পাকিস্তান লেখক সংঘের উদ্যোগে পাঁচদিন ব্যাপী মহাকবি স্মরণোৎসব

<2.64.369-371>

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তান লেখক সংঘের উদ্যোগে পাঁচদিন ব্যাপী মহাকবি স্মরণোৎসব দৈনিক পাকিস্তান ৪ জুলাই, ১৯৬৮

 

পাকিস্তান লেখক সংঘের উদ্যোগে পাঁচদিন ব্যাপী মহাকবি স্মরণোৎসব

আগামীকাল থেকে পাকিস্তান লেখক সংঘ পূর্বাঞ্চল শাখার উক্যোগে পাক-ভারন্তের পাঁচজন শ্রেষ্ঠ কবির স্মরণোৎসব শুরু হবে। পাঁচদিন ব্যাপী এই উৎসবে ৫ই জুলাই রবীন্দ্র দিবস, ৬ই জুলাই ইকবাল দিবস, ৭ই জুলাই গালিব, ৮ জুলাই মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ৯ই জুলাই নজরুল দিবস প্রতিপালিত হবে।

জুলাই ৬, ১৯৬৮ দৈনিক পাকিস্তান

লেখক সংঘের মহাকবি স্মরণোৎসব আরম্ভ

পাকিস্তান লেখক সংঘের পূর্বাঞ্চল শাখা আয়োজিত পাঁচদিন ব্যাপী মহাকবি স্মরণোৎসব গতকাল শূক্রবার থেকে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউটে শুরু হয়েছে। গতকল্য ছিল রবীন্দ্র দিবস। সহজ সুন্দরভাবে রচিত মঞ্চে সন্ধ্যে সাড়ে ছটার আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রথম দিনের অনুষ্ঠান।

সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক একাডেমীর ডিরেক্টর জনাব আবুল হাশিম। প্রবন্ধ পাঠ করেন ডঃ আনিসুজ্জামান.. .. .. ..। অনুষ্ঠানে জনাব আবুল হাশিম বলেন, রবীন্দ্র সাহিত্য বা যে কোন সাহিত্য সম্পর্কে আমি সবসময় একটি কথা বলি, সাহিত্য ও সংস্কৃতি এক বস্তু নয়। সাহিত্য এক শিল্প। যে কোন শিল্পকেই যে কোন আদর্শের বাহন হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। জনাম হাশিম বলেন যে, একে আমরা সব সময় স্মরণ রাখি না- একের সাথে অপরকে মিলিয়ে দিয়ে সংস্কৃতির সঙ্কট সৃষ্টি করি। তিনি বলেন, এই বাংলা ভাষার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের আস্বাদ নেবো। বাংলা ভাষাকে একটি শিল্প হিসাবে আয়ত্ত করার চেষ্টা করতে হবে, তিনি বলেন, গত এক’শ বছরের বাংলা সাহিত্যকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ মত ও পথের উর্ধ্বে পরিবর্তনশীল হয়া সত্ত্বেও একটি বিষয়ে সারা জীবনে ছিলেন তাহলো স্বাধীন চিন্তা।

ডঃ আনিসুজ্জামান তাঁর প্রবন্ধে বলেন, চলতে চলতে রবীন্দ্রনাথ মত বদলেছেন, পথ বদলেছেন; ক্রমেই সকল সংকীর্ণতার গন্ডি ভেদ করে তিনি মানুষের পৃথিবীর নাগরিক হতে চেয়েছেন।

আশি বছর ধরে তাঁর মধ্যে একই ব্যক্তি বাস করেন নি। এই নানা রবীন্দ্রনাথের সহযোগ ঘটেছিল বলেই তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়েছিল বাংলা ভাষার শক্তিকে শতগুনে বৃদ্ধি করা।

আর যা ছিল প্রাদেশিক সাহিত্য তাকে বিশ্বসভায় সগর্ভে স্থান দেয়া।

তিনি বলেন, “রবীন্দ্রনাথ যে আমাদের ভাষা ও সাহিত্যেও শ্রেষ্ঠ নির্মাতা সে কথার গুরুত্ব কারো পক্ষেই বিস্মৃত হয়া সম্ভব নয়। … … 

প্রথম দিনের এই অনুষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ দর্শকের সমাবেশ ঘটে। কবিতা পাঠের আসর গোলাম মোস্তফা, মোঃ মনিরুজ্জামান ও সিকান্দার আবু জাফর কবিতা পাঠ করেন।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন, আতিকুল ইসলাম।

