প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কর্তৃক জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত

<2.163.662>

 

শিরোনামসূত্রতারিখ
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কর্তৃক জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্হগিতমর্নিং নিউজ২ মার্চ,১৯৭১

 

জাতীয়  সংসদের  অধিবেশন  স্হগিত করলেন ইয়াহিয়া

ইয়াহিয়া খানের সম্পূর্ন বিবৃতিমার্চ , ১৯৭১

 

নিম্নলিখিত অনুচ্ছেদে ইয়াহিয়া খানের সম্পূর্ন বিবৃতি দেয়া হল:

 

“ আজ  পাকিস্তান তার সবচেয়ে গুরুতর রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। আমি তাই পরিস্হিতির গুরুত্ব বর্ণনা এবং সংকট উত্তোরনের লক্ষে আমার নেয়া পরিকল্পনার কথা আপনাদের সবাইকে অবহিত করার প্রয়োজনিয়তা অনুভব করছি।

 

কিন্তু মূল বক্তব্যে যাওয়ার আগে আমার হাতে দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব তুলে দেয়ার দিন থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য আমার নেয়া পদক্ষেপ সমূহ আপনাদের স্মরন করিয়ে দিতে চাই।  

 

জাতীর উদ্দেশ্যে আমার প্রথম ভাষণেই আমি শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছিলাম। তারপর থেকে আমরা ধাপে ধাপে এই লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে গিয়েছি।

 

দেশে সামরিক শাসন জারি থাকা সত্বেও আমি রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিনি, বরং পহেলা জানুয়ারি ১৯৭০ থেকে সবধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালু করার অনুমতি দিয়েছি।

 

যে আইনী কাঠামোর অধীনে নির্বাচন হওয়ার কথা, ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে সেটি প্রণয়ন করা হয়। নির্বাচনী এলাকার সীমানা র্নির্ধারণ, ভোটার তালিকা প্রস্তুতিকরন সহ বাকি সব কাজই সময়মত শেষ করা হয়।

 

দীর্ঘ এবং শ্রমসাধ্য নির্বাচনী প্রচারনার শেষে আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি যে আমরা প্রাপ্তবয়স্ক ভোটারদের অংশগ্রহনে অত্যন্ত  সুষ্ঠু এবং শান্তিপুর্ন একটি সাধারন নির্বাচন করতে পেরেছি।

 

আপনারা সবাই জানেন ১৭ই জানুয়ারি ১৯৭১ এ সকল নির্বাচনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়।

 

৩ ডিসেম্বর ১৯৭০, নির্বাচনের ঠিক আগে আমার ভাষনে আমি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে পরামর্শ দিয়েছিলাম যে তারা যেন নির্বাচন এবং সংসদের প্রথম অধিবেশনের মধ্যবর্তী সময়টাতে আলোচনার মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎ সংবিধানের প্রধান ধারাগুলি কি হবে সেই ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌছান।

 

সেই সময় আমি উল্লেখ করেছিলাম যে আমরা ইতিহাসের এমন এক ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে আছি যে একে অন্যের প্রতি ছাড় দেয়ার মনোভাব এবং  পারষ্পরিক বিশ্বাস থাকাটা আলোচনা সফল হওয়ার পূর্বশর্ত ।  রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে পারষ্পরিক আলোচনার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পেরে এই প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নেয়ার লক্ষে আমি তাদের যথেষ্ঠ সময়ও দিয়েছিলাম।

 

 

<2.163.663>

 

 

সেই হিসাবে আমি ৩ মার্চ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের তারিখ হিসাবে নির্ধারন করেছিলাম।

 

গত কয়েক সপ্তাহ আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে কিছু বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখের সাথে আমাকে বলতে হচ্ছে যে নিজেদের মধ্যে ঐক্যমতে পোছানোর বদলে আমাদের কিছু নেতা আলোচনায় অনড় মনোভাব পোষণ করছেন। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দের মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত একটি দুঃখজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এর ফলে সমগ্র জাতির উপর বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে।

 

সংক্ষেপে বর্তমান পরিস্হিতি হচ্ছে, পশ্চিম পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি এবং আরো কিছু রাজনৈতিক দল ৩ মার্চের জাতীয় সংসদের অধিবেশনে যোগ না দেয়ার ঘোষনা দিয়েছে। একই সাথে ভারত কর্তৃক সৃষ্ট উত্তেজনাময় পরিস্হিতি সার্বিক অবস্হা আরো জটিল করে তুলছে। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে আমি পরবর্তী তারিখ ঘোষনা না করা পর্যন্ত জাতীয় সংসদের অধিবেশন আহবান স্হগিত ঘোষনা করছি।

 

আমি বার বার উল্লেখ করেছি সংবিধান কোন সাধারন আইনী বিধান নয়, সংবিধান আমাদের একসাথে থাকার সম্মতির দলিল। একটি শক্তিশালী এবং কার্যকর সংবিধান রচনায় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান উভয়ের পর্যাপ্ত অংশগ্রহণ আপরিহার্য।

 

এটি বলার অপেক্ষা রাখেনা যে আমি অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে সংসদ অধিবেশন স্হগিত করার ঘোষনা দিচ্ছি। আমাকে সমস্যার বাস্তব দিকটা দেখতে হবে। আমি বুঝতে পারছি যে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরাট সংখ্যক প্রতিনিধিদের সংসদের বাইরে রেখে ৩ মার্চ  অধিবেশন আহবান করলে সেটা শান্তিপূর্ন ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য এতদিন ধরে নেয়া আমাদের পদক্ষেপ সমূহ ব্যর্থ করে দেবে।

 

সংবিধান ব্যাপারে একটা গ্রহনযোগ্য মতৈক্যে পৌছানোর জন্য রাজনৈতিক নেতাদের সময় দিতে হবে। আমি তাদের সেই সময় দিচ্ছি এবং আশা করছি তাঁরা পরিস্হিতির ডাকে সাড়া দিয়ে সমস্যাগুলোর সমাধান করবেন। আমি পাকিস্তানের জনগনের কাছে অঙ্গীকার করছি যে রাজনৈতিক পরিবেশ সংবিধান প্রণয়নের অনুকূলে আসার সাথে সাথে সংসদ অধিবেশন আহবান করতে আমি আমি এক মুহূর্ত দেরী করবোনা।  আমি সব সময় ন্যায়বিচার  নিশ্চিত করেছি এবং আমি দেশবাসীকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে আমি রাজনৈতিক নেতাদের নিরপেক্ষভাবে সামর্থের শেষ বিন্দু দিয়ে সাহায্য করে যাব।

 

সর্বশেষে আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের জাতির পিতার নীতি; বিশ্বাস, একতা এবং শৃঙ্খলা অনুযায়ী কাজ করে যাওয়ার পথ দেখান। এই চরম ক্রান্তিলগ্নে আমি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সমগ্র দেশবাসীকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের অনুরোধ জানাই।