<2.33.192>
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
দুই প্রদেশের বৈষম্য সম্পর্কে ডঃ এম এস হুদার অভিমত
|
পাকিস্তান অবজার্ভার
|
২৮ ডিসেম্বর ১৯৬২
|
পাকিস্তান অবজার্ভার
২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬২
“বৈষম্য অতীতের গল্প নয়”
পূর্বও পশ্চিম পাকিস্তানের মাথাপিছু আয়ের বৈষম্য কখনোই সমাপ্ত হয়ে যাওয়া কোন গল্প নয়। বরং এটি বড় বেশি জীবিত,বৃহৎ এবং ক্রমবর্ধমান এবং এটি কখনোই আপনা আপনি থেমে যাবে না – পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান জনাব সাইদ আহমেদের বেতার আলাপে সৃষ্ট বিতর্কের সুত্র ধরে আমাদের প্রতিনিধি যোগাযোগ করলে এ কথা বলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক এম এন হুদা।
অবাঞ্চিত বিতর্ক এড়াতে ইতোমধ্যে মীমাংসিত কোন বিষয়ে মন্তব্য করতে অসম্মতি জানালেও অধ্যাপক হুদা যে সকল বিষয়ে তিনি বিভিন্ন সময়ে মত প্রকাশ করেছেন, সে সকল বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের জবাব দিতে সম্মত হন। জনাব সাঈদ হাসানের সাম্প্রতিক বক্তব্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটি জনাব হাসানের ব্যাক্তিগত মতামত, নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কমিশনের বক্তব্য নয়।
সচেতনভাবে বৈষম্য দূর করতে হবেঃ
অধায়পক হুদা, যিনি বর্তমানে উন্নয়ন কর্মকান্ডের অগ্রগতি দেখতে পূর্ব পাকিস্তানে রয়েছেন, জানান যে এ বৈষম্য স্বাভাবিকভাবে দূর হবে না বুঝতে পেড়ে সরকার এ বৈষম্য দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যেহেতু এ বৈষম্যকে হঠাত করে গলা টিপে হত্যা করা যাবে না, তাই সরকার সংবিধান মোতাবেক ধীরে ধীরে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ে এই বৈষম্যকে অকার্যকর করতে ব্যবস্থা গ্রহন করছে। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যায় অধ্যাপক হুদা জানান, পরবর্তী কর্ম পরিকল্পনা এবং এর বাস্তবায়ন এমনভাবে করা হবে যেন পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়। এটা দূর করার এটিই একমাত্র উপায় এবং কত দ্রুত এ বৈষম্য দূর হবে তা নির্ভর করবে ক) পূর্ব পাকিস্তানের প্রকল্প, সরকারী ও বেসরকারী উভয় পর্যায়ে, পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় কতখানি বড় হবে এবং খ) তথাকথিত অনুন্নয়নশীল খাতে সরকারের খরচ কিভাবে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে বন্টন করা হবে তার উপর।
লক্ষ্য হল মাথাপিছু আয়ে সমতা:
এ ব্যাপারে আরো জিজ্ঞাসা করা হলে অধ্যাপক হুদা এ প্রসঙ্গে তিনটি প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্র চিহ্নিত করেন – উন্নয়ন হারে সাম্য, খরচের সাম্য এবং মাথাপিছু আয়ের সাম্য। “আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্য হল মাথাপিছু আয়ে সাম্য নিশ্চিত করা, বাকি দুটি অর্জন করার জন্য এটি নিশ্চিত করা প্রয়োজনীয়।
<2.033.193>
আয়ের সমতা অর্জনের জন্য সচেতনভাবে উন্নয়নের হার এবং মোট খরচের পরিমাণে পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে বৈষম্য সৃষ্টি করতে হবে, ঠিক তার বিপরীত, যা এতদিন হয়ে এসেছে পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে। অন্য দুটি বৈষম্য দূরীকরণও একইভাবে নির্ভর করবে আমরা কত দ্রুত আয় বৈষম্য দূর করতে চাই তার ওপর।
