ভারতে নিরাপদ আশ্রয় খুজে পেয়েছে। আমি আবারো ভারতের এই কূটাভাষ নজির হিসাবে উল্লেখ করছি।

১৮ই সেপ্টেম্বর ,১৯৭১ দিল্লীতে একটি মিটিং এ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিম্ন আসনের একজন ব্যাক্তি বলেন, যা প্রায়  এক সপ্তাহ আগে , ‘’ উদ্বাস্তুদের তখনই তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করা হবে যখন তা একটি স্বাধীন জাতি হবে।‘’ এটা অনুমেয় ছিল যে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বাধীনতা প্রদান করবে না কিন্তু আমাদের এই পরিস্থিতির দিকে কাজ করতে হবে যাতে পাকিস্তানের আর কোন বিকল্প না থাকে।‘’

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ সকালের বিবৃতিতে পাকিস্তানের সঙ্কটে রাজনৈতিক সমাধান বলতে কি বোঝাতে চেয়েছেন তা নিয়ে কোন সন্দেহই নেই, প্রতিরক্ষা মন্ত্রানলয়ের তার সহকর্মীর বিবৃতিতেই তার উত্তর সরবরাহ করা হয়েছে।

আমি আমার দেশের পক্ষ থেকে বলছি, আমাদের কোন উদ্দেশ্যই নেই আমাদের স্বাধীনতা এবং অখন্দতাকে বিপদগ্রস্ত করতে কাওকে অনুমতি দেওয়া। আজ আমার দেশ যার মুখোমুখি  তা কেবলমাত্র আক্রমণমূলক যা আজ সকালে আমরা শুনেছি। এবং তা দুভাগে বিভক্ত করার জন্য আক্রমণমূলক প্রচেষ্টা। পূর্ব পাকিস্তান এর সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের এবং আসামের সীমানায় দৈনিক গোলাবর্ষণ দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় সৈন্যদের নিয়মিত ভাবে এই সব অঞ্ছলে শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছিল সঙ্কট শুরু হওয়ার পূর্বেই এবং তখন থেকেই কথিত মুক্তিযুদ্ধ বাহিনীর ২০০০০০ জনকে টেনিং এবং সজ্জিত করা হচ্ছিল ভারত সরকারের ব্যয়ে ।

২৯শে এপ্রিল, ১৯৭১, নিউ ইয়র্ক  টাইমস এর প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে।

ভারতীয় সড়ক ইতিমধ্যে সীমান্ত পয়েন্ট কলকাতা থেকে উত্তরে নেতৃত্ব স্থানীয় সরবরাহ রুটের চেহারা নিয়েছে। বাংলার ট্রাক দেখা যাচ্ছে ভারতীয় শহরের অভিমুখ থেকে তাজা সরবরাহ, খালি জ্বালানির ড্রাম এবং গোলাবারুদের বাক্স বহন করে আনছে। ভারতীয় সীমানার কাছে বাঙ্গালী স্বাধীনতার বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করেছে যা সম্ভবত  ভারত পাকিস্তানের সৈন্যদের মধ্যে শুটিং ঘটনার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হবে।

‘’ পশ্চিম বাংলার রাজধানী কলকাতাতে তাৎক্ষনিক অনেক গল্প আছে ভারতীয় সামরিক সহায়তার। একটি প্রতিবেদন হলও , ভারতীয় গোলাবারুদ কারখানা ভারতীয় চিহ্নিতকরন  ছাড়াই অস্ত্র এবং গোলাবারুদ তৈরি করছে। অন্য একটি হলও ভারতীয় কর্মকর্তারা একটি বিশাল গেরিলা ফোরস এর অনুসঙ্গী হয়ে পাকিস্তানে গত সপ্তাহে একটি আক্রমন  চালায়। ‘’

আমি জানি না ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই বক্তৃতামঞ্চে ফিরে এসে এই আরোপগুলো অস্বীকার করবেন কি না ? তিনি নিজেই ভারতীয় পার্লামেন্টে ২০শে জুলাই ঘোষণা করেন, ‘’ স্বাধীনতা সৈন্যদের ভারত সব রকম সাহায্য করবে।‘’ যদিও তিনি আজ সকালে এখানে এসে বিবৃতি দেন যে ভারত তার প্রতিবেশীর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না, এবং এই বিষয়ে কাজ শুধুমাত্র নোবেল এবং মহত্ত দ্বারা অনুপ্রানিত হয়ে করছে। সে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতকে নির্দোষ, অসহায় শিকার হিসাবে অঙ্কিত করেন।

আমি সাহস করে বলছি জাতিসংঘের এই হলে ঘন ঘন এই প্রচার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। আমাকে বলতে অনুমতি দিন যে পোপের আখ্যার অশুভ চক্র ভারত আমাদের মাথার উপর রাখতে চাচ্ছে এবং বর্তমান অবস্থাই তার আসল ভূমিকা। গত চার মাসে উদ্বাস্তুদের  জন্য ভারতের উৎকণ্ঠা মানবিক নয় বরং গুপ্তচর পাঠানো এবং বিশ্বের কাছে প্রচার করাই আসল উদ্দেশ্য। ভারতে অভিপ্রায় দীর্ঘদিনের এবং অপূরণীয় ইচ্ছা হলও তা আলাদা , দুর্বল এবং যদি সম্ভব হয় পাকিস্তানকে শেষ করা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের মিঃ কে সুবরামায়ম কায়দা করে বলেনঃ

‘’ভারতের উপলব্দি করা আবশ্যক যে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করা আমরা আমাদের স্বার্থে করছি। পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন করার সুযোগ আর কখনো আসবে না এবং বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ভারতের নিরাপত্তা সমস্যাকে সমাধান করবে।‘’

অন্য  আরেকজন ভারতের রাজনীতিবিদ দেখেন পাকিস্তানের বিভেদ এর পথ ভারতকে শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিনত করবে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী দুঃখজনক সুরে বলেন উদ্বাস্তুদের অন্তঃ প্রবাহে  ভারতের অর্থনীতির অবস্থান অবনিতি হচ্ছে। পাকিস্তানী হিসাবে আমি তাকে আশ্বাস দিচ্ছি এবং অন্য পাকিস্তানী প্রতিনিধিরা আশ্বাস দিচ্ছে যে পাকিস্তান তৈরি এবং ইচ্ছুক তার প্রত্যেক নাগরিককে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য। যদি ভারত এই বোঝা উপশম করার ইচ্ছা রাখে এবং অকুণ্ঠ সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা উচিত।

আমার সরকার উদ্বাস্তুদের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতিতে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতের সাথে বসতে এবং আলোচনার জন্য প্রস্তুত। আমার সরকার নিরাপত্তা কাউঞ্ছিলের কারযে সহায়তা প্রদানের জন্য বিশেষ ভাবে মনোনীত দক্ষ অফিসার তৈরি করেছে। কোন কারনে ভারত সরকার অনিচ্ছুক পাকিস্তানের সাথে টেবিলে বসার; তাহলে নিরাপত্তা কাউঞ্ছিলের উন্নত অফিসে বসার প্রস্তাব গ্রহন করা যাক।

আমি আগেই বলেছি, পাকিস্তান সরকার সম্ভাব্য সবকিছু করেছে পূর্ব পাকিস্তানে উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসনের জন্য। এটাও নিশ্চিত করা হয় যে উদ্বাস্তুদের সাথে সাথে পাকিস্তানের সকল নাগরিকদের জন্য দেশের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি, ২৮শে জুন জাতির উদ্দেশ্যে তিনি নিজে প্রকাশ করেন যে জনগণের পূর্ণ অংশ গ্রহন ছাড়া স্বাভাবিকতা  ফিরে আসতে পারে না। তিনি সরকারের প্রতিনিধি উপস্থাপক হিসাবে বাস্তব উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছেন। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে পূর্ব পাকিস্তানে বেসামরিক প্রশাসন স্থাপন করা হচ্ছে যেখানে লক্ষণীয় যে  এই সদস্যরা  আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য । উপ- নির্বাচনের মাধ্যমে এই সব আসন যা বিদ্রোহে অংশ গ্রহনের কারনে আরোপিত  আসন অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে; নভেম্বর মাসের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি অস্থায়ী সংবিধান তৈরি হচ্ছে যা অপরিহার্য দুটো শর্তকে সন্তুষ্ট করার প্রচেষ্টায় : আঞ্ছলিক স্বায়ত্তশাসন এবং পাকিস্তানের অখণ্ডতা সংরক্ষণ।  জাতীয় পরিষদের একটি অপেক্ষাকৃত সহজ  পদ্ধতি দ্বারা অস্থায়ী সংবিধান সংশোধন করার ক্ষমতা  থাকবে । ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে ‘’ প্রতারনা ‘’ বলে ব্যাখ্যা করতে পারেন।

