রাজশাহীতে গুলি ও সান্ধ্য আইনঃ ডাঃ শামসুজ্জোহাসহ ৬ জন হতাহত

<02.093.436-437>                                                       

শিরোনাম সূত্র তারিখ
রাজশাহীতে গুলি ও সান্ধ্য আইনঃ ডাঃ শামসুজ্জোহাসহ ৬ জন হতাহত দৈনিক ইত্তেফাক ১৯ ফেরুয়ারী, ১৯৬৯

 

রাজশাহীতে গুলি ও সান্ধ্য আইন

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোর ডঃ সামসুজ্জোহাসহ

২ জন নিহতঃ ৪ জন আহত

    বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করার জন্য রাত্রি সাড়ে ১০টায় সৈন্য তলব করা হয়। রাত্রি ১১-৩০ মিনিটের সময় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

    ১৮ই ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা লংঘন করিয়া মিছিল বাহির করা হয় এবং জনতা সেনাবাহিনীর একখানা গাড়ি ঘিরিয়া ফেলে। ছাত্ররা গাড়ীখানার উপর প্রবল ইট-পাটকেল ছোড়ে। ইহা দেখিয়া ছাত্রদের বুঝাইয়া ক্যাম্পাসে ফেরত দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর বাহির হইয়া আসেন। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও কিছু জনতা টহলদার বাহিনীর কমান্ডারকে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। লেফটেন্যান্ট এই সময় গুলিবর্ষণ করে। ফলে প্রোক্টরের দেখে বুলেট বিদ্ধ হয় এবং পরে তিনি উক্ত স্থানে মারা যান।

    এছাড়াও গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত এবং দুই ব্যক্তি আহত হয়। অপরাহ্ন ২-৩০ মিনিট হইতে রাজশাহীতে সান্ধ্য আইন জারী করা হয়। এ.পি.পি

আহতদের তালিকায় তিনজন

অধ্যাপক

    গুলিবর্ষণে ছাত্র ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন অধ্যাপক গুরুতর রকমে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। তাহারা হইলেন-

(১) প্রফেসর খালেদ।

(২) ডঃ কাজিমউদ্দিন মোল্লা।

(৩) ডঃ কাজী আবদুল মান্নান।

 

প্রেসিডেন্টের নিকট জরুরী তারবার্তা

 

    গতকাল্য (মঙ্গলবার) রাত্র সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা নগরী আকস্মিকভাবে চরম বিক্ষোভে ফাটিয়া পড়ে এবং বিভিন্ন এলাকায় সামরিক বাহিনীর গুলিবর্ষণ, বেয়নেট চার্জ ইত্যাদির ফলে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয় উহার ভয়াল বর্ণনা দান করিয়া জনাব আতাউর রহমান খান, জনাব শাহ আজিজুর রহমান এবং জনাব আসাদুজ্জামান খান প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের নিকট জরুরী তারবার্তা প্রেরণ করিয়াছেন বলিয়া শাহ আজিজুর রহমান জানাইয়াছেন।

সান্ধ্য আইনের স্তব্ধতা ভঙ্গ করিয়া ঢাকা নগরীর প্রচণ্ড বিস্ফোরণঃ

     ছাত্র-জনতার আকস্মিক বিক্ষোভ মিছিলের দৃপ্ত পদভারে সমগ্র শহর প্রকম্পিত।

গত রাত্রে রাজধানী ঢাকা নগরীতে অকস্মাৎ সান্ধ্য আইনের কঠিন শৃংখল এবং টহলদানকারী সামরিক বাহিনীর সকল প্রতিরোধ ছিন্নভিন্ন করিয়া হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আকস্মিক জলোচ্ছ্বাসের মত পথে নামিয়া আসে এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি ও ‘আগরতলা’ ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে প্রচণ্ড বিক্ষোভ ফাটিয়া পড়ে।

    এই অবস্থার মধ্যে আজ সকাল সাতটা হইতে বৈকাল ৫টা পর্যন্ত সান্ধ্য আইনের যে বিরতি ঘোষণা করা হইয়াছিল, তাহা অকস্মাৎ প্রত্যাহার করা হয় এবং কোনরূপ বিরতি ছাড়াই পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য সান্ধ্য আইন জারি করা হয়।

    খোঁজ লইয়া জানা যায়, গতকল্য রাজশাহীতে জনৈক অধ্যাপকের হত্যা এবং সান্ধ্য আইন জারির খবর এখানকার ছাত্র ও সর্বশ্রেণীর নাগরিকের মনে প্রবল অসন্তোষের সঞ্চার করে। তদুপরি গতকালকার সংবাদপত্রে আগরতলার ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবের মুক্তি সম্পর্কে আশাবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরেও শেখ সাহেব গোল টেবিল বৈঠকে যোগদানের উদ্দেশ্যে গতকাল ঢাকা ত্যাগ না করায় ছাত্র-জনমনে এই বিশ্বাস দানা বাঁধিয়া উঠে যে, শেখ সাহেবের মুক্তির ব্যাপারে সরকার আন্তরিক নহেন। বর্তমান প্রচণ্ড গণজাগরণের পটভূমিতে উপরোক্ত ঘটনা ছাত্র-জনতাকে ক্ষিপ্ত করিয়া তোলে এবং তাহারা সান্ধ্য আইনের অনুশাসন উপেক্ষা করিয়া দাবী দাওয়ার প্রতিধ্বনি করার জন্য অকস্মাৎ রাস্তায় নামিয়া আসে।

    কোন রকম পূর্ব ঘোষণা বা পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই একই সঙ্গে শহরের এক প্রান্ত হইতে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত এইভাবে ছাত্র-জনতাকে রাস্তায় বাহির হইতে দেখিয়া সকলেই বিস্মিত হয়। রাত্রি ৮টার পর হইতে মধ্য রাত্রি পার হইয়া যাওয়া পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে সমানে বিক্ষোভ চলিতে থাকে।

    সামরিক বাহিনীর গাড়ির শব্দ এবং বিক্ষিপ্তভাবে বন্দুকের গুলির আওয়াজ পরিবেশকে আতঙ্কগ্রস্ত করিয়া তোলে।

    ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে অভিযোগ করা হয় যে, হাসপাতালের একটি এম্বুলেন্স আহত অবস্থায় রাস্তায় পড়িয়া থাকা লোকজন বা মৃতদেহ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার চেষ্টা করিলে টহলদানকারী সশস্ত্র বাহিনী বাধা প্রদান করে।

    হাসপাতালে বুলেটবিদ্ধ ৩ ব্যক্তিকে ভর্তি করা হয় এবং রাত্রি ২টার পর এম্বুলেন্সের জন্য হাসপাতালের সামনে টেলিফোন আসিতে থাকে।

Scroll to Top