পাকিস্তানের পূর্ববর্তী নীতিগুলো (হয়ত অসচেতনভাবে) এই বৈষম্য সৃষ্টি এবং বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে যে কারণে অন্যান্য জায়গায় থাকা এ ধরনের বৈষম্যের তুলনায় এখানকার ঘটনাটি ভিন্ন আঙ্গিকের। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নীতি দ্বারা তাই ধারাবাহিকভাবে এবং তাতপর্যপূর্ণভাবে প্রবৃদ্ধির হার এবং মোট ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে পুর্ব পাকিস্তানের এই আয় বৈষম্য দূরীকরণের ব্যবস্থা করা উচিত।
মোট ব্যয়ের অর্থ:
‘মোট বিনিয়োগের’ পরিবর্তে ‘মোটব্যয়’ শব্দযুগল ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে অধ্যাপক হুদা গুরত্বারোপ করে বলেন, অর্থনীতিতে মোট ব্যয়ই গুরুত্বপূর্ণ, শুধুমাত্র উনয়নমূলক ব্যয়, যা বিনিয়োগ নামে পরিচিত, তা নয়। যেকোন ব্যয় আয় সৃষ্টি করে, উন্নয়ন ব্যয় বেশি, অনুন্নয়ন ব্যয় কম।
তিনি বলেন, “যে কারণে আমরা দুই অংশের বৈষম্য দূর করতে চাইলে লক্ষ্যকে মাথায় রেখে মোট ব্যয়ের উপর মনোনিবেশ করতে হবে”। যদি অর্থনৈতিক ভিন্ন অন্য কোন কারণে খরচের একটি নির্দিষ্ট অংশ একটি অঞ্চলে বরাদ্দ করা প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়, তাহলে ব্যয়ের অন্যান্য অংশ এমনভাবে বন্টিত হতে হবে যাতে এটি শুধু সাম্য অর্জনেই সহায়তা করে না, বরং রাষ্ট্র কতৃক গৃহীত বিভিন্ন অনুন্নয়নশীল খরচের ফলে সম্ভাব্য বৈষম্য দুরীকরণেও সহায়ক হয়।
“যখন আমরা সমগ্র ব্যয় এই উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে পরিকল্পনা করবো, একমাত্র তখনই আমরা সাম্য অর্জনের পথে এগিয়ে যাব।“
পূর্বাঞ্চলের বড় পরিকল্পনা থাকতে হবেঃ
বিদ্যমান বৈষম্য দুরীকরণে সর্বাধিক সম্ভাব্য কার্যকরী উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে অধ্যাপক হুদা পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়ন কর্মসূচী শুধু সম্ভাব্য সর্বাধিক হলেই হবে না, বরং তা পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় যত বেশি সম্ভব বৃহৎ আকারের হতে হবে। এটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার যৌক্তিক ধারা এবং এ নিয়ে কোন বিতর্ক বা ভিন্নমতের সুযোগ নেই।
সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে:
পূর্ব পাকিস্তানের প্রয়োজনীয় বৃহৎ উন্নয়ন কর্মসূচীর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অধ্যাপক হুদা মত প্রকাশ করেন যে, কোন কর্মসূচীর কার্যকারীতা মানবিক আকাঙ্ক্ষা এবংসংকল্পের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল, এমনকি প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতার চেয়েও বেশী। ‘জাতীয় স্বার্থে কোন কর্মসূচী গ্রহণ করতে আমরা যদি দৃড়প্রতিজ্ঞ হই, মানুষের সৃষ্টিশীলতা অবশ্যই তা করার পথ খুজে বের করতে সক্ষম।‘ মানুষের সংকল্পের উপর আস্থা না রেখে কেবল সম্ভাব্যতা নীরিক্ষণের উপর ভরসা করলে পাকিস্তান রাষ্ট্রেরই জন্ম হত না। বিগত দুই বছরে পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়ন বরাদ্দ ব্যবহারের সক্ষমতাই সম্ভাব্যতা নিরীক্ষণ সংক্রান্ত আলোচনার অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণ করে।
<2.33.194>
যদি গত দুই বছরের তুলনায় আমরা এখন আরো সংকল্পবদ্ধ যে ইনশা-আল্লাহ আমরা পূর্ব পাকিস্তানে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবো। অধ্যাপক হুদা আরো বলেন, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে সকল সরকারী নীতিমালা এই গুরুত্বপূর্ণ চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করতে হবে।
কতিপয় শিল্পের প্রতিলিপিকরণ জরুরীঃ
