৬৩| নারকীয় তাণ্ডবের আর এক লীলাভূমি (৪৬২)
সুত্র – দৈনিক বাংলা, ২৮ মার্চ ১৯৭২
নারকীয় তাণ্ডবের আর এক লীলাভূমি
গোপালগঞ্জ ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে আজো ছড়িয়ে আছে চুড়ি, শাড়ী আর অসংখ্য কংকাল
|| সংবাদদাতা প্রেরিত ||
গোপালগঞ্জ সিও ডেভেলপমেন্ট অফিস। পাকিস্তানী সেনাদের একটা শক্ত ঘাঁটি । এ ঘাঁটির নায়ক ক্যাপ্টেন ফয়েজ মোহাম্মদ কালান্তরে অন্যতম নায়ক ক্যাপ্টেন সেলিম। বাঙ্গালীর সংগ্রামী লহুতে হাত রঞ্জিত করেছে এরা।
পাক জল্লাদেরা গোপালগঞ্জের এস্থানে কসাইখানা তৈরি করেছিল। কসাইয়ের অঙ্গনে মাহবুব-উর-রহমান চৌধুরী, গোলজার চৌধুরী প্রাণ দিয়েছে ওদের হাতে। কত যে মাহবুব উর রহমান চৌধুরী এখানে দেশমাতৃকার মুক্তিসংগ্রামে প্রাণ দিয়েছেন তাঁর হিসেব নাই।
জল্লাদেরা কাকে কোথায় হত্যা করেছে সব ঘটনা মানুষ জানতে পারেনি। ৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ সাল। রাতের অন্ধকারে যেমন পাক জল্লাদেরা ২৫শে মার্চ ১৯৭১ সালে হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ঠিক তেমনি এ রাতে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনী যৌথ আঘাতে দিশেহারা হয়ে গোপালগঞ্জের ক্যাম্প ছেড়ে লোক চক্ষুর অন্তরালে সরে পড়ে। অসংখ্য মানুষের মৃত্যু-কেন্দ্র মিলিটারি ক্যাম্পে মানুষ যাত্রা করেছে।
কেউ গিয়েছে প্রিয়জনদের স্মৃতি চিহ্নের অন্বেষণে, কেউ গিয়েছে শহীদের সংখ্যা নিরূপণ করতে। স্মৃতিচিহ্ন অনেকে পেয়েছে। ক্যাপ্টেন ফয়েজ ও সেলিমের কক্ষে মেয়েদের হাতের চুড়ির স্তূপ, ছেড়া শাড়ী অথবা ব্লাউজ অনেকেই চোখের পানি মুছতে মুছতে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু শহীদের সংখ্যা কেউ নিরূপণ করতে পারেননি। ক্যাম্পের সামনে ইটের স্তূপে খুলি, হাড়, ক্যাম্পের সামনের খোলা জায়গায়ও খুলি হাড়ের মেলা এবং ক্যাম্পের সামনে নদীর ভিতর জালে এখনও জড়িয়ে পড়ে মানুষের মাথার খুলি অথবা মৃত মানুষের কঙ্কাল।