জুলাই ৭, ১৯৬৮। দৈনিক পাকিস্তান

মহাকবি স্মরণোৎসবের দ্বিতীয় দিনঃ

আল্লামা ইকবালের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন

কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের ডিরেক্টর ডঃ এনামূল হক গতকাল শনিবার মহাকবি স্মরণোৎসবে বলেন যে, আনন্দ-সৌন্দর্য সব কবিই সৃষ্টি করতে পারেন কিন্তু জাতিকে ভবিষ্যতের পথ নির্দেশ ও চলার পাথেয় দেওয়ার মত কবি খুব বিরল।

আল্লামাইকবাল ছিলেন এমনি এক বিরল কবি। আমাদের সৌভাগ্য যে, আমরা আমাদের মাঝে এমন এক কবিকে পেয়েছি। ডঃ এনামুল হক বলেন, এদেশে দুজন কবি ঘুমন্ত জাতির জাগরণের বাণীতে দিলেন বজ্রকন্ঠ। তাঁদের মধ্যে একজন ইকবাল, অন্যজন নজরুল ইসলাম। এরা আমাদেরকে আপন সও্বায় জাগ্রত করে দিয়েছেন।

আলোচনা সভায় প্রবন্ধ পাঠ করেন মোঃ মাহফুজুল্লাহ ও জনাব মনিরুদ্দিন ইউসুফ। হল ভর্তি দর্শককে গতকালের অনুষ্ঠানও যথেষ্ট আনন্দ দেয়।

জুলাই ১০, ১৯৬৮। দৈনিক পাকিস্তান

মহাকবি স্মরণোৎসব সমাপ্ত

নজরুল দিবসের মধ্য দিয়ে হত মঙ্গলবার ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে সমাপ্ত হয়েছে লেখক সংঘের পূর্বাঞ্চল শাখার আয়োজিত ৫দিন ব্যাপী মহাকবি স্মরণোৎসব। ……………

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আবদুল কাদির। প্রবন্ধ পাঠ করেন জনাব বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ও জনাব রফিক্কুল ইসলাম। মহাকবি স্মরণোৎসবের শেষ দিনের এই অনুষ্ঠানে উৎসবের সর্বাধিক দর্শকের সমাবেশ ঘটেছিল।

………………………………………………………………………………………………

শেষদিনের অনুষ্ঠানের একটা বৈশিষ্ট্য ছিল।

মঞ্চে রাখা হয়েছিল সাদা থোকাসহ পুষ্পগুচ্ছের একটি সেঞ্চুরী ফ্লাওয়ার। ইঞ্জিনীয়ার্স ইন্সটিটিউটের এডমিনিষ্ট্রেটিভ অফিসার জনাব আলী লেখক সংঘের এই অনুষ্ঠানের ফুলটি উপহার দেন।

………………………………………………………………………………………………………………

 

গতকালের অনুষ্ঠানের প্রথম পর্যায়ে আলোচনা সভায় আবদুল কাদির বলেন যে, নজরুল ছিলেন নিপীড়িত জনগনের স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামী কবি। বাংলা সাহিত্যে তিনি গনতন্ত্র সমাজতন্ত্রের প্রথম প্রবক্তা। তিনি নজরুলের কাব্য সাধনাকে ৪ ভাগে ভাগ করেন। …… তিনি বলেন, নজরুলের আগেও অনেক কবি হয়েছেন, যেমন রবীন্দ্রনাথ, নবীন চন্দ্র, কিন্তু নজরুলের মত তাদের সাহিত্যে এত মানবিক আবেদন নেই। ……

 

তৃতীয় পর্যায়ে সঙ্গীতকার নজরুল রবীন্দ্রনাথের চেয়েও বড়।

…………………………………………………………………………………………………

সাহিত্য নজরুলের আবির্ভাব সম্পর্কে তিনি (জনাব কাদির) বলেন, নজরুল যখন সাহিত্যে নেমে এলেন তখন রবীন্দ্রনাথ ভাস্বর-তাঁর পূর্ণ দীপ্তি। কিন্তু তাঁর যখন আবির্ভাব হলো- দেখা গেলো যুগের যৌবনের সব ধর্ম তার কাব্যে উদ্বেল হয়ে উঠছে। তখন রবীন্দ্রনাথের কথা অনেকেই ভুলে গেলেন। নজরুল সাহিত্যে স্ববিরোধিতা করেছেন বলে কেউ কেউ যে অভিযোগ করেন তার বিরোধিতা করে জনাব কাদির বলেন, তার সাহিত্যের সুরটি হলো ‘জনগণের স্বাধিকার’- গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র। এ সুরটি যারা বুঝতে পারেন না, তাদের নজরুল সাহিত্য পাঠ পন্ডশ্রম মাত্র।

Scroll to Top