অধুনা জনপ্রিয় ‘অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতাবাদ’ এর ব্যাপারে মন্তব্য করতে বলা হলে অধ্যাপক হুদা এই সুনির্দিষ্ট শব্দযুগল ব্যবহারে আপত্তি জানিয়ে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিম পাকিস্তানের কিছু কিছু শিল্পের প্রতিলিপিকরণ প্রচেষ্টা বা প্রস্তাবনাকে এই শব্দযুগল দিয়ে বোঝাতে চাইলে তা অতিশয়োক্তি হয়ে যায়। তার ভাবনা অনুযায়ী, উন্নয়নের জন্য কিছু নির্দিষ্ট শিল্পের প্রতিলিপিকরণ জরুরী, যেমন, লোহা ও ইস্পাত, সিমেন্ট, সার ইত্যাদি। জাতীয় সম্পদের অপব্যায় রোধকল্পেও প্রতিলিপিকরণ জরুরী, যেমন কাপড়ের মত পণ্য, যা এক অংশ থেকে অন্য অংশে পরিবহন বাস্তবসম্মত নয়। প্রতিলিপিকরণ শুধু তখনই অপ্রয়োজনীয়, যখন এর পইবহন খরচ পণ্যের মূল্যের তুলনায় অনেক কম,এবং একমাত্র সেই ক্ষেত্রেই প্রতিলিপিকরণ না করা উচিত। তার মতে, “সকল প্রতিলিপিকরণকে নিন্দা করাটা খারাপ আর তার চাইতেও খারাপ এ কাজকে অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতাবাদ আখ্যা দেয়া”।
একটি প্রকল্পের অর্থনৈতিক যৌক্তিকতাঃ
পূর্ব পাকিস্তানে এ ধরনের প্রতিলিপিকরণ (বা নতুন শিল্পের) অর্থনোইতিক যৌক্তিকতার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে অধ্যাপক হুদা বলেন, নিশ্চিতভাবেই এর যৌক্তিকতা রয়েছে, যে যৌক্তিকতা চোখে ধরা পড়বে যদি ব্যয় আর অবদানের ব্যাপারে গতিশীল চিন্তা করা হয়; দুটিই বস্তুগত; শুধু রাষ্ট্রীয় খরচ আর অবদান বিবেচনার বর্তমান ধারাকে পাশ কাটিয়ে এর পাশাপাশি শুধু বর্তমানের অর্থ ব্যয় আর অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি ভবিষয়তে একটি উন্নয়নশীল অর্থণিটির জটিল পরিকাঠামোতে একটি প্রকল্পের সত্যিকারের খরচ আর অবদান বিবেচনা করঅতে হবে।
ভৌগলিক বাস্তবতার ভূমিকাঃ
দুটি ভিন্ন অর্থনীতির উপকারিতা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অধ্যাপক হুদা বলেন, এই ধারণা মোটেও সচেতনভাবে এটিকে যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে, সে আঙ্গিকে ধারণাটি গড়ে ওঠেনি। এই ধারণার বিভিন্ন অংশ শুধু এটি বলার চেষ্টা করেছে যে রাষ্ট্রের বিশেষ ভৌগলিক বাস্তবতার কথা বিবেচনায় রাখে এর উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো গ্রহণ করা উচিৎ, যার অধীনে এক অংশ থেকে আরেক অংশে মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য যাবে না, এবং শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদের সীমাবদ্ধতার ক্ষেত্রেই পণ্য এক অংশ থেকে আরেক অংশে যাবে, যাতে জাতীয় সম্পদের অপব্যয় রোধ হয়।
যে কারণে পাকিস্তানের বাস্তবসম্মত উন্নয়ন পরিকল্পনায় এই সত্য স্বীকার করে নিয়ে দুই অঞ্চলে পৃথক কিন্তু তারপরও সমগ্র অর্থনীতির সমন্বিত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রকল্প পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন করতে হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গী বহু বহু দিন পর অবশেষে নীতিনির্ধারকেরা মেনে নিয়েছেন। স্বল্পতম সম্যে আয়ের সাম্য নিশ্চিত করাকে লক্ষ্যমাত্রায় স্থির করা মানেই দুই অঞ্চলে দুটি পৃথক অর্থনীতির অস্তিত্বকে স্বীকার করে নেয়া। প্রথম যখন এই পরামর্শ দেয়া হয়েছিল, তখনই এটি মেনে নেয়া হলে আজকের এই অবস্থা দাড়াত না। দুই অর্থনীতির ধারণা কখনোই নীতিগত সিদ্ধান্তের নির্দেশনামুলক ছিল না।
<2.33.195>
এটি বরং জাতীয় অর্থনীতির অদ্ভুত পরিসংখ্যানের একটি মাইলফলক এবংসামগ্রিক অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণী বিষয়ে জ্ঞান ও বাস্তবতার সংমিশ্রণের প্রয়োজনীত্যতার ইঙ্গিতবাহী।
এখন-গৃহীত ধারণামূল উৎস:
দুই অর্থনীতির প্রস্তাবনার বাস্তবসম্মতা নিয়ে সন্দিহান একটি গোষ্ঠির বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট করা হলে অধ্যাপক হুদা নীতি নির্ধারকদের বর্তমানে গৃহীত ক)লক্ষ্য হিসেবে আয়ের সাম্য প্রতিষ্ঠা করা, খ) ঢাকায় দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন গ) পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে (এবং এর অন্তর্গত অঞ্চলসমুহে) যন্ত্রপাতি আমদানীর উপর বৈষম্যমুলক কর অবকাশ এবং আমদানী শুল্ক ঘ) পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পের জন্য বিশেষ ঋণ দাতা প্রতিষ্ঠান এবং আরো অন্যান্য বিবিধ কর্মকান্ডের প্রস্তাবনার মূল উৎস খুজে দেখার অনুরোধ জানান। যদি তাদের অন্যান্য সুপারিশ, যেমন বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় এ বরাদ্দ, দ্বিতীয় রাজধানীকে আরো বড় ও কার্যকর করা, পূর্ব পাকিস্তানে একটি ‘ফেডারেল অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠা, পূর্ব পাকিস্তানে কতগুলো জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর স্থাপন করার মত বিষয়গুলো আগেই গ্রহণ করা হত, তবে পাকিস্তান এখন যেমন আছে তার থেকে অনেক কম সমস্যাসংকুল এক সুখী রাষ্ট্রে পরিণত হত।
পক্ষপাতিত্বহীন তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন:
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পরাবাস্তবতার জগতে বসে অর্থনীতির তত্ত্বকথা কপচান এহেন অভিযোগের জবাবে অধ্যাপখুদা বলেন, তাদের তাত্ত্বিক কথাই বলার কথা। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাদের সুপারিশ বাস্তবে প্রয়গযোগ্য নয়। বরং তারা গড়পড়তা প্রশাসকের থেকে অধিকতর কার্যকর বাস্তবসম্মত পরামর্শ দিতে সক্ষম, কেননা তারা তাদের বাস্তবের পরামর্শকে তাদের তাত্ত্বিক জ্ঞান দ্বারা পরিশুদ্ধ করার সামর্থ্য রাখেন। এ ধরনের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ একাই একটি নীতিকে নিখুত ও বাস্তবসম্মত করে তুলতে পারে এবংএটি এমন এক অভিজ্ঞতা যা শুধু ঐ পরাবাস্তবতার জগতে বাস করা তাত্ত্বিকেরাই করতে পারেন, গড়পড়তা প্রশাসক বা নীতিনির্ধারকেরা যে বিশ্লেষণ বোঝার সক্ষমতাই রাখেন না।
কুৎসা রটনা করে সমস্যার সমাধান হবে নাঃ
দ্বৈত অর্থনীতি প্রস্তাবের প্রবক্তারা একটি ভিনদেশী রাষ্ট্রের তল্পিবাহক বলে প্রচলিত অভিযোগের জবাবে অধায়পক হুদা এটিকে ভ্রান্ত বলে উড়িয়ে দেন। এ ধরনের অভিযোগের দুর্ভাগ্যজনক প্রভাব পড়ছে। এর ফলে অনেক দেশপ্রেমিক রোষানলের স্বীকার হচ্ছেন এবং এটি এমন এক উচু মহল থেকে আসছে যে সরকারকেও এটি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিচ্ছে। নিয়তির এক পরিহাস এটি যে, যে মানুষেরা একদিন পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিয়ে এতগুলো বছর ধরে বঞ্চনার স্বীকার হয়েছে আজ তাদেরকেই শুধু সাম্যের কথা বলায় পাকিস্তান-বিদ্বেষী বলা হচ্ছে। এ ধরনের অর্বাচীন কথামালায় মূল সমস্যা আড়ালে চলে যাচ্ছে এবং সমস্যা আরো প্রকট হচ্ছে। আমাদের কে পূর্ব পাকিস্তানীদের হয়রানী রোধ করতে হবে এবং তাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলা বন্ধ করতে হবে। তার বদলে আমাদের সততা ও নিষ্ঠার সাথে সংবিধানে আরোপিত বাধ্যবাধকতা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে এবং স্বল্পতম সময়ে মাথাপিছু আয়ের সমতা আনয়নে সকল সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে হবে।“