যদি পাকিস্তানের অবস্থা সত্যিই তারা বর্ণনার মতো হতো তাহলে প্রেস সেন্সরশিপ মুছে ফেলা হতো না, জাতিসংঘের কর্মীদের এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটিকে পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হতো না। যদি সহিংসতা অব্যাহত থাকে তা ভারতের উৎসাহ প্রদানের ফলাফল। পোষকতা এবং সহায়তার ফলে পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে অন্তর্ঘাত তৈরি হচ্ছে।

 অবিরতভাবে সীমানায় বোমাবর্ষণ এবং কামান দাগানো দৈনন্দিন ঘটনা।

রাষ্ট্রের মধ্যে সুসম্পর্ক সুশৃঙ্খল আচারন সংরক্ষণের উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রের অখণ্ডতার সম্মানার্থে এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপে কঠোর নীতি পালন করা হয় । ভারতের বর্তমান কার্যকম উভয় নীতিকে লঙ্গন করে।  কোন রাষ্ট্র ইচ্ছুক অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বহিরাগত হস্তক্ষেপ উপেক্ষা করার? এই পরিষদের মধ্যে কোন রাষ্ট্র ইচ্ছুক অন্য দেশের হস্তক্ষেপের কারনে তার ভূখণ্ডের নকশার বিভাজন সৃষ্টি কারীকে উপেক্ষা করার? ভারত  নিজে কি তৈরি তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ মেনে নিতে? এটাই কি বলা হয় যে অপসরন নিজ ঘরে বিদ্রোহ কিন্তু বিদেশে তা সসঙ্কল্প ?

আমাকে পাকিস্তান সরকারের পক্ষে হয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করতে দিন যে পাকিস্তান সরকার স্থানচ্যুত নাগরিকদের তাদের বাড়িঘর ফেরত নিশ্চিত করার জন্য যে কোন পরিমান গ্রহনের জন্য তৈরি। আমরা একটি সম্পূর্ণ জাতি হিসাবে বসবাস করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ  এবং শান্তি পূর্ণ প্রতিবেশীর সাথে শান্তি রক্ষার্থে। কিন্তু পাকিস্তান আরও দৃঢ় ভাবে প্রতিজ্ঞ যে আঞ্ছলিক এবং জাতীয় অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য আর কাওকে প্রশ্নও করার অনুমতি দেয় না ।

যদি ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব পরিহার করতে হয় তাহলে আন্তর্জাতিক কমিউনিটি ভারতের উপর তার নীতির উপর গুরুত্ব আরোপ করে এবং তাদের এই নীতি পরিহার করার জন্য স্মরণ করে দেয়া হয়।

জনাব রাষ্ট্রপতির ২২শে সেপ্টেম্বর এর এক সংবাদ সম্মেলনের বিবৃতিঃ 

‘’ এই উদ্বাস্তু সমস্যা একটি মানবিক সমস্যা। আমরা অবশ্যই তা সমাধান করব। পুরো বিশ্ব অবশ্যই এই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে। কিন্তু যদি আপনি বিষয়টিকে রাজনৈতিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে দেখতে চান , যদি একটি বিতর্ক টেনে আনতে চান তাহলে এর কোন শেষ নেই। প্রশ্নও হলও কি করে তা দ্রুত সমাধান করা যায়। এই কারনে, এই বিষয়কে আমি বিশ্বাস করি, এই দৃশ্য গুলোকে বাদ দিয়ে আলচনা করার। আমরা বিশ্বাস করি পাকিস্তান এবং ভারত একত্র করার এবং তারা কিভাবে সমস্যা সীমিত করে তা দেখতে হবে।‘’

এটা আমার সরকার ভারত – পাকিস্তানের বর্তমান উত্তেজনা কমাতে সম্মলিত পথ খুজে বেড় করার চেষ্টা করছে এবং উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসন এর বিষয়েও চেষ্টা করছে যার দৃশ্য আমরা পূর্ণ রুপে শেয়ার করেছি।

আমার সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রকাশ করছি যে পাকিস্তান উদ্বাস্তুর এই সমস্যা নিরসনে যে কোন ধরনের পরামর্শ গ্রহনে তৈরি আছে।