<02.205.765-766>
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
মুজিব ইয়াহিয়া আলোচনার ওপর সংবাদপত্রের প্রতিবেদন | দৈনিক ‘পূর্বদেশ’ | ২০ মার্চ,১৯৭১ |
আজ উপদেষ্টাসহ মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক
(ষ্টাফ রিপোর্টার)
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান গতকাল শুক্রবার সকালে প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের সাথে ৯০ মিনিট ব্যাপী দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং শাসনতান্ত্রিক অচালাবস্থা সম্পর্কে তৃতীয় দফা আলোচনা করেছেন। তাঁরা আজ শনিবার সকাল দশটায় উপদেষ্টা সহ আলোচনায় মিলিত হচ্ছেন।
গতকাল রাতে আওয়ামী লীগ প্রাধানের তিনজন উপদেষ্টা এবং প্রেসিডেন্টের তিনজন সহকারীর মধ্যে দু’ঘন্টা আলোচনা হয়েছে। আলোচনার আগ্রগতি এবং আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে সরকার এবং আওয়ামী লীগ উভয় পক্ষ থেকে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে।
ভয়েস অব আমেরিকা গতকাল শুক্রবার রাতে খবর দিয়েছে যে, আন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এবং শেখ মুজিবের মধ্যে আলোচনা চলছে। বেতারে আরও সংবাদ দিয়েছে যে, ২৫ শে মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসার আগেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গথনের সম্ভাবনা সম্পর্কে উওভ্যে আলোচনা করছেন।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে ৯০ মিনিট আলোচনার পর শেখ মুজিব তার বাসাভবনে সাংবাদিকদের বলেন যে, আলোচনা আব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন যে, এ আলোচনা সাধারণ ব্যাপার নয়। এজন্য প্রচুর সময়ের প্রয়োজন।
শেখ মুজিব আজ শনিবার সকাল ১০ টায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে তার দলের বিশিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে চতুর্থ দফা আলোচনা বৈঠকে মিলিত হবেন।শেখ সাহেবের সাথে থাকবেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জনাব তাজউদ্দীন আহমদ, জনাব এ, এইচ, এম কামরুজ্জামান, জনাব মনসুর আলী, খোন্দকার মোস্তাক আহমদ, এবং ডঃ কামাল হোসেন। প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ছিনেল সাবেক আইন মন্ত্রী মিঃ এ, আর কর্ণেলিয়াস, প্রেসিডেন্টের প্রিন্সিপাল ষ্টাফ অফিসার লেঃ জেনারেল পীর জাদা এবং সামরিক বাহিনীর জজ এডভোকেট জেনারেল কর্নেল হাসান। দু’দলের ‘উপদেষ্টারা’ কি ফর্মুলার ভিক্তিতে আলোচনা চলবে সে সম্মপর্কে মতের বিনিময় করেন বলিয়া জানা গেছে।
শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনা সম্পর্কে তাঁর বাসভবনে সাংবাদিকদের বলে, আমি সব সম ভালো আশা করি তবে খারাপের জন্যও তৈরী থাকি। তাকে প্রাশ্ন করা হয়েছিল যে তিনি প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনায় আলোচনায় সন্তুষ্ট হয়েছেন কিনা?
২৫ শে মার্চ আহূত জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে তাঁর দলের যোগদান সম্পর্কে জনৈক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে শেখ মুজিব বলেন, “আমার ভূমিকা সম্পূর্ণ পরিস্কার। এ অঞ্চলের মানুষের কেন জীবন করেছে, কেনই বা নির্যাতনের সম্মুখীন হচ্ছে, কেনই বা সংগ্রাম করছে তা সারা পৃথিবী জানে।”
কোন দলিলের ভিক্তিতে আলোচনা হয়েছে কিনা প্রাশ্নের উত্তরে শেখ সাহেব ‘না’ জবাব দেন।
উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা আলোচনার অগ্রগতি বোঝায় কিনা, প্রশ্ন করা হলে শখ মুজিব বলেন, “আপনারা যা খুশি ধারনা করতে পারেন।”
শনিবার তাদের মধ্যে চুরান্ত আলোচনা হবে কিনা, প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগ প্রাধান বলেন যে, তিনি এ ব্যাপারে এখনো কিছু বলতে পারেন না।
জনৈক বিদেশী সাংবাদিক প্রশ্ন করেন যে, কবে পর্যন্ত আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে তাঁরা জানতে পারবেন। শেখ সাহেব হেসে বলেন, “অপেক্ষা করুন। দয়া করে আমার সুন্দর দেশ এবং ভাগ্যাহত মানুষদের দেখুন”
প্রশ্নঃ স্যার আপনি আমার কোন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না। কবে আপনি শেষ বারের মত হাসবেন?
উত্তরঃ এ বড় কঠিন প্রশ্ন। আপনি নিজেই আঁচ করুন।
পশ্চিম পাকিস্তনী নেতাদের সাথে শেখ সাহেব দেখা করতে রাজি আছে কিনা। জনৈক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন যে, তাঁর গৃহের দুয়ার সবার জন্যই উন্মুক্ত। দলীয় নেতা অথবা ব্যক্তি যে কোন সময়ে আমার সাথে দেখা করতে পারেন।
শেখ মুজিবকে গতকাল প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে আসার পর খুবই হর্ষোৎফুল্ল দেখায়। প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে উৎসাহী জনতা প্রচণ্ড ভেড় হয়। জনতা নিয়ন্ত্রণের জন্য সেনাবাহিনী এবং ই,পি,আরকে হিমশিম খেতে হয়, জনতা ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দেন এবং শেখ সাহেবও তাঁদের সাথে শ্লোগান দেন।
উপদেষ্টাদের বৈঠক
শেখ মজিব এবং ইয়াহিয়ার উপদেষ্টাদের মধ্যে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে দু’ঘন্টা আলোচনা হয়। উপদেষ্টাদের বৈঠক শেষে জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন যে, শেখ মুজিব এবং প্রেসিডেন্টের মধ্যে আগে যে আলোচনা হয়েছে সে সম্পর্কিত বিষয়ে উপভয় পক্ষের উপদেষ্টাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
জনাব তাজউদ্দীন আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে কোন তথ্য প্রাকাশ করা থে বিরত থাকেন। তিনি বলেন। “অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।” অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন কিছু প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকেন। তিনি বলেন যে, সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁরা জয়দেবপুরে গুলি বর্ষণের নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